হোম কোয়ারেন্টাইনে সময় কাটাতে প্লাষ্টিকের বোতলে চাষ করুন পুইশাক

829

পুঁইশাক বাংলাদেশের একটি অন্যতম শাক যা ইন্ডিয়ান স্পিনাচ হিসেবে পরিচিত। পুঁই গাছের পাতা, কান্ড শাক হিসেবে আমাদের দেশে ভীষণ জনপ্রিয়। বাংলায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, “শাকের মধ্যে পুঁই আর মাছের মধ্যে রুই”। এ থেকেই বোঝা যায় বাঙ্গালীদের কাছে পুঁই শাক কতটা পছন্দের। পুঁই Basellaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী উষ্ণমণ্ডলীয়গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Basella alba। বাংলাদেশে, পশ্চিমবঙ্গে, আসামে এবং ত্রিপুরায় সর্বত্র এর চাষ হয়ে থাকে।

বাঙালি রান্নায় গরম গরম ভাতের সাথে পুঁই শাক চিংড়ী চচ্চড়ি আর এক পিস লেবু আহা অমৃত প্রায়। আমাদের দেশে পুঁই শাক অনেকভাবে রান্না বা ভাজি করে খাওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মাছ রান্নায় একে ব্যবহার করা হয়।ইলিশ-পুই ও চিংড়ী-পুই অনেকেরই প্রিয় তরকারী। বিভিন্ন নুডুলস বা স্প্যাগেটি রান্নায় বা সালাদে ব্যবহৃত করা হয়। আফ্রিকায়, উত্তর ভিয়েতনামে পুঁই শাক খাওয়ার প্রচলন আছে। মালাবার উপকূলে সুপ ঘন করার জন্য পুই শাক খাওয়ার প্রচলন আছে।

পুষ্টি উপাদান:

পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ ও ‘এ’। পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রণ। ১০০ গ্রাম পুঁই শাকে যা রয়েছে:
শর্করা = ৪.২ গ্রাম
খনিজ পদার্থ = ১.৫ গ্রাম
ভিটামিন সি = ৬৫ মিলি গ্রাম
ভিটামিন বি = ২৭ মিলি গ্রাম
ক্যালসিয়াম = ১৬৫ মিলি গ্রাম
আয়রণ = ১১ মিলি গ্রাম

চারা রোপনের উপযুক্ত সময়:

বছরের যেকোন সময়ে পুঁইশাকের চারা রোপন করা যায়। তবে ফেব্রুয়ারী মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত পুঁইশাক লাগানোর উত্তম সময়। এসময় পুঁইশাক লাগালে সঠিক সময়ে পুঁইশাকের ভাল ফলন পাওয়া যায়।

জাত:

সাধারণত দুই ধরণের জাত দেখা যায়। পুঁই শাক লাল ও সবুজ এই দুই ধরণের হয়ে থাকে। সবুজ রঙের গাছের নাম বেসেলা এলবামিনল এবং লাল রঙের গাছের নাম রুবরালিন। এদের স্বাদেও কিছুটা পার্থক্য আছে।

প্লাষ্টিকের বোতলে চাষ পদ্ধতি:

প্রথমে পাঁচ লিটার বোতলটি প্রয়োজন মতো কেটে নিতে হবে
বোতলটির নিচে ছিদ্র করে নিতে হবে নিয়মিত পানি নিষ্কাষণের জন্য।এর উপর একটি মাটির চারা বা পাথরের টুকরা দিয়ে দিতে হবে।
পুঁই শাকের জন্য যেকোন মাটি উত্তম তবে মাটি প্রস্তুতের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা ভালো। মাটির সাথে টি এস পি সার ও গোবর সার মিশিয়ে নিতে হবে
পুঁই শাকের বীজ বপণ করার আগে এস্পিরিনযুক্ত পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পুঁই শাকের বীজ লাইন করে অথবা ছিটিয়ে লাগাতে পারেন৷ তবে লাইন করে লাগালে পরিচর্যা করা সহজ হয়৷
বীজ বপন করা হয়ে গেলে বীজগুলোর উপরে হালকা করে মাটি দিয়ে ঢেকেদিতে হবে৷
এবার টব টা যথাস্থানে রেখে দিন এবং পরের দিন বিকেলে হালকা করেপানি ছিটিয়ে দিন৷
বীজ বপনের ১৫/২০ দিন পরই চারাগাছ দেখা যাবে৷

যত্নাত্তি:

চারা গজানোর কিছু দিন পর অতিরিক্ত চারা উঠিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে এতে চারাগুলো সঠিক পরিমান পুষ্টি পাবে যা চারার বৃদ্ধি কে তরান্বিত করবে৷
হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে যেন চারা গুলো নেতিয়ে না পড়ে৷
মাঝে মাঝে ছাই ছিটিয়ে দিলে আর কোন ক্ষতির ভয় থাকে না৷ প্রায়ই নিরানী বা কোদাল দিয়ে আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
মাটি শুকিয়ে গেলে পরিমিত পরিমাণে পানি দিতে হবে।
ফলন বেশী পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। চারা ১ ফুট সমপরিমাণ উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ ঝোপালো হয়।

রোগ দমন:

পাতায় দাগ (বীজ বাহিত) রোগ: এ রোগের কারণে পাতায় দাগ পড়ে। পাতায় দাগ পড়ে ও পাতা ফুটো হয়ে যায়। শাকের গুণগত মান ও বাজারমূল্য কমে যায়। এর জন্য এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি, ২ এম এল/১ লিঃ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কান্ডের গোড়া পচা রোগ: এ রোগের কারণে পুঁইশাকের গোড়া পচে যায় এবং গাছ মরে যেতে পারে। এর জন্য এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি, ২ এম এল/১ লিঃ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:

পুঁই গাছের ডাঁটা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হবে। এতে শাকও খাওয়া হয় আবার গাছে নতুন করে ডাঁটা বের হয়। একবার চারা লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ বার পুঁইশাক সংগ্রহ করা যায়। ধারালো ছুরি দিয়ে পুঁই গাছের ডাঁটা কেটে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪এপ্রিল২০