ডিম একটি সহজলভ্য ও উন্নতমানের আমিষজাতীয় খাদ্য; যাতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভিটামিন, যা দেহগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব ধরনের ডিমে রয়েছে অতি মূল্যবান ওমেগা-৩, যা হৃৎপিণ্ডকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে একজন মানুষকে নিয়মিত ১ টি করে ডিম খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেই ১টি মুরগির ডিম উৎপাদনের জন্য একজন খামারিকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। সাধারণ জনগণ মনে করেন মুরগির ডিম উৎপাদন করে খামারিরা প্রচুর লাভ করে থাকেন। বর্তমান বাজারমূল্যে আসলেই কি মুরগির ডিম উৎপাদন করে একজন খামারি লাভ করতে পারেন? চলুন দেখে নেয়া যাক-
বর্তমানে ১টি বাদামী ডিমে খামারিদের লাভ লোকসানের হিসাব
হিসাব মিলিয়ে নিন প্রতি ডিমে (বাদামি) খরচ:
১) প্রতি ডিমে খাদ্য বাবত খরচ= ৫.৬৪ টাকা
২) প্রতি ডিমে পুলেট বাবত প্রতি ডিমে খরচ= ১.৯২
৩)প্রতি ডিমে দৈনিক অন্যান্য খরচ = ০.৪২ টাকা
৪) প্রতি ডিমে পরিবহন,ডিম নষ্ট/বাতিল/ভাঙা= ০.১২ টাকা
৫)প্রতি ডিমে খাঁচা বাবত (ডিপ্রিসিয়েশন) = ০.০৭ টাকা
৬) প্রতি ডিমে ঘর বাবত ( ডিপ্রিসিয়েশন) = ০.১৮ টাকা
=================================
বর্তমানে প্রতি বাদামি ডিমে উৎপাদন খরচ = ৮.৩৫ টাকা
১টি বাদামী ডিমের খামারিদের বিক্রয় মূল্য- ৬.৮০ টাকা
বিস্তারিত বিশ্লেষণ –
১ টি ডিম উৎপাদনে মুরগী প্রতি খাবার লাগে ১১৫ গ্রাম
১ কেজি খাবারের বর্তমান দাম ৪৯ টাকা
১ টা ডিম উৎপাদনে খাবার বাবত খরচ = ৫.৬৪ টাকা
প্রতিটি ডিম উৎপাদনে ( ভিটামিন মেডিসিন বিদ্যুৎ কর্মচারী বেতন ইত্যাদি বাবত) খরচ ০.৪২ টাকা
★★★ রোগ বালাই মৃত্যুহার বেশি, ডিমের পার্সেন্টেজ কম হলে খরচ আরো বেশি হবে।
ডিম পাড়ার আগে পর্যন্ত একটি পুলেট রেডি হতে বর্তমান বাজারে ৫৩০ টাকা খরচ হয়। এই টাকা/খরচ যদি প্রতি ডিমে ধরা হয় ( প্রতি মুরগী কাল করার আগ পর্যন্ত যদি ২৮০টি ডিম দেয়) পুলেট বাবত প্রতি ডিমে খরচ হয় ১.৯০ টাকা। পরিবহন, ডিম নষ্ট /বাতিল/ভাঙা ইত্যাদি হিসাব করলে প্রতি ডিমে খরচ ০.১২ টাকা যোগ হয়
খাঁচা বাবত প্রতি মুরগী তে ২০০ টাকা খরচ। যদি হিসাব করা হয় এই খাঁচার মেয়াদ ১০ বছর, তাহলে প্রতিবছর ২০ টাকা ( ডিপ্রিসিয়েশন), যদি বছরে ২৮০ ডিম পাড়ে একটি মুরগী তাহলে প্রতি ডিমে খাঁচার জন্য খরচ ০.০৭ টাকা ১০০০ মুরগির ঘর বানাতে যদি ৫০০০০০ টাকা খরচ হয় ( ঘরের মেয়াদ যদি ১০ বছর ধরা হয়) তাহলে প্রতি ডিমে ঘরের জন্য খরচ ০.১৮ টাকা।
এবার সরাসরি হিসাব মিলাই:
বিঃ দ্রঃ মৃত্যুহার, রোগবালাই এর জন্য চিকিৎসা ও খাদ্যের দাম যদি আরো বাড়ে, ডিম উৎপাদনের হার যদি কাংখিত % না পাওয়া যায় তাহলে উৎপাদন খরচ আরো বাড়বে। এবার একজন খামারি ভাবুন কত দামে একটি বাদামি ডিম বিক্রি করলে আপনি লাভ করতে পারবেন?
বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশে ডিমের দাম অনেক বেশি কিন্তু আমাদের দেশে ফিডের দাম বাড়ে আর মুরগী পালনের জন্য দরকারী সব কিছুর দামে বাড়ে, ডিমের দাম বাড়ে না। খামার আর কয় দিন খামারী চালু রাখতে পারবে? কারো উত্তর জানা আছে??
লেখকঃ অঞ্জন মজুমদার
সমন্বয়ক, পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি)
ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০এপ্রিল ২০২২