মাঝারি ধরনের উন্নত জাতের গরু সমৃদ্ধ খামার, একজন যুবকের কর্মসংস্থানের ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে এজন্য খামার ব্যাবস্থাপনা ভালো হতে হবে। সাধারণত একটা লাভজনক স্থায়ী খামার করতে হলে ১০০ থেকে ২০০ গরু নিয়ে শুরু করাই ভালো। কারণ তখন আধুনিক সব টেকনোলজির ব্যবহার করতে পারবেন। আসলে সেরকম একটা খামারে সনাতন পদ্ধতি খুব একটা কাজে দেবে না। মেকানিক্যাল ইন্টারভেনশন ছাড়া গরু পালন রিস্কি। আপনাকে আধুনিক বিশে^র সঙ্গে তাল দিয়ে চলতে হবে। আর তখনই আপনার খামার সাস্টেইনেবল হবে। যেমন,আপনি যখন সনাতন পদ্ধতিতে দুধ দোয়াতে যাবেন তখন একটার পর একটা গরু দোয়ানোর সময়, গরুর ওলানে ইনজুরি হবার সম্ভাবনা থাকে।
আর তখন দুধ উৎপাদন অর্ধেক কমে যাবে। এ জন্য রোবোটিক সিস্টেমে দুধ দোয়ানোর ব্যবস্থা থাকলে আপনি পরিপূর্ণভাবে দুধ পাবেন, শ্রমিকের পরিমাণ কমে আসবে, নিরাপদ ও জীবানুমূক্ত দুধ পাবেন। তাছাড়া গরুকে আপনি সহজেই সুন্দরভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারবেন। খামারে যত মানুষের সংখ্যা কম হবে তত জীবানু সংক্রমণের সংখ্যাও কমে আসবে। এতে করে আপনার খামার থাকবে জীবানু ও রোগমুক্ত। আসলে ৫০ থেকে ১০০ বা ২০০ গরু নিয়ে আপনি আধুনিকভাবে একটা খামার স্থাপন করতে পারেন। এতে করে সারা দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ফলে মানুষ দুধ পাবে, মাংস পাবে, সার পাবে। এই মডেলটি কিন্ত তখন ভালো একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারবে।
গরুর খামার করতে কেমন বিনিয়োগ প্রয়োজন : ৫০ থেকে ২০০ গরু নিয়ে একটা ফার্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য খুব বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়বে না। লাখ দশেক টাকা হলেই যে কেউ এমন ফার্ম স্টার্ট করতে পারবে। আমরা যে কাজটা করি সেটা হলো ,গরুর ঘর বানাতেই ২০ লাখ টাকা খরচ করে ফেলি। পিছন ফিরে তাকালে কি দেখবেন একসময় প্রাণীরা থাকত জঙ্গলে। এখন বাসাবাড়িতে রাখা হয়। তাও আবার দালানকোঠায়। এটা ঠিক না। যখন আপনি পশুকে ঘরের মধ্যে রাখবেন, তখন তো সেখানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আসবে না। তাহলে কী করা ? সে জন্য শুধু উপরে একটা কিছু দিয়ে কভার করলেই হবে। যাতে রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা এসে সরাসরি গরুর উপর না পরে; এটুকুই যথেষ্ঠ। তাহলে চারপাশে বাতাস আসবে, বৃষ্টিতে গরু ভিজলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তাহলে কী হবে, তাদের শরীর পরিষ্কার থাকবে, বাতাস পরিষ্কার থাকবে এবং গরুর বৃদ্ধি দ্রুত হবে। শুধু মশার একটা সমস্যা আছে, তবে তার সমাধানও আছে। আজকাল বাজারে নেট পাওয়া যায়, ঘরের চারপাশে নেট লাগিয়ে দিলে মশা আর লাগবে না, মারা যাবে। তাহলে সহজেই আপনি গরু লালন পালন করতে পারবেন। একজন শক্ত সমর্থ যুবক মাত্র ১০ লাখ টাকা খরচ করলেই এরকম একটা খামার স্থাপন করতে পারে। তাহলে তার ব্যবসাটাও ভালো হবে। যেখান থেকে প্রায় ৩০ ভাগ মুনাফা পাওয়া সম্ভব।
অন্যরকমভাবে একটা হিসাব দিই । একজন গরীব মানুষ একটা গরু পালন করলো। সে দুধ পাবে দেড়-দুই লিটার। সে দুই লিটারের দাম পাবে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। সে জায়গায় একজন শিক্ষিত যুবক যে কি না সবধরনের আধুনিক জ্ঞানে হাইব্রিডের গরু পালন করেছে। সে দুধ পেল ১৫ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত। এখানে ১৫ লিটার দুধের মূল্য ৬০০ টাকা, প্রতিদিনের খাবার ও মেইনটেনেন্স বাবদ খরচ ৪৫০ টাকা। তাহলে থাকছে ১৫০ টাকা। তাহলে দাঁড়ালো, একজন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে আর আরেকজন আয়েস করে ১৫০ টাকা গুনছে প্রতিটা গরু থেকে। এভাবে ৫০টি গরু থেকে আপনি দুধ পাবেন না। কোন গরু দুধ দেবে, কোনটা প্র্যাগনেন্ট হবে। এভাবে সার্বিকভাবে আপনি ৫০ভাগ গরুর কাছ থেকে চক্রাকারে দুধ পাবেন।
এ জন্য আপনার আধা একর জায়গার প্রয়োজন হবে। আপনাকে যে জায়গা কিনতে হবে তা কিন্ত না। চাইলে আপনার পাশের জমিটা দুই-তিন বছরের জন্য ভাড়া হিসেবেও নিতে পারেন। কারণ দেখেন, যেখানে ধান বা ফসল করে হয়তো বছরে আপনি ৮০০০ টাকাও পান না। সেখানে যদি এর বেশি টাকা পাওয়া তাহলে কেন ভাড়া দেবে না? তাছাড়া ভাড়া করা জায়গায় আজকাল অনেকেই অনেক কিছু করছে। সুতরাং এটা করাই যায়। এভাবে সম্ভব। শুধু ভালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রোগমুক্ত পরিবেশ, আর সুন্দর ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কি রকম সহযোগিতা আছে : বাংলাদেশ সরকারের পর একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসিআই-ই সবচেয়ে বড় কোম্পানি, যারা সারা দেশে কৃষি উন্নয়নের জন্য ভেটেরিনারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে অবিরত। প্রায় ৯০ জনের বেশি পশু চিকিৎসক আমাদের এখানে কাজ করেন। তারা প্রতিনিয়ত প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে কাজ করছেন। এটা কিন্ত কম কথা না। আমরা যেকোনো সময়, তাদের কাছাকাছি থেকে পুরোপুরি সুপারভাইজ করে, তাদের দিয়ে কাজ করাতে পারব। আমরা যদি এভাবে তিন চারটা ফার্মকে সুপারভাইজ করে এগিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমাদের কাজটা আরো সহজ হয়ে গেল। এ কারণেই আমরা এটা করি। তাছাড়া আমাদের তো একটা মিশন আছে যে ‘ক্রিয়েট ওয়েলফেয়ার অব ফার্মার’। সে উদ্দেশ্য সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। যতটা না মানুষ আশা করছে তার চাইতেও বেশি আমরা করতে চাই।
ঋণের ব্যাপারে আমাদের ভাবনা : আসলে আমরা লোন নিয়ে কাজ করছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের অন্যান্য অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এসব কাজে লোনের ব্যবস্থা করে থাকে। তাছাড়া সারা দেশের সবাই তো আর এ মাধ্যমে আসবে না। গ্রামের মোটামুটি শিক্ষিত মানুষ এগিয়ে আসছে এবং তারা তাদের অর্থের সংস্থান করেই আসছে। আমি মনে করি, কোন গ্রামে যদি কেউ খামার করার জন্য এগিয়ে আসে তাহলে সে তার আশেপাশের সবার কাছ থেকে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে, অবশ্যই সাপোর্ট পাবে এবং এভাবেই সবাই আসছে ।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ