ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার ডেস্ক: বড় পরিসরে ও জমকালো আয়োজনে এবার আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এবার ১১তম শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে ‘পোল্ট্রি শো’ ও ‘সেমিনার’ একই সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এবার আলাদাভাবে আয়োজন করা হয়েছে।
আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউপিএসএ) বাংলাদেশ শাখার উদ্যোগে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে ‘ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল সেমিনার’ অনুষ্ঠিত হবে ৫ ও ৬ মার্চ।
এর পর ৭, ৮ ও ৯ মার্চ ডব্লিউপিএসএ বাংলাদেশ শাখা এবং ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি) এর যৌথ উদ্যোগে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হবে ‘ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি শো’। এবার বড় পরিসরে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এই মেগা ইভেন্ট।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর একটি হোটেলে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় দৈনিক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং পোল্ট্রি ও কৃষি বিষয়ক ম্যাগাজিন-অনলাইনের প্রায় ৪০ সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি এবং বিপিআইসিসি’র সহ-সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান, নির্বাহী সদস্য মো. সিরাজুল হক, মো. তৌহিদ হোসেন, ডা. বিপ্লব প্রামাণিক, মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ডা. আলী ইমাম এবং প্রধান আহ্বায়ক কমিটির বিশেষ সদস্য ডা. এসএমএফবি আবদুস সবুর।
শুরুতে আলী ইমাম বলেন, সেমিনার ও মেলা উভয় ক্ষেত্রেই পোল্ট্রি স্টেকহোল্ডাররা যাতে পরিপূর্ণভাবে অংশ নিতে পারেন সে বিবেচনা থেকেই এবার সেমিনার ও মেলা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এবং ভেন্যুতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান বলেন, এবারের সেমিনারের পেপারগুলো যেন আরও বেশি প্রায়োগিক এবং বাংলাদেশের খামারিদের জন্য সহায়ক হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সাথে পোল্ট্রি মেলাতে এক্সিবিটররা যেন তাদের পণ্য ও সেবার সঠিক ডিসপ্লে ও প্রমোশন করতে পারেন, দেশি-বিদেশি ভিজিটররা যেন প্রতিটি স্টল ঘুরে দেখতে পারেন, দেশীয় খামারিরা যেন পোল্ট্রি ওয়ার্ল্ডের সর্বশেষ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন, বিজনেস ডিল করতে পারেন সে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ চলছে।
সিরাজুল হক বলেন, দেশে পোল্ট্রি শিল্পের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখা ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার আয়োজন করে আসছে। তবে এবারের আয়োজনটি আগের যেকোন আয়োজন থেকে আরও বেশি জ্ঞানভিত্তিক এবং জমকালো হবে বলে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, দর্শনার্থীদের সুবিধা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে শুধু মেলাই নয়, এবার আরও থাকছে ডিম ও মুরগির মাংসের রেসিপি কনটেস্ট, ডিম-চিকেন সেলফি প্রতিযোগিতা, পোল্ট্রি র্যালি, মিডিয়া গেটকিপারদের সাথে মতবিনিময়সহ আরও বেশকিছু আয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অধিক সংখ্যক মানুষকে এ আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত করা।
ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, সাধারণ খামারি থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রত্যেকেই লোকসানের জালে আটকা পড়েছে। কর ও শুল্কের বোঝা প্রতিবছরই বাড়ছে। এবছর আরও দু’টি নতুন প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে- একটি বিএসটিআই এর বাধ্যতামূলক মানসনদ এবং অপরটি হচ্ছে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার। প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে হবে এবং সেজন্য তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে তাহলে আমাদের খামারিরাই অত্যন্ত উন্নতমানের ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদন করতে পারবে। মূলত সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প।
তিনি জানান, ঢাকার শো’টি এ উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর শো। এবারের পোল্ট্রি শো’তে বিশ্বের ১০ থেকে ১৫ জন টপ মোস্ট রিসার্চারকে পেপার প্রেজেন্টেশনের জন্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এবারের স্লোগান ‘পোল্ট্রি ফর হেলদি লিভিং’। আমাদের দেশের স্বল্প শিক্ষিত কিংবা নিরক্ষর খামারিদের অনেকেই বই পড়ে খামার ব্যবস্থাপনা বুঝতে পারেন না তাই এবার আমরা চিত্র-নির্ভর ম্যানুয়াল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এমনকি মডেল খামার তৈরির মাধ্যমে খামারিদের হাতে-কলমে শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই এই তিনটি ক্ষেত্রেই পোল্ট্রি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু দেশীয় কোম্পানি বিদেশি কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের সাথে মিলে বিক্ষিপ্তভাবে পোল্ট্রি প্রদর্শনী ও সেমিনারের আয়োজন করছে। প্রদর্শনীগুলোতে উচ্চহারে স্টলের ভাড়া নেয়া হচ্ছে। আপাত বিচারে দেখা যাচ্ছে মুনাফা অর্জনই এ ধরনের আয়োজনের মূল লক্ষ্য । এ ধরনের আয়োজন থেকে উপার্জিত অর্থের একটি পয়সাও বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অথচ ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ শাখা ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার’ থেকে যে আয় করেছে তার পুরোটাই খরচ করা হচ্ছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে প্রচুর কাজ করতে হবে, এজন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। তাই অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আয়োজিত প্রদর্শনীকে ‘না’ বলাই ভাল। এবারের আয়োজনের সাথে বিপিআইসিসি যুক্ত হয়েছে। যেহেতু বিপিআইসিসি সবগুলো অ্যাসোসিয়েশনের এপেক্স বডি তাই এবার থেকে এ আয়োজনের সাথে প্রত্যেক অ্যাসোসিয়েশন এবং পোল্ট্রি’র প্রতিটি শাখার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে অন্যথায় নিজেদের কষ্টে বোনা ফসল অন্য কেউ কেটে নিয়ে যাবে।
এর পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের নেতারা। তারা এই শো’কে জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য সাংবাদিকদের জোরালো ভূমিকা আশা করেন।
এসময় মেলায় স্টল বরাদ্দের বিষয়টি ঘোষণা করেন। তারা জানান, চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর স্টল বুকিং শুরু, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, সময়: সকাল ১০টা-বিকেল ৫টা।
ওরিয়েন্টেশন: সকাল: ৯.৩০টা। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বুকিং চলবে ডব্লিউপিএসএ বাংলাদেশ শাখার নিকেতন কার্যালয়ে।
৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ পেমেন্ট করতে হবে। এবার টোকেনের মাধ্যমে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে স্টল বুকিং দেয়া হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন