পানি নিষ্কাশনের পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে খুলনার ভুতিয়ার বিল। জেলার তেরখাদার উপজেলার ভুতিয়ার বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি কৃষকের কপাল পুড়েছে। দীর্ঘ এই ১৪ বছর অনাবাদি রয়েছে এ বিলের ২০ হাজার ৮০০ একর জমি।
২০০৫ সালের পর থেকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিলের ভূমি মালিক ও কৃষকদের শুরু হয় দুঃখের জীবন। বিলের হাজার হাজার একর জমি থেকে পানি না সরে স্থায়ী হয়ে যায়।
অথচ এক সময় এ বিলের জমি থেকেই এলাকার মানুষের সারা বছরের ধানের চাহিদা মিটত। যাদের জমি নেই, তারা অন্যের জমিতে কাজ করে জীবন ধারণ করত। ফসল কাটার সময় এ অঞ্চলে মানুষের মুখে হাসি ফুটে থাকত। কিন্তু সেদিন এখন অতীত, হাজার হাজার একর জমি জলাবদ্ধতা থাকায় অনেক কৃষক বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব জমিতে ফসল উৎপাদন করে সংসার চালাতেন এলাকার কৃষকরা। ধান চাষ করতে না পারায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা।
এছাড়াও, বর্ষা মৌসুমে কয়েক শতাধিক ঘর-বাড়িতে পানি উঠে যায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ১ থেকে ২ সপ্তাহ লেগে যায় ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে। তখন ছোট শিশু, বৃদ্ধ এমনকি গবাদিপশু নিয়েও পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির ফলে বেড়ে যায় কীট-পতঙ্গ আর মশা-মাছির উপদ্রব। জলাশয়ের নোংরা পানি ব্যবহারে দেখা দেয় নানান পানিবাহিত রোগের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে জানা যায়, এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাগবে ২০১০-১১ অর্থবছরে ২ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে তার সুফল না পাওয়ায় ২০১৭-১৮ এবং ১৯ অর্থবছরের ৩ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প আবার ও হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ বছরে ভুতিয়ার বিলের ওপর নির্ভরশীল কয়েকশ পরিবার কাজ না পেয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। কেউবা আবার পেশা পরিবর্তন করছে।
তেরখাদা উপজেলার তেরখাদা উত্তরপাড়ার মনির হোসেন বলেন, ‘চৌদ্দ পুরুষ ধইরা আমরা কৃষিকাজ কইরা খাইতাছি। আর দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে আমাগো কৃষিকাজ ছাইড়া অন্য কাজ করতে হইতাছে।’
হাড়িখালী গ্রামের কৃষক আকরাম শেখ বলেন, এক সময় ভুতিয়ার বিলে আমন, ইরি বা আউশ ধানের চাষ হতো। কিন্তু স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় সারা বছরই ফসলি জমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকে। যার ফলে ফসল ফলানো সম্ভব হয় না।
বল্ববদনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধ থাকায় অনেক কষ্টে আছি। ছেলে মেয়ে নিয়ে কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে বেঁচে আছি। ২ ছেলের লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় খাবার হোটেলে কাজ করছে।
একই গ্রামের ফেরদাউস নামের একজন বলেন, পেশা ছেড়ে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। শুনেছি সরকার এত কিছু দেয়, তা যায় কোথায়? জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের দ্বারে বারবার আবেদন করেও কিছু করতে পারেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো শরীফুল ইসলাম বলেন, তেরখাদার ভুতিয়ার বিলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প চলমান রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্যে চিত্রা নদীর ২৯ কিলোমিটার আঠারবাকীর ৪৯ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। অন্যগুলো চলমান রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে কাজগুলো সমাপ্ত করা হবে। এ প্রকল্প শেষে পরবর্তী পর্যায়ে যে অংশগুলো থাকবে সেগুলো তৃতীয় ফেইজের আওতায় সম্পূর্ণ করা হবে। এর পরই ভুতিয়ার বিলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে তিনি জানান।
এ দিকে, ভুতিয়ার বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার দ্রুত কার্যকরী প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এমনটাই প্রত্যাশা তেরখাদা বাসীর।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ