২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ

341

বাজেট-কৃষি

আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে। প্রস্তাবিত বাজেটের ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার মধ্যে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা, যা প্রস্তাবিত বাজেটের ১২ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, আবাদযোগ্য জমি ক্রমশ কমতে থাকা সত্ত্বেও আমাদের কৃষিবান্ধব নীতিকৌশল ও কর্মসূচি গ্রহণের ফলে কৃষি খাতের উৎপাদন বহুলাংশে বেড়েছে। কৃষি ভর্তুকি, সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণে প্রণোদনা ও সহায়তা কার্ড, সেচ সুবিধা ও খামার যান্ত্রিকীকরণ, শস্য বহুমুখীকরণ ও বিপণন, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা ইত্যাদি সফল কার্যক্রমগুলো আমরা প্রয়োজনীয় মাত্রায় অব্যাহত রাখব। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এক্ষেত্রে দক্ষতা আরো বাড়ানো হবে। এরই মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ আর্থিক সহায়তা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং কৃষি উপকরণ সহায়তাপ্রাপ্ত কার্ডধারী কৃষকদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে।

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে চারটি উপখাত রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ২৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য বিভাগে ৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমানে আমরা পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী কার্যক্রমের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। গবেষণার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রযুক্তি ও ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং হস্তান্তরের কাজ চলছে। সেচকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানি এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া মূল্য শৃঙ্খল ও বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত আমদানি নিশ্চিতকরণে স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কৃষি খাতের মতো মত্স্য খাতের উন্নয়নেও বাংলাদেশ অনেক অগ্রসর হয়েছে। মত্স্য উৎপাদনের বর্তমান ধারা অব্যাহত রেখে ২০২১ সাল নাগাদ মত্স্য উৎপাদন ৪৫ দশমিক ৫২ লাখ টনে উন্নীত করতে চাই। মত্স্য খাতের উন্নয়নে আমাদের চলমান কার্যক্রম যেমন— উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষ, বিপন্নপ্রায় মত্স্য প্রজাতির সংরক্ষণ, মাছের প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য অভয়াশ্রম সৃষ্টি, জাটকা সংরক্ষণ, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ অব্যাহত আছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এজন্য অন্যান্য সমুদ্রসম্পদের পাশাপাশি মত্স্য খাতে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

কৃষির পাশাপাশি পল্লী উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, পল্লী এলাকার দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলে আমরা গুণগত পরিবর্তন এনেছি। আশা করছি, ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ লাখ পরিবার তথা তিন কোটি মানুষ স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হবে। গ্রাম ও শহরাঞ্চলের উন্নয়নে রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্ট, গ্রোথ সেন্টার, হাটবাজার, সাইক্লোন শেল্টার, বিল উন্নয়ন, নিরাপদ পানির উৎস ও ড্রেন নির্মাণ, পয়োনিষ্কাশন সুবিধা সম্প্রসারণ ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা কর্মচাঞ্চল্য ধরে রাখছি। আগামী অর্থবছরে আমরা গ্রামাঞ্চলে সড়ক নেটওয়ার্ক কাভারেজ ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। শহরাঞ্চলে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন, স্যানিটেশন, পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সবুজায়ন ইত্যাদি কাজ চলমান থাকবে। আগামী অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৫৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। এটি হচ্ছে আগামী বছরে কোনো খাতের জন্য সর্বোচ্চ বরাদ্দ।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন