৫ বছরে ডিম ও ‍মুরগির দাম কমায় রেকর্ড

634

broilers-253x300-(1)

গত পাঁচ বছরের রেকর্ডকে ভঙ্গ করে এবার বাজারে কমেছে ডিম ও মুরগির দাম। বিগত বছরগুলোতে এই হারে কখনো মূল্য নিম্নগামী হয়নি। এতে সাধারণ ক্রেতারা হয়তো কিছুটা স্বস্তি নিয়ে দেদারছে গিলে যাচ্ছে মুরগির মাংস। কিন্তু সোনার ডিমের জন্য যদি আস্ত হাঁসটাই জবাই করা হয় তাহলে তা কতটা পাগলাগো হবে তা ভেবে দেখার বিষয়।

অবাক করার বিষয় এক কেজি পেঁয়াজে চামের চেয়েও কম এককেজি ওজনের একটি মুরগির। তা কতটা যুক্তি সংগত। আমরা সাধারণ মানুষ এটাকে সাদা চোখে দেখলেও এটার পেছনের কারণ হয়তো ভয়াবহ।

মালিবাগ বাজার থেকে গতকাল সদাই করে ফিরছিলেন দিনমজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা। কী বাজার করলেন জানতে চাইলে সালেহার জবাব, সবজির চাইতে কম দামে মুরগি কিনেছি। দেড় শ’ টাকায় দেড় কেজি ওজনের একটা ফার্মের মুরগি কিনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি শিমের দাম এই মুরগির চেয়ে বেশি। তবে মুরগি রান্না করার জন্য দু’টি পেঁয়াজ কিনতেই তার ২০ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান। এর বাইরে সয়াবিন তেল ও গরম মশলা কিনেছেন আরো ৩০ টাকার। সব মিলিয়ে ২০০ টাকার মুরগি দিয়ে দুই দিন চলবে জানিয়ে তিনি বললেন, ২০০ টাকার সবজি দিয়ে কিন্তু দুই দিন চলে না।

এখন প্রশ্ন হলো আমরা এতটা সস্তায় কেন পাচ্ছি মুরগির মাংস? তাহলে কি রাতারাতি আমাদের উৎপাদন দ্বিগুন হয়ে গেছে? বা আমাদের খামারিরা কি সস্তায় মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য কিনতে পারছে? এসব কিন্তু একটাও ঘটেনি। বরং সবকিছুর মতো মুরগির উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে।

বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যাবে লোকসান দিতে দিতে ক্ষুদ্র খামারিরা এক সময় সম্ভাবনাময়ে এই সেক্টর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। একটা এক কেজির মুরগির উৎপাদন খরচ যদি বিক্রির দামের চেয়ে বেশি হয় তাহলে ওই খামারি কেন ‍মুরগির খাবার চালু রেখে ক্রমশ লোকসানের মুখে পরবে?

এদিকে একই পরিস্থিতি ডিমের ক্ষেত্রেও। কারণ খামারই ডিম উৎপাদনের একমাত্র ক্ষেত্র। সেই খাবার যদি বন্ধ হয় তাহলে কিভাবে ডিম আসবে।

ডিমের দাম সর্বনিম্ন- হঠাৎ করে মুরগির ডিমের দাম ডজনে ২০ টাকা কমেছে। এখন রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতিটি ডিমের দাম ৬ টাকার কম। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ৯০ টাকা।

বর্তমানে মহল্লার দোকানেও প্রতি হালি ডিম ২৫ থেকে ২৭ টাকা ও ডজন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় মিলছে।
ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এখন ডিমের দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে
পৌঁছেছে। এত কম দামে ডিম বিক্রি হয়নি গত পাঁচ বছরে। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে খামারে মজুদ থাকা ডিম একসঙ্গে বাজারে এসেছিল। তখন দাম কমলেও তা ২৬ থেকে ২৮ টাকা হালি ছিল। এবার ডিমের সরবরাহ অনেক বেড়েছে।

রাজধানীর পাইকারি আড়তে ১০০ সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ ও লাল ডিম ৫৫০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ৬২০ থেকে ৬৭০ টাকার মধ্যে ছিল। তেজগাঁওয়ের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, ৪ টাকা ৭০ পয়সা ডিম কিনে পরিবহন খরচ দিয়ে ৫ টাকা ২০ পয়সার কমে বিক্রি করলে লোকসান দিতে হবে।

জানা যায়, খামারে দাম একই হারে কমে একশ’ ডিম ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াখালীর ক্ষুদ্র খামারি আলফাজ মিয়া জানান, বাজারে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে ১০০ ডিম ৪৫০ টাকায় বিক্রি করে লোকসান দিতে হচ্ছে। এভাবে দাম কমতে থাকলে খামার বন্ধ করার উপক্রম হবে।

গাজীপুরের খামারি মনির হোসেন জানান, বর্তমানে একশ’ ডিম ৪৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। এই দামে একশ’ ডিম বিক্রিতে ৮০ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রতিটি ডিম উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা। এক কেজি মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। খামারিরা তা আকার ভেদে প্রতি কেজি ৯৩ থেকে ৯৭ টাকায় বিক্রি করছেন। এই ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এখন খরচ তুলতে পারছেন না তারা।

উল্লেখ্য এ সপ্তাহের প্রথম দিক থেকে মুরিগির মাংসের দাম কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। কিন্তু তাতেও লোকসান এড়ানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েয়ে পোল্ট্রি ফার্মের সঙ্গে জড়িতরা।

উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন খামারিরা। তারা বলেছেন, পোল্ট্রিশিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে না বাঁচাতে পারলে ভবিষ্যতে আমদানির উপর নির্ভর করতে হবে আর তখন ঠিকই উচ্চমূল্যে মুরগির মাংস খেতে হবে সাধারণ মানুষকে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন