ঢাকা: দেশের মৎস্যখাতে গত আট বছরে ১২ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ দশমিক ৬১ ভাগ প্রাণিজ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই মৎস্য খাত থেকে আসছে। দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে এই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, ‘মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ দশমিক ৬১ ভাগ মৎস্য খাত থেকে আসে। ২০০৯-’১০ অর্থ বছরে যেখানে দেশে মৎস্য উৎপাদন ছিল ২৮ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন বেড়ে দাড়িয়েছে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মেট্রিক টনে। এই আট বছরে মৎস্যখাতে ১২ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য খাতে সার্বিকভাবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের ওপর।’
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ এ বলা হয়েছে, দেশের মোট কৃষিজ আয়ের ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ মৎস্য খাত থেকে আসে। দেশের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ যোগান দেয় মাছ। মাছের উৎপাদনের পরিসংখ্যান সম্পর্কে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৭ বলছে, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন ছিল ২৮ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ৩০ দশমিক ৬২ লাখ মে. টন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৩৬ দশমিক ৮৪ লাখ মে. টন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭৮ লাখ মে. টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ মে. টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মৎস্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি।
গোলজার হোসেন বলেন, সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পাশাপাশি ব্যাপক বেসরকারি উদ্যোক্তরা এ খাতে এগিয়ে আসার কারণে সার্বিকভাবে দেশে মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে। এতে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা অনেকাংশে মিটছে। তিনি মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার এসময়কালে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে জানিয়ে বলেন, মৎস্য খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার গৃহীত উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- সমাজ ভিত্তিক মৎস্য চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণ, খাস জলাশয়ে মৎস্যজীবীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, বিল নার্সারী কার্যক্রম গ্রহণ ও মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য অভয়াশ্রম সৃষ্টি, ঘের ও খাচায় মাছ চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ভরাট হয়ে যাওয়া নদী পুনঃখনন করে মাছের আবাসস্থল পুনরুদ্ধার এবং গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ প্রমুখ।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, দেশের ১৪ লাখ নারীসহ প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎ্স্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। মৎস্য খাতে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৬ লক্ষাধিক লোকের নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে। ইনস্টিটিউট থেকে ইতোমধ্যে মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৫৭টি লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ মৎস্য অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের ফলে সাম্প্রতিকালে দেশে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ইনস্টিটিউট থেকে বিগত ৮/৯ বছরে বিপন্ন প্রজাতির মহাশোল, চিতল, ফলি, টেংরা ও গুতুম মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষ, কৈ মাছের রোগ নিরাময়ে ভেকসিন তৈরি, একোয়াপনিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত মাছ উৎপাদনের উদ্যোগের কারণেও উৎপাদন বড়েছে।
এছাড়া নোনাপানির টেংরা ও পারশে মাছের পোনা উৎপাদন, অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ- যেমন কুচিয়া ও কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন ও চাষ, মিঠা পানির ঝিনুকে ইমেজ মুক্তা উৎপাদন, সাগর উপকূলে সি-উইড চাষ ও এর ব্যবহার, বিএফআরআই মেকানিক্যাল ফিশ ড্রায়ার ব্যবহারের মাধ্যমে গুণগতমানসম্পন্ন শুঁটকি মাছ উৎপাদন এবং ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা বিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নত জাতের তেলাপিয়া ও রুই মাছ দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য আবদান রাখছে বলে জানান তিনি। বিএসএস
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন