মো. সোহেল রানা খান, মানিকগঞ্জ থেকে: এবারের কোরবানীর ঈদে দেশের সব চেয়ে বড় গরু মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লী এলাকার বিল্লাল হোসেনের ৫২ মণ ওজনের সিনবাদ।
বিশালাকৃতির গরু সিনবাদ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সাফুল্লি গ্রামের বিল্লাল হোসেনের আদরের (হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান) ষাঁড়। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করছেন বিল্লাল। তার দাবি, এবারের কোরবানির ঈদে দেশের সবচেয়ে বড় গরু এটি।
সিনবাদের দৈর্ঘ্য ৯৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৬ ফিট ৭ ইঞ্চি, ওজন প্রায় ৫২ মণ। বিশালাকৃতির গরুটি দেখার জন্য আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজারও মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় করছে বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে।
জানা যায়, বিল্লাল হোসেন ২ বছর আগে পার্শ্ববর্তী এলাকা গোপালপুর থেকে সে সময় আড়াই বছর বয়সী হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনে। পরে পরিবারের সবাই মিলে গরুটির নাম রাখে সিনবাদ। এরপর থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হচ্ছে তাকে।
সিনবাদের থাকার ঘরটাও বেশ রাজকীয়। ঘরের মেঝে সম্পূর্ণ পাকা, পায়ে ব্যাথা যাতে না পায় সে জন্য ফ্লোরে চটের কার্পেট এবং গরম থেকে সুরক্ষার জন্য মাথার উপরে তিনটি সিলিং ফ্যান ও একটি বড় ফাইটার ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তার জন্য। দিনে আর রাতে মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ বার সিনবাদকে গোসল করানো হয়। তার দেখাশেনিার জন্য একজন স্থায়ী লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সিনবাদের বর্তমান বয়স ৪ বছর ৭ মাসের মতো। রুটিন অনুযায়ী দীর্ঘ একটি খাবার তালিকা রয়েছে তার।
সিনবাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রয়েছে দশ কেজি ভুসি, দুই কেজি মালটা, দুই কেজি আপেল, ছয় হালি কলা, এক কেজি গুড়, নালি হাফ কেজি, ভুট্টার ফাকি দুই কেজি, ছোলার ফাকি এক কেজি, মিষ্টি কুমড়া এবং পাঁচ হালি লেবু এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচা ঘাস।
বর্তমানে প্রতিদিন সিনবাদের খাবারের পেছনে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
বিশালাকৃতির গরুটি দেখার জন্য আশেপাশের অঞ্চল থেকে হাজারও মানুষ প্রতিনিয়ত ভিড় করছে বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে। কেউ ছবি তুলছে কেউ ভিডিও করছে গরুটির। মানুষের ব্যাপক সমাগমে বিল্লালের বাড়ির আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসেছে।
সিনবাদের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, কৃষি কাজ ও ধানের ব্যবসার পাশাপাশি গরু পালন করেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে এবারের গরুটিই তার সেরা গরু। এর জন্য প্রচুর শ্রম ও টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাকে। সখ করে গরুটির নাম রেখেছে সিনবাদ। গত ঈদুল আজহার সময় সিনবাদের ওজন ছিল ২৭ মনের মতো। সে সময় গরুটি ক্রেতারা সাড়ে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম বলেছিল কিন্তু বিক্রি করেননি। সিনবাদের দেখবাল করার জন্য একজন রাখাল রেখেছি, তাকে প্রতি মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন দিতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিনবাদের পেছনে ১৮ থেকে ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এবার যদি গরুর বাজার ভালো থাকে এবং ভালো দামে সিনবাদকে বিক্রি করতে পারলে লাভের মুখ দেখবে সে। বিল্লাল সিনবাদের দাম চাচ্ছে ২৫ লাখ টাকা । তবে তার আশা কমপক্ষে ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করবে সিনবাদকে।
বাড়ি থেকে সিনবাদকে উপযুক্ত দামে বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সে।
সিনবাদের পরিচর্যাকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, সিনবাদ অপরিষ্কার স্থানে থাকতে চায় না। সে যেখানে শুবে সেখানে সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়। সিনবাদকে সারাদিনই কিছু না কিছু খেতে দিতে হয়। এ ছাড়া তাকে (সিনবাদ) রাত দিন মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ বার গোসল করাতে হয়। ও অনেক শান্ত, তবে বেশি মানুষ দেখতে পারে না সিনবাদ।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেনারি সার্জন ডা. সেলিম জাহান বলেন, সিনবাদ দৈর্ঘ্য ৯৬ ইঞ্চি, উচ্চতা ৬ ফিট ৭ ইঞ্চি, ওজন প্রায় দুই টন। আমরা ধারণা করছি, দেশের সবচেয়ে বড় কোরবানির গরু এটি। গরম থেকে সুরক্ষার জন্য ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত আমরা সিনবাদের শরীর স্বাস্থ্য মনিটর করছি। সিনবাদকে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন