লেয়ার মুরগি খাদ্য ও পুষ্টি পর্যালোচনা

584

হাঁস মুরগির খামার স্থাপনের মূখ্য উদ্দেশ্য আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া ও মূল্যবান প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি। এই উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য খামার ব্যবস্থাপনার প্রধানতম অংশ খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ।

বিভিন্ন জাতের খাদ্য
খাদ্যের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দেহের ভিতর বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য দায়ী। এ সমস্ত উপাদান খাদ্যের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে যে পুষ্টি উপাদান অধিক পরিমাণে থাকে তাকে সে জাতীয় খাদ্য বলে, যেমনঃ

শর্করা জাতীয় খাদ্য (ভূট্রা, গম, কাওন, রাইচ পলিস, গমের ভূষি ইত্যাদি)
আমিষ জাতীয় খাদ্য (সয়াবিন মিল, তিলখৈল, শুটকিমাছ, ফিসমিল ইত্যাদি)
চর্বি জাতীয় খাদ্য (ভেজিটেবল ফ্যাট, হাঁস-মুরগির তৈল, ভেজিটেবল অয়েল, সার্ক লিভার ওয়েল ইত্যাদি)
ভিটামিন জাতীয় খাদ্য (কৃত্রিম ভিটামিন)
খনিজ জাতীয় খাদ্য (ঝিনুক, ক্যালশিয়াম ফসফেট, রকসল্ট, লবন ইত্যাদি)

পানি
প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিড যেমনঃ
ক) আর্জিনাইন
খ) লাইসিন
গ) সিসটিন
ঘ) মিথিওনাইন
ঙ) ট্রিপটোফেন
চ) হিসডাডিন
ছ) আইসো লিওসিন
জ) ভ্যালিন
ঝ) থ্রিওনাইন
ঞ) ফিনাই-এলা-নাইন

সংকট জনক প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিডঃ দশটি এমাইনো এসিডের মধ্যে প্রথম পাঁচটি এমাইনো এসিডের উপস্থিতি ছাড়া কোন এমাইনো এসিড বিশ্লেষিত হয় না।

টেবিল-১

খাদ্যের আমিষ বাচ্চার
খাদ্য ৩ ধাপে বাড়ন্ত বাচ্চা ও পুলেটের খাদ্য ৩ ধাপে লেয়ার খাদ্য
এমাইনো
এসিডের নাম ০-৬ সপ্তাহ
পর্যন্ত ৭-১২ সপ্তাহ ১৩-১৬ সপ্তাহ ১৭-২০ সপ্তাহ ২১-৪০ সপ্তাহ ৪১-৬০ সপ্তাহ ৬১ সপ্তাহের
উর্দ্ধে
আমিষ
(শতকরা) ১৮-২০ ১৭-১৮ ১৬-১৭ ১৫-১৬ ১৮-১৯ ১৬-১৭ ১৫-১৬
দৈনিক আমিষ
গ্রহণ (গ্রাম) ২.০-৭.০ ৮.০-৯.০ ৯.৫০-১১.০ ১১-১২ ১৬-১৮ ১৭-১৯ ১৭-১৮
আর্জিনাইন
(শতকরা) ১.১৫ ০.৮-১.০ ০.৬৭-০.৮৫ ০.৬-০.৮৫ ০.৬৮-১.১৫ ০.৬৮-১.১৫ ০.৬৮- ১.১৫
লাইসিন
(শতকরা) ০.৮৫ ০.৬০-০.৯০ ০.৫০-০.৭০ ০.৪৫-০.৭২ ০.৬৪-০.৮০ ০.৬৪-০.৮০ ০.৬৪-০.৮০
সিসটিন
(শতকরা) ০.৮০ ০.৫০-০.৭০ ০.৪৫-০.৬০ ০.৪০-০.৬০ ০.৩৫-০.৮০ ০.৩৫-০.৯৬ ০.৩৫-০.৯
মিথিওনাইন
(শতকরা) ০.৪৫ ০.২৫-০.৪০ ০.২২-০.৩০ ০.২০-০.৩৫ ০.৩২-০.৫০ ০.৩২-০.৫০ ০.৩২-৫০
ট্রিপটোফেন
(শতকরা) ০.২০ ০.১৪-০.১৮ ০.১৩-০.১৫ ০.১১-০.১৫ ০.১৪- ০.২১ ০.১৪-০.২১ ০.১৪- ০.২০
অনেকে বাড়ন্ত বাচ্চার ২ ধাপে খাদ্য প্রদানের পক্ষপাতি। প্রথম ধাপ ৭ হলে ১৫ সপ্তাহ এবং পরবর্তীতে ডিম পাড়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রি-লেয়ার রেশন প্রদান করা হয়।

প্রথম ধাপে আমিষ শতকরা ১৬-১৭ ভাগ।
২য় ধাপে আমিষ শতকরা ১৫-১৬ ভাগ।
যে জাতের মুরগি পরিমাণে বেশী খায় তার খাদ্যে আমিষের হার কম ব্যবহার করলে গড়ে সব জাতের মুরগি প্রতি আমিষ গ্রহণের পরিমাণ স্থিতিশীল থাকে। হাল্কা জাতের মুরগি হতে ভারী জাতের মুরগির খাদ্যে শতকরা ১ ভাগ হারে কম আমিষ ব্যবহার করতে হয়।
চর্বি বা তৈল জাতীয় খাদ্য :

উদ্ভিদের মধ্যে যেমন শর্করা প্রাণীদেহে তেমনি চর্বি শক্তির আধার।
শর্করা ও আমিষ খাদ্যের তুলনায় চর্বি জাতীয় খাদ্যে ২.৫ গুণ বেশী ক্যালোরী থাকে। এই খাদ্য কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত যৌগিক জৈব পদার্থ।
খাদ্য পরিপাকের সময় পাকস্থলিতে চর্বি বিশ্লেষিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়।
চর্বি জাতীয় খাদ্য খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধি করে।
চর্বি ব্রয়লার মুরগির খাদ্য রূপান্তর হার বৃদ্ধি করে।
চর্বি ব্রয়লার মুরগির দেহ হতে অতিরিক্ত তাপ অপসারণ করে ও অনুকুল তাপ বজায় রাখে। এ কারণে আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলে ব্রয়লার খাদ্য হতে ক্যালোরী কমানোর জন্য চর্বি বাদ দেওয়া যায় না।
চর্বি দেহের ভিতর চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিনের ব্যবহার নিশ্চিত করে।
চর্বি দেহের অপরিহার্য তন্ত্রের অন্তরক হিসাবে যান্ত্রিক আঘাত থেকে রক্ষা করে।
চর্বি হাঁস মুরগির দেহের সন্ধিস্থল মসৃন রাখে।
চর্বি দেহের লাবণ্যতা রক্ষা করে।
চর্বি উপকরণ হিসাবে ব্রয়লার খাদ্যে ক্যালোরী বৃদ্ধির জন্য শার্কমাছের তৈল, হাঁস-মুরগির তৈল, পাম তৈল, সয়াবিন তৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

খনিজ জাতীয় খাদ্য :
মুরগির জন্য খনিজ পদার্থের শ্রেণী বিভাগ : হাঁস মুরগির জন্য খনিজ পদার্থের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বিভিন্ন মাত্রায় খাদ্যের সাথে ব্যবহার করা হয়। অনেক প্রকার খনিজ পদার্থ খাদ্যের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে উপস্থিত থাকে-যা স্বতন্ত্র ভাবে খাদ্যের সাথে ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
প্রয়োজনের ভিত্তিতে খনিজ পদার্থকে ২ দলে ভাগ করা হয়, যেমন-

অধিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন-(ক) ক্যালসিয়াম (খ) ফসফরাস (গ) সালফার (ঘ) পটাসিয়াম (ঙ) সোডিয়াম (চ) ক্লোরাইড (ছ) ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন-আয়রন , কপার , আয়োডিন , কোবাল্ট ,জিংক , ম্যাংগানিজ এবং সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ব্যবহারঃ

হাঁস মুরগির দেহের হার গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম ফসফটে আকারে ব্যবহৃত হয়।
ডিমের শেল তৈরীর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আকারে ব্যবহৃত হয়।
সিসটিন ও মিথিওনাইন এমাইনো এসিডের সাথে সালফার ব্যবহৃত হয়ে বিশ্লেষিত হতে সাহায্য করে।
পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ক্লোরাইড আকারে খাদ্যের সাথে ব্যবহৃত হয় এবং খাদ্যদ্রব্য পরিপাকে সাহায্য করে। অসমোটিক চাপ নিয়ন্ত্রন ও অম্লতার ভারসাম্য রক্ষা করে।
ম্যাগনেসিয়াম হাঁস মুরগির দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য রক্ষা করে।
তাছাড়া রিকেটস্, ডিমের শেল নরম হওয়া মাংসপেশীর খিচুনী ইত্যাদি নিবারণে এ সমস্ত খনিজ পদার্থ ভূমিকা রাখে।
স্বল্প পরিমাণে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ হাঁস মুরগির রক্ত শূন্যতা, মাংস পেশীর অধ:পতন, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি প্রতিরোধে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রাখে।
বিভিন্ন খনিজ পদার্থের ব্যবহার যোগ্যতাঃ
ক) ক্যালসিয়ামঃ

হাঁস মুরগির বাচ্চার জন্য ক্যালসিয়াম ব্যবহার করা হয় না।
বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্যেও ক্যালসিয়াম তারা প্রতিদিন প্রদেহ খাদ্য হতে আহরণ করে, যেহেতু বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের ভিতর ক্যালসিয়াম থাকে।
বাড়ন্ত বয়সে অতিমাত্রায় ক্যালসিয়াম ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে ডিম উৎপাদনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।
এই সময়ে ব্যবহৃত ক্যালসিয়াম সম্ভবত হাঁস মুরগির প্যারা থাইরয়েড এবং কিডনী গ্রন্থিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্যারা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন নিস্বঃরণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়।
এই বয়সে খাদ্যে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করলে খাদ্য খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, সাথে সাথে খাদ্যের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণের পরিমাণও কমে যায়।
পুলেট ডিম পারতে শুরু করার ২ সপ্তাহ পূর্ব থেকে লম্বা হাড়ের মধ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য ক্যালসিয়াম সঞ্চিত হতে থাকে। বাড়ন্ত বয়সে খাদ্যে ক্যালসিয়াম ব্যবহারের সাথে এই প্রক্রিয়ার কোন সম্পর্ক নেই।
সম্ভাব্য ডিম পাড়ার ২ সপ্তাহ পূর্বে খাদ্যে শতকরা ২ ভাগ হারে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করতে হয়।
ডিম পাড়ার ১০ দিন পূর্বে খাদ্যে ক্যালসিয়াম ব্যবহারের উপযুক্ত সময়।
সম্ভাব্য ডিম পাড়ার ২ সপ্তাহ পূর্বে ১ ভাগ ক্যালসিয়াম মিহি দানা ও বাকি এক ভাগ মাঝারি দানা আকারে খাদ্যের সাথে ব্যবহার করতে হয়। এই খাদ্যকে প্রি-লেয়ার খাদ্য বলে।
পালের মধ্যে সব পুলেট একই সাথে ডিম পাড়ে না। কোন পুলেট আগে ডিম পাড়তে শুরু করে।
যে সমস্ত পুলেট আগে ডিম পাড়তে শুরু করে তাদের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা বেশী হয়।
পুলেট তাদের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা নিজেরা বুঝতে পারে। প্রয়োজন মত তারা খাদ্যের মধ্যে ব্যবহৃত বড় দানা গ্রহণ করে চাহিদা পূরণ করতে পারে

ডিম পাড়তে শুরু করলে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।
দেহের মধ্যে ক্যালসিয়ামের অবস্থান পুলেটের ৬০ ভাগ এবং ডিম পাড়া মুরগির ক্ষেত্রে ৪০ ভাগ।
সাধারণতঃ ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে ঝিনুক শেল চুর্ণ করে খাদ্যের সাথে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ক্যালসিয়াম ফসফেট, রকসল্ট, হাড়চুর্ণ, ডিমের শেল ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের উৎস হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
খ) ফসফরাসঃ

রক্তের উপাদান হিসেবে ফসফরাস বিপাকীয় কার্যক্রমে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
দেহকোষ, অস্থি, এনজাইম ও অন্যান্য গ্রন্থি ও তন্ত্রে ফসফরাসের উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন প্রদেয় খাদ্য হতে হাঁস মুরগি প্রয়োজনীয় ফসফরাস আহরণ করে।
হাঁস মুরগি ২ উপায়ে খাদ্য হতে ফসফরাস আহরণ করে।
সাধারণ অবস্থায় বাচ্চা ও পুলেট শতকরা ৩০ ভাগ এবং লেয়ার মুরগি শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ জৈব ফসফরাস ব্যবহার করে।
যদি ডিমের শেলে ক্যালসিয়ামের সাথে ফসফরাস থাকে না তবুও এই অনুপাত বজায় না থাকলে ডিমের শেল পাতলা হয়।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ব্যবহার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না যদি খাদ্যের সাথে ভিটামিন ‘‘ডি”-৩ উপস্থিত থাকে।
মুরগির বয়স জৈব ফসফরাস অজৈব ফসফরাস ক্যালসিয়াম ক্যালসিয়াম ও
ফসফরাসের
অুনপাত
সপ্তাহ শতকরা) (শতকরা) (শতকরা) অনুপাত
০-৬ ০.৬ ০.৪ ০.৮৮-০.৯ ২.২: ১
৭-২০ ০.৬ ০.৩৫ ০.৮৮-০.৯ ২.৫: ১
২১-উর্দ্ধে ০.৫ ০.৪২ ৩.৭৮-৮.০ ৯.০: ১
গ) সালফারঃ

এমাইনো এসিড ও অন্যান্য খাদ্য উপকরণে সালফার প্রচুর পরিমাণে থাকে। এ কারণে স্বতন্ত্রভাবে খাদ্যে সালফার ব্যবহার করা হয় না।
খাদ্যে সালফার ঘাটতি হলে সিসটিন ও মিথওনাইন বিশ্লেষিত হয় না।
তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার এনজাইম তৈরীতে সালফারের ভূমিকা থাকে।
চ) পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও ক্লোরাইডঃ

খাবার লবন হিসাবে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ক্লোরাইড আকারে খাদ্য তৈরী করার সময় ব্যবহার করা হয়।
খাদ্যের সাথে খাবার লবন ব্যবহারের পরিমাণ ০.২৫ হতে ০.৫০ ভাগ।
ছ) ম্যাগনেসিয়ামঃ

বিভিন্ন খাদ্য উপকরণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
হাঁস মুরগির দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হয়।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে দেহের ভিতর খিচুনী হয়, শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় এবং মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায়।
মিনারেল মিক্সার হিসাবে অন্যান্য খনিজ পদার্থের সাথে এই পদার্থ ব্যবহার করতে হয়।
জ) লৌহঃ

রক্তশুন্যতা, দেহের ভিতর খিচুনী, পালকের রং বিবর্ণ ইত্যাদি উপসর্গ তৈরী হয় এবং রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরী না হওয়াতে রক্তশুন্যতা দেখা দেয়।
ঝ) কপারঃ

মাথার মগজ ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়, শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায় এবং রক্তশুন্যতা দেখা দেয়।
ঞ) আয়োডিনঃ

থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় এবং থাইরয়েড গ্রন্থি হতে হরমন নিঃসৃত হয় না।
ডিমের মধ্যে ভ্রূণের গঠন ও পরিবৃদ্ধি হয় না। আয়োডিন যুক্ত লবন ব্যবহার করলে অভাব পূরণ হয়।
ট) কোবাল্টঃ

পাকস্থলিতে ভিটামিন বিশ্লেষিত হয় না এবং হরমন তৈরী হয় না।
ঠ) জিংকঃ

বাচ্চার দেহে পালক গজায় না, পালক কর্কশ ও ভঙ্গুর হয়।
হাটুর হাড় ফুলে যায়, বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি কমে যায়।
ড) ম্যাংগানিজঃ

স্লিপ টেনডন, প্যারোসিস, পায়ের মাংস অধঃপতন ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
পায়ের হাড় বাকা হয়।
পায়ের আঙ্গুল বাকা বা কার্লটো দেখা দেয়।
ডিমের শেল পাতলা হয়।
বাচ্চার ঘাড় পেছন দিকে বেকে যায়।
ডিমের উর্বরতা কমে যায়।
ঢ) সেলেনিয়ামঃ

ডিম উৎপাদন কমে যায়।
ভিটামিন ‘‘ই’’ ঘাটতি জণিত সমস্যা হয়।
মুরগির রক্তশুন্যতা হয়।
অনেক দেশে সেলেনিয়াম ব্যবহার নিষিদ্ধ, খাদ্যের সাথে ভিটামিন ‘‘ই’’ ব্যবহার করলে সমস্যা দুর হয়।
ভিটামিন জাতীয় খাদ্যঃ
দ্রাব্যতার ভিত্তিতে ভিটামিন ২ শ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন যেমন-এ, ডি, ই ও কে (মুরগির ভিটামিন ডি-৩ প্রয়োজন হয়)।
পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন যেমন-বি এবং সি।
ভিটামিনের কাজ :

অনুঘটক হিসাবে খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ।
দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরী
দেহে নির্বাহী কার্যে সহযোগীতা।
শারীরিক বৃদ্ধি, মাংস উৎপাদন ও ডিম উৎপাদনে অংশ গ্রহণ।
পানিঃ

যে উপাদান দেহের কোষ গঠন করে তাকে খাদ্য বলে। দেহের কোষ গঠনে পানির ভূমিকা বেশী। দেহকোষে শতকরা ৬০-৭০ ভাগ পানি থাকে
কোন প্রাণী জৈব বস্ত্ত অথবা অজৈব খনিজ জাতীয় খাদ্য না খেয়ে কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু পানি ছাড়া সামান্য কিছুদিনের বেশী বাঁচে না।
দেহ থেকে পানির ক্ষয় হয় মলমুত্র ও শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে (মুরগির ঘর্ম হয় না)।
অপরদিকে পানি আহরিত হয় পানি পান, রসালো খাদ্র গ্রহণ এবং দেহের ভিতর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অক্সিডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
হাঁস মুরগির দেহে পানির কাজঃ

খাদ্যতন্ত্রের মধ্যে খাদ্য বস্ত্ত নরম ও পরিপাকে সাহায্য করে।
খাদ্য তন্ত্রের মধ্যে পুষ্টি উপাদান তরল করে দেহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিবহণ করে।
দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
দেহ সতেজ রাখে।
দেহের ভিতরে দূষিত পদার্থ অপসারণ করে।
দেহের গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রস, হরমোন, এনজাইম এবং রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে।
দেহের বেশীর ভাগ অংশ পানি দ্বারা গঠিত।
ডিমের বেশীর ভাগ অংশ পানি দ্বারা গঠিত।
মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির পরিমাণঃ

পুষ্টি উপাদান লেয়ার স্টার্টার (০-৮)
সপ্তাহ লেয়ার গ্রোয়ার (৯-১৭)
সপ্তাহ লেয়ার
(১৮-৭২) সপ্তাহ
বিপাকীয় শক্তি
কিঃক্যালরি/কেজি ২৯০০ ২৮০০ ২৮০০
আমিষ (%) ১৮-১৯ ১৬-১৭ ১৬-১৭
আঁশ (%) ৩ ৫ ৪
ক্যালসিয়াম (%) ১ ৩.৫ ৩.৫
প্রাপ্ত ফসকরাস (%) ০.৫ ০.৫ ০.৫
চর্বি (%) ৩.৫-৪.০ ৪.৫ ৩.০-৩.৫
লাইসিন (%) ১.০ ০.৭ ০.৫
মিথিওনিন (%) ০.৪ ০.৩ ০.৩৫
জলীয় অংশ (%) ১০ ১০ ১০
ডিমপাড়া মুরগির সুষম খাদ্য তালিকা (প্রতি ১০০ কেজি সুষম রেশন তৈরীর জন্য ফর্মূলা )

খাদ্য দ্রব্য স্টার্টার
(০-৮) সপ্তাহ গ্রোয়ার
(৯-১৭) সপ্তাহ লেয়ার
(১৮-৭২) সপ্তাহ
গম ভাঙ্গা/ভূট্টা ৫৪.২৫ কেজি ৫২ কেজি ৪৪.৭৫ কেজি
চালের কুড়া ১৮.০০কেজি ২২.০০কেজি ২৪.০০কেজি
সয়াবিন মিল ১৭.০০কেজি ১১.০০কেজি ১৩.০০কেজি
মাছের গুড়া/ প্রোটিন কনসেনট্রেন্ট ১০.০০কেজি ১০.০০কেজি ১০.০০কেজি
ঝিনুকের গুড়া ১.০০কেজি ৪.২৫কেজি ৭.৫০কেজি
লবণ (সর্বোচ্চ) ০.৫কেজি ০.৫কেজি ০.৫কেজি
ভিটামিন, মিনারেল প্রিমিক্স ০.২৫কেজি ০.২৫কেজি ০.২৫কেজি
লাইসিন ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
মিথিওনিন ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম ৫০ গ্রাম
মোট ১০০.০০ কেজি ১০০.০০ কেজি ১০০.০০ কেজি
প্রয়োজন অনুযায়ী ভেটেরিনারি চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের নির্দেশ অনুযায়ী উপরোল্লিখিত খাদ্যোউপাদানের পরিমাণ কম বা বেশী হতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২১এপ্রিল ২০২২