ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ ধরনের সমস্যা রয়েছে। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন।
সেই সঙ্গে নানা অসঙ্গতি বা দুর্বল দিকের কারণে প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উল্টো মাছের সঙ্গে মানবদেহে ক্ষতিকর পদার্থ প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে বেড়েছে ব্যয়। মূল ব্যয় ছিল ২৪২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। সেখান থেকে ২৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। চলমান প্রকল্পটির নিবিড় পরিবীক্ষণে এ অবস্থা খুঁজে পেয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।
গত ২৭ মে সংস্থাটির নিয়োগ করা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পার্টিসিপেশন প্রমোটার্স বাংলাদেশ লিমিটেড সংশোধিত খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তী সময়ে জুনে সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে সারা দেশে বাস্তবায়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে আইএমইডির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যে কোনো প্রকল্প সুনির্দিষ্ট কতগুলো উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য তা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা ও বরাদ্দের মধ্যে পরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, না হলে কী কী কারণে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তা উদ্ঘাটন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সমস্যা ও তার সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট করে সুপারিশ দেয়াই হচ্ছে নিবিড় পরিবীক্ষণের মূল উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সেটি করা হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যে ১২টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- প্রকল্পে মৎস্য খাদ্যের আদর্শমান পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। ফলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এমন রাসায়নিক মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হলে মাছের গুণগত মান নষ্ট এবং তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্রকল্পের আওতায় ৩৫৫টি উপজেলায় ৩ হাজার ইউনিয়নে মৎস্য চাষ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু কোথাও মৎস্য খাদ্যের মান ও বিষাক্ততা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ কর্র্মীদের (এলইএএফ) মাসিক ভাতা মাত্র ২ হাজার টাকা, যা অপ্রতুল।
মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ না দেয়া। প্রকল্পের অধীনে ৯৮ হাজার উপকারভোগীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্য থাকলেও মৎস্য খাদ্য উৎপাদনকারীরা এর মধ্যে নেই।
সিবিজি নিবন্ধন না করা। প্রকল্পের আওতায় গঠিত ৫০৫টি সিবিজি (কমন বেনিফিশিয়ারি গ্রুপ) গঠিত হলেও নিয়মানুযায়ী সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিবন্ধন করা হয়নি। মৎস্য পরামর্শ কেন্দ্রের জন্য ৩২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে কক্ষ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
আরডি (রেজাল্ট ডেমোনেসটেটর) ও সিবিজি স্থাপনে প্রকল্প থেকে বরাদ্দের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। মানসম্মত রেণু পোনার অভাব। আরডি ও সিবিজি স্থাপনের জন্য উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ পৌঁছাতে বিলম্ব। মৎস্য চাষ কার্যক্রমে নারীদের কম অংশগ্রহণ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ না করা। চাষ করা মাছ বাজারজাতকরণে সমস্যা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণে লোকবলের অভাব।
প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিক থাকায় বেশকিছু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, মৎস্য চাষ সম্প্রসারণের জন্য উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন ও তাদের ভাতা বৃদ্ধি করা না হলে ভবিষ্যতে মৎস্য চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রমও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তিতে মৎস্য চাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আরডি এবং সিবিজি সদস্য হিসেবে প্রকৃত মৎস্য চাষীদের নির্বাচন করা না গেলে মৎস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের (ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে স্থানীয় অব্যবহৃত জলাধার বা পুকুর মৎস্য চাষের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি ব্যাহত হবে।
গলদা চিংড়ি চাষের জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার। এ জন্য গলদা চিংড়ি চাষীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া না হলে গলদা চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। সূত্র: জেএন
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন