নাটোর : চলতি খরিপ মৌসুমে নাটোরে মরিচের আবাদি জমির পরিধি বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ফলন প্রাপ্তি, অধিক মুনাফা ও উচ্চ বাজার মূল্যের কারণে কৃষকরা মরিচ চাষের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে জেলায় ২৪২ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করে ২৪৫ টন শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত ৩২ হেক্টর জমিতে অর্থাৎ মোট ২৭৪ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলায় সর্বাধিক ৬০ হেক্টর জমিতে, নাটোর সদর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৫০ হেক্টর করে, লালপুরে ৪২ হেক্টর, সিংড়ায় ৩৫ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ২২ হেক্টর এবং গুরুদাসপুর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে।
জমিতে রবি, খরিপ-১ এবং খরিপ-২ এ তিন মৌসুমেই মরিচ চাষ হলেও এর প্রধান মৌসুম খরিপ-১। মৌসুমের শুরুতে মার্চ-এপ্রিল মাসে জমিতে মরিচের চারা রোপণ করা হয়। বীজ ছিটানো পদ্ধতিতে মরিচ চাষাবাদ হলেও চারা রোপণ পদ্ধতিই জনপ্রিয়। বাজারে বর্তমানে খরিপ-১ মৌসুমের মরিচ উঠতে শুরু করেছে। এর ফলন অব্যাহত থাকবে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
বাগাতিপাড়া উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মাইনুল ইসলাম জানান, পানি জমে থাকে না এমন জমি মরিচ চাষের উপযোগী। এক বিঘা জমিতে চার হাজার চারা রোপণ করা যায়। জমিতে পরিমাণমত ইউরিয়া, টিএসটি ও পটাশ সার ব্যবহার করতে হয়, জমিতে দু’একটি সেচের প্রয়োজন হয়। তবে আগাছ পরিষ্কার করতে হয় নিয়মিত।
বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের বেগুনিয়া গ্রামের কৃষক রিপন আলী এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এ এলাকাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের মাগুড়া মরিচের আবাদ বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া উফশী জাতের বিন্দু এবং হাইব্রিড জাতের সনিক ও ১৭০১ বীজের মরিচ চাষাবাদ হয়।
একই এলাকার মরিচ চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, শাকসবজি চাষাবাদে আগ্রহী কৃষকরাই সাধারণত মরিচ আবাদ করেন। মরিচের আবাদ শেষে ঐ জমিতে রবি মৌসুমের সবজি চাষ করা হয়।
মরিচ চাষে অভ্যস্ত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটা গাছ থেকে এক কেজি পর্যন্ত মরিচ সংগ্রহ করা যায়। ভালো ফলন হলে এক বিঘায় চার টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
খুচরা বাজারে মরিচের বর্তমান বাজার দর কেজি প্রতি ১২০ টাকা আর পাইকারী বাজারে ১০০ টাকা। এ দর অর্ধেকে নেমে আসলেও কৃষকের মুনাফার পরিমাণ কমলেও লোকসানের কোন আশংকা নেই। শহরের প্রধান বাজার-নীচা বাজারের ক্রেতা নাটোর সিটি কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক মোঃ শহীদুল হক সরকার মরিচের অধিক দামের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, বাজারে মরিচের ঝাল এবার বেশিই!
সাধারণত গ্রামের বধূরা জমি থেকে মরিচ সংগ্রহ করে থাকেন। দুপুরের পরে বাড়ির কাজ শেষে তাঁরা জমিতে শ্রম দেন। অর্থাৎ মরিচ চাষে নারী-পুরুষের অংশগ্রহন লক্ষ্য করা যায়।
মরিচ গাছ থেকে ফলন প্রাপ্তি শুরু হওয়ার এ সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ গাছের গোড়ায় পানি না জমার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের। একই সাথে গাছের গোড়া পচন রোধ ছত্রাকনাশক এবং পাতা ও ফুল আক্রান্ত হলে মাকড়নাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বাসস’কে জানান, ধানে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর নাটোরের কৃষকরা উচ্চ মূল্য ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন। এ কারণে শস্যের বৈচিত্রকরণ হয়েছে এবং সবজি ও মসলা জাতীয় শস্য চাষে আগ্রহী হয়ে অধিকমাত্রায় মরিচ আবাদ করেছেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন