এক বছরে সাধারণত দেশি ষাঁড়েরর ওজন হয় একশ কেজি। সেখানে আমেরিকান ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন হয় চারশ থেকে পাঁচশ কেজি। ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের মাংস অন্যান্য গরুর মাংসের তুলনায় অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকরও। এছাড়া এই জাতের গরু পালনে দেশি গরুর চেয়ে খাবার খরচও কম। মাংসে চর্বির পরিমাণও কম। আর রোগবালাই কম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি বলে দিন দিন দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রাহমা জাতের গরু পালন।
২০১০ সালে প্রথম ব্রাহমা জাতের সিমেন (বীজ)দেশের ৮০টি উপজেলায় কৃষকের বাছাইকৃত গরুতে দেয়া হয়। এখন প্রতি বছর কোরবানির ঈদের বাজারে ব্রাহমা গরুর ভালো চাহিদা দেখা যায়। ব্রাহমা জাতের গরু পালন করে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে আমদানি নির্ভরতা কমছে।
ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ বেশ কিছু জেলায় ব্রাহমা জাতের গরু পালনে খামারিরা সফলতা পেয়েছেন।
তবে ব্রাহমা জাতের সিমেন (বীজ) নয়, সরাসরি আমেরিকা থেকে ষাঁড় আমদানি করে চমক সৃষ্টি করেছেন সাদেক এগ্রোর মালিক মো. এমরান হোসেইন।
গেল মাসে তিনি চারটি ব্রাহমা জাতের ষাঁড় সরাসরি বিমানে করে এনেছেন। এসব ষাঁড় দিয়ে ব্রাহমা জাতের প্রজনন করাই তার উদ্দেশ্য। তবে ব্রাহমা জাতের গাভী আমদানি করে পুরোপুরি ব্রাহমা জাতের গরু এদেশে পালন করার জন্য তিনি শিগগির ব্রাহমা গাভীও আমদানি করবেন।
এমরান বলেন, আমেরিকাসহ বিদেশি অনেক গরুই আমদের দেশের আবহাওয়ায় উপযুক্ত নয়। কিন্তু ব্রাহমা জাতের গরু পালন বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সম্পূর্ণ মানানসই।
তিনি বলেন, ব্রাহমা জাতের গরুর মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণেও এগিয়ে। শুধু আমেরিকা নয়, সারাবিশ্বেই ব্রাহমা জাতের গরুর মাংসের সুনাম রয়েছে। বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের বার্গারের দোকানে বার্গারের গায়ে ব্রাহমা গরুর মাংস উল্লেখ থাকে।
এমরান বলেন, ব্রাহমা জাতের ষাঁড় নিয়ে আসার পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খামারিরা ছুটে আসছেন দেখতে। তারা দেখতে চাচ্ছেন ব্রাহমা জাতের সিমেন তাদের গাভীকে দেয়ার পর তার বাচ্চা কেমন হবে। বাংলাদেশে আমিও প্রথম ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করলাম।
পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. জাবির আব্দুল মালেক বলেন, তিন বছরে ব্রহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন হতে পারে ২৭ মণ। আর এক বছর বয়সে ওজন হবে ১০ মণেরও বেশি। যেখানে দেশি একটি ষাঁড়ের ওজন হবে ৪ থেকে ৫ মণ। একটি ব্রাহমা জাতের গরু একই সময়ে দেশি গরুর চেয়ে তিনগুণ বেশি মাংস দিতে পারে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই জাত আমাদের দেশের আবহাওয়ায় উপযোগী বলেই মনে করা হচ্ছে। যেহেতু সরাবিশ্বে এই জাতের গরুর সুনাম রয়েছে তাই জাতের বৃদ্ধি ঘটালে দেশের কৃষিখাত উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বছরে একজন মানুষের ৮১ কেজি মাংসের চাহিদা রয়েছে। সে হিসেবে দেশে মাংসের চাহিদা ৬.৪ মিলিয়ন টন। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১.৪ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ জনপ্রতি মাংস পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৭.৩ কেজি। অথচ চীনে ৫০ কেজি, জার্মানিতে ১০০ কেজি, আর্জেন্টিনায় ৭০ কেজি, আমেরিকায় ১০০ কেজি, পাকিস্তানে ১৯ কেজি জনপ্রতি মাংস খেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে যদি ব্রাহমা গরু পালন বাড়ানো হয় তাহলে মাংসের চাহিদা যেমন মিটবে তেমনি খামারিরা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আহসান হাফিজ বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু লালন-পালনের জন্য আমরা খামারিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ওষুধপত্র, ভ্যাকসিন বিনামূল্যে সরবরাহ করছি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্রাহমা জাতের এই গরু উত্পাদন হলে দেশের মাংসের চাহিদার ঘাটতি অনেকাংশ পূরণ হবে। ব্রাহমা মূলত এই উপমহাদেশেরই জাত। ১৮৬৫ সালে এর শুক্রাণু নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। তবে এখন ভারত বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ব্রাহমার শুক্রাণু নেয়া হচ্ছে। আর গেল মাসে সরাসরি ব্রাহমা ষাঁড় আসলো বাংলাদেশে। সূত্র: আরএন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন