এই ‘মেসির’ দাম চার লাখ!

366

mase

কিছুদিন আগেই শেষে হলো বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাকর খেলা ফুটবল। এতে বিশ্বের দামি দামি খেলোয়ার অংশ নেন। আর তার প্রভাব পড়েছে কোরবানি উপর। কারও নাম মেসি, কারও-বা রোনালদো। ওজিল, লুকাকু, হিগুয়েইন, এমবাপ্পেরও দেখা মিলল। ওদের দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করছে। এদের কারও দাম দেড় লাখ, কারও দাম পাঁচ লাখ। ডলার বা পাউন্ডে না, টাকাতেই কিনতে হবে।

না, বিশ্বের নামী কোনো স্টেডিয়ামে এসব তারকার সমাবেশ ঘটেনি; কক্সবাজারের উখিয়ার সুপারিবাগানে ঘেরা চৌধুরীপাড়ার একটি খামারে তাদের ভিড়।

২২ আগস্ট পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির জন্য এই খামারেই মোটাতাজা করা হয়েছে বিশ্বের নামী ফুটবল খেলোয়াড়দের নামে রাখা গরুগুলো। এমন নাম রাখার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে- স্বীকারও করেছেন খামার মালিক।

আগামী বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার পৌরসভার কোরবানির পশুর হাটে তারকা ফুটবল খেলোয়াড়দের নামে রাখা বিশাল আকৃতির গরুগুলো তোলা হবে। বিক্রি হবে লাখ লাখ টাকায়। তাই এখন চলছে গরুগুলোর সাজগোজের কাজ। গরুগুলোর ওজন ৮ থেকে ১৭ মণ।

মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার শহর থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ার চৌধুরী এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল আকৃতির ২০টি গরুর শরীরে সরিষার তেল মাখাচ্ছে কয়েকজন রাখাল কিশোর।

একজন কিশোর বলল, গোসলের পর শরীরে তেল মাখলে গরু সুন্দর দেখায়। এরপর ফুলের মালা পরানো হবে। কিছুক্ষণ পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমাবে গরুগুলো দেখতে।

খামারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ১৭ মণ ওজনের বিশাল একটি লাল গরু। গরুটির নাম রাখা হয়েছে বেলজিয়ামের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় রোমেলু লুকাকুর নামে। পাশে দাঁড়ানো আছে ১২ মণ ওজনের আরেকটি গরু। এই গরুর নাম ফ্রান্সের আলোচিত খেলোয়াড় এমবাপ্পের নামে। দাম চার লাখ টাকা।

রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল বেলজিয়াম। তখন আলোচনায় ছিল ফ্রান্সের এমবাপ্পে আর বেলজিয়ামের লুকাকু। ২৫ বছর বয়সী আফ্রিকান বংশোদ্ভূত লুকাকু কৃষ্ণবর্ণের লোক হলেও তার নামে রাখা গরুটির রং কিন্তু লাল। লুকাকুর দাম হাঁকা হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা।

খামারে আছে ১২ মণ ওজনের আরেকটি গরু। নাম তার মেসি। মেসির দাম চার লাখ টাকা।

১২ মণ ওজনের হিগুয়েইনের দাম চার লাখ টাকা। তবে লুকাকুর চেয়ে মেসির দাম কম হওয়ায় উপস্থিত লোকজনের সমালোচনা শুনতে হচ্ছে খামারটির মালিক ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে!

এদিকে, ইমরুল কায়েস চৌধুরী বললেন, টানা আট বছর ধরে তিনি কোরবানির গরু মোটাতাজা করে বাজারে বিক্রি করছেন। কক্সবাজার পৌরসভার কোরবানির হাটে সবচেয়ে মোটা গরু তিনিই সরবরাহ দিয়ে আসছেন। কোরবানি এলে লোকজন তার খামারে জড়ো হন বড় গরু দেখার জন্য।

গত বছর কায়েস চৌধুরী এই কোরবানির হাটে ৩০টি মোটা গরু বিক্রি করেছিলেন। তখন ১২ মণ ওজনের মেসি নামের বড় গরুটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন চকরিয়ার একজন ব্যবসায়ী। তখন মোটা গরুর ক্রেতা ছিল কম। তবু ৩০টি গরু বিক্রি করে তিনি লাভ করেছিলেন চার লাখ টাকা। এবার ২০টি গরু বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।

কারণ জানতে চাইলে ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, এবারের কোরবানিতে মোটা গরুর চাহিদা অনেক। উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বিভিন্ন এনজিও অন্তত ২০ হাজার কোরবানির পশু কিনছে। মিয়ানমার থেকে চাহিদামতো পশু আমদানি না হলে স্থানীয় পশুর দাম অনেকে বেড়ে যাবে। এ জন্য স্থানীয় অনেক প্রভাবশালী আগেভাগে গরু কিনে মোটাতাজা করছেন।

ইমরুলের খামারে গরু কিনতে এসেছেন চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের একজন গোলাম রহমান বলেন, চৌধুরী খামারের গরুগুলো সুন্দর ও মোটাতাজা। কিন্তু এত বেশি ওজনের গরু কেনার লোক সহজে পাওয়া যায় না। তবে চট্টগ্রাম শহর এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন, যারা মোটা অঙ্কের টাকায় কোরবানি দেন। তাদের জন্য এই গরু কিনতে আসা। কিন্তু দাম বেশি বলে কেনা হচ্ছে না। তিন লাখ টাকার মধ্যে হলে লুকাকু, এমবাপ্পে, মেসি ও হিগুয়েইনকে কেনা যেত।

ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, পাঁচ মাস আগে তিনি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডর থেকে ২০টি গরু কিনেছিলেন। গরুগুলোর ওজন ও আকৃতি ছিল প্রায় সমান। কিন্তু খামারে পরিচর্যার পর দেখা গেল লুকাকুর ওজন দ্রুত বেড়ে গেছে। এর তুলনায় কয়েক মণ ওজন কম মেসি, হেগুইন ও এমবাপ্পের। এছাড়া খামারের আছে ৫ থেকে ৮ মণ ওজনের আরও কিছু গরু। যার নাম নেইমার, ওজিল, রোনালদো ইত্যাদি। ২০টি গরুর পেছনে পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ১৬ আগস্ট কক্সবাজার শহরের পৌরসভা কোরবানির হাটে গরুগুলো বিক্রির জন্য তোলা হবে।

তার আশা, তখন কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকায় গরুগুলো বিক্রি হবে। এতে লাভ থাকবে ১০ লাখ টাকা। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তিনি বিশ্বকাপ ফুটবল তারকাদের নামেই গরুগুলোর নামকরণ করছেন। গত বছরও মেসি, রোনালদো, নেইমার নামের গরু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

পৌরসভা কোরবানির হাটের ইজারাদার শাহেদ এমরান বলেন, গত বছর এই হাটে ১ হাজার ২০০ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছিল। এবার বেচাবিক্রি ২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ১৬ আগস্ট থেকে জেলার অন্তত ৩০টি হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে। এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন