দেশের অধিকাংশই মুরগির খামার চলছে নিবন্ধন ছাড়াই

683

poultry care

পোলট্রি নীতিমালায় দুর্বলতার কারণে দেশের অধিকাংশই মুরগির খামার চলছে নিবন্ধন ছাড়াই। এসব খামার রয়েছে সরকারের নজরদারির বাইরে। পাশাপাশি পোলট্রি ফিড উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠানেও নিবন্ধন নেই।

ফলে হুমকির মধ্যে পড়েছে নিরাপদ পোলট্রি মাংস ও ডিম প্রাপ্যতা। মূলত নিবন্ধিত হলেই রাজস্ব গুনতে হবে খামারিদের। পাশাপাশি মানসম্পন্ন উৎপাদন না হলে কঠোর আইনের আওতায় আসবে। এসব কারণে নিবন্ধন নিতে উৎসাহিত হচ্ছে না খামারিরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, নিবন্ধন এখন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বাধ্যতামূলক করলে বাসাবাড়ির খামারও এর আওতায় পড়বে। এজন্য কারা নিবন্ধনের বাইরে থাকবে সেটিও ঠিক করতে হবে। বাধ্যতামূলক করার বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। অধিকাংশ মতামত নিবন্ধনের পক্ষে এলে তা চিন্তা করা হবে।

জানা গেছে, পোলট্রি উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও সেখানে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। নীতিমালার ২.২ ধারা বলা হয়েছে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ১০০ বা এর বেশি পোলট্রি পালনকে বাণিজ্যিক হিসেবে গণ্য হবে।

অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ১০০ তো নয়ই এমনকি ৩০০ বা ৪০০ মুরগির খামারকেও নিবন্ধনের আওতায় আনা হচ্ছে না। সেখানে বাণিজ্যিক খামারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ হচ্ছে এ খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নীতিমালা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যমান নীতিমালা অনেকাংশ প্রয়োগ হচ্ছে না।

পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এর সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান বলেন, বর্তমান ফিআবে নিবন্ধিত ফিড মিলের সংখ্যা ৭৬টি। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে এ সংখ্যা ১৫০টি। যদিও বাস্তবে ফিড মিলের সংখ্যা দু’শর অধিক। অনিবন্ধিত এ ফিড মিলগুলোর কারও কাছেই কোনো জবাবদিহিতা নেই! একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধনের চিত্রও প্রায় একই রকম।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইলে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজারের বেশি পোলট্রি খামার রয়েছে। লেয়ার খামার আছে প্রায় ৪ হাজার এবং ব্রয়লার ৮শ’টি। এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ১৪ ভাগই পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ উপজেলার ১১ হাজার ২৫৭টি পরিবার পোলট্রি শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হলেও নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা মাত্র ৪৮৪টি।

মধুপুর উপজেলায় ৩৩২টি লেয়ার এবং ২৯৯টি ব্রয়লার খামার আছে। যার মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৭১টি লেয়ার এবং ১৬১টি ব্রয়লার খামার। অর্থাৎ দুই উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার খামারের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মোট ৭১৬টি খামার।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, লেয়ার এবং ব্রয়লার মিলে এ উপজেলায় প্রায় ১৫শ পোলট্রি খামার আছে তবে খামারিরা বলছেন অবৈধ খামারের সংখ্যাও কম নয়।

সুনামগঞ্জ ছাতকের খামারি শহিদুল ইসলাম বলেন, লাভ না হলেও সরকারকে ফি দিতে হবে এমন ধারণা থেকেই তিনি নিবন্ধন করছেন না। খামারিদের অভিযোগ যখন লোকসান হয় তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। এক্ষেত্রে নিবন্ধন করে লাভ কী?

জয়পুরহাটের খামারি হাবিব বলেন, নিবন্ধন করতে অনেক ঝামেলা, টাকাও লাগে অনেক। জানা গেছে শুরুতে নিবন্ধন করতে কোনো টাকা লাগত না। কিন্তু পরবর্তীতে ফি আরোপ করা হয়। ফি বেশি হওয়ার কারণে অনেক খামারি নিবন্ধনে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, সব ধরনের বাণিজ্যিক খামার, ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, ফিড মিলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। নিরাপদ পোল্ট্রি খাদ্য নিশ্চিত করতে এটি খুবই জরুরি। তার মতে, খামারের জীব নিরাপত্তা, বর্জ্য নিষ্কাশন, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সন্তোষজনক না হলে নিবন্ধন দেয়া উচিত হবে না।

দেশে বর্তমানে মোট খামারের সম্ভাব্য সংখ্যা প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মতে, মোট খামারের প্রায় ৬৭ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের। ক্ষুদ্র খামারি কেরানীগঞ্জের জাহাঙ্গির হোসেন মনে করেন খামারের নিবন্ধন থাকলে বিদেশি কোম্পানির দাপট ঠেকানো যেত। কারণ নিবন্ধনকৃত খামার মান-সম্পন্ন পোলট্রি উৎপাদন করবে। তিনি আরও বলেন, নিবন্ধন না থাকায় ছোট পোলট্রি খামার লোকসানে পড়ছে।

ওয়ার্ল্ড’স পোলট্র্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখার (ডব্লিউপিএসএ- বাংলাদেশ) সভাপতি শামসুল আরেফিন বলেন, প্রায় ৯০ ভাগ পোলট্রি ও ফিস ফিড তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ফর্মুলায়। মানসম্মত ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদনও হচ্ছে সে ধারায়। কিন্তু অবৈধ ও অনিবন্ধিত খামার বা ফিড মিলগুলোর কারণে পোলট্রি পণ্যের মান নিয়ে ভোক্তাদের মনে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

বিপিআইসিসির সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৪ কোটি ১০ লাখ পিস ডিম এবং ৫,৪৮০ মেট্রিক টন মুরগির মাংসের প্রয়োজন হবে। স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মুরগির মাংস ও ডিম নিশ্চিত করতে খামারিদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধনের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: জেএন

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন