পটুয়াখালীতে বীজ বিক্রেতাদের প্রতারণা, দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

429

পটুয়াখালি

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী থেকে: বীজ ধান বিক্রেতাদের প্রতারণায় চলতি মৌসুমে আমন চাষের সুফলসহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলার প্রায় দু’শ কৃষক।

মৌসুমের শেষ সময়ে ধান বিক্রেতাদের এমন প্রতারণায় প্রায় কয়েক হাজার একর জমিতে আমন ফসল না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের এ সর্বনাশ ঘটিয়েছে, এমন দাবি কৃষকদের।

চলতি আমন মৌসুমে বীজ ধানের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে, বিএডিসির সঠিক বীজ না দিয়ে বোর মৌসুমের স্থানীয় নিম্নমানের বীজ সরবারহ করে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর প্রায় দু’শ কৃষকের সর্বনাশ করা হয়েছে।

বিএডিসি’র পুরাতন ব্যাগে, ধানের জাত পরিবর্তন করে, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব বীজ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছে অন-অনুমোদিত খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সাধারণ কৃষকরা না বুঝেই এসব ধানের বীজ চাষ করে পড়েছেন বিপাকে। অপরিপক্ক অবস্থায় ফলন হয়ে পড়েছে এসব বীজে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু কৃষক ধার দেনা করে পুনরায় চাষ শুরু করছেন। কিন্তু অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক পুঁজি সংকটে, চলতি মৌসুমের চাষ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শংকায় রয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের সরবারহ করা বীজের প্যাকেটের গায়ে কাটাছেড়া করে ব্রি-৪৯ লেখা ছিল। কিন্তু ভিতরে ছিল দুই ধরনের বীজ। একটি ছিল ব্রি-২৮ এবং অন্যটি ছিল ব্রি-২৮ ও ব্রি-৪৯ মিক্সড। এসব বীজে খুব দ্রুত ফুল আসে। আমন মৌসুমের ফসল না হওয়ায় ২৫ ভাগ ফলন পেতে পারে কৃষক। আবার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বড় বাইশদিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সূত্র জানায়, মনিপাড়ার সাইদুল ফরাজী ২ একর, ইছা ১ একর, বশির ফরাজী ১একর, তুহিন তালুকদার ২.৫ একর, মিজানুর ১.২৫ একর, নিজাম ২.৫ একর, কাঞ্চন ১.২৫ একর, ছাতিয়া পাড়ার দুদা ২.৫ একর, হেলাল ৫ একর, নজরুল শিকদার ৫ একর, বাহাউদ্দিন ২ একর, তায়েব হাওলাদার ২ একর, টুঙ্গিবাড়িয়ার খোকন ৫ একর এবং গাইয়াপাড়ার আলাউদ্দিন গাজী ২.৫ একর জমিতে তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজিবের কাছ থেকে বীজ ক্রয় করেছেন।

পটুয়া-খালি

একইভাবে কলাপাড়ার মহিপুর, লতাচাপলী ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় দেড়শ কৃষকের প্রায় দুই হাজার একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষকরা আরো জানায়, বিএডিসি’র বস্তায় এসব বীজ তাদের সরবারহ করা হয়েছে। প্যাকেটে ধানের জাতের নাম এবং মেয়াদ কাটা ছেড়া করে লেখা ছিল। এসব বিষয়ে সজীবকে জানালে তিনি বলেন, এটা অফিস করেছে।

কৃষক লুৎফর জানান, বীজ বিক্রেতা সজীবের কোন লাইসেন্স নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।

কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এত সব ঘটনার পরেও স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফরের দেখা মেলেনি। এলাকায় ঠিকমত না আসার কারণে অনেক কৃষকের কাছেই তিনি অচেনা। এসব বীজ বিক্রেতাদের শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষুব্ধ কৃষকরা শনিবার মানববন্ধন করেছে তক্তাবুনিয়া বাজারে।

এদিকে রোশানল থেকে রেহাইসহ আইনি ঝামেলা এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ম্যানেজে মাঠে নেমেছে বীজ বিক্রেতা সজীব।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাতিয়ানাপাড়ার কৃষক নজরুল ও খোকন।

এমন দাবি করে তারা কান্না জুড়ে দিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, ধারদেনা করে ৫ একর জমি চাষে তার প্রায় এক লাখ টাকা করে খরচ হয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে এখন ধারদেনা পরিশোধসহ আগামী দিনগুলি কীভাবে পার করবেন সেই চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে আছেন।

বড়বাইশদিয়া ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হেসেন বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেদের অনেকেই নগদ টাকায় জমি রেখে চাষাবাদ করেন। তাদের একমাত্র আয়ের পথ কৃষি।”

এ বিষয়ে চাইতে চাইলে বড়বাইশদিয়া ইউয়িনের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফর বলেন, “কৃষক যদি বীজ বপন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার দায় তাদের নয়।”

তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজীব জানায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসি’র ডিলার আবু মিয়া বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের এসব বীজ সরবারহ করেছেন। তিনি কলাপাড়ার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করে বিক্রি করেছেন। তবে তিনি কলাপাড়ার সেই বিক্রেতার নাম বলতে রাজি হয়নি।

কলাপাড়া ও রাংগাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল মন্নান জানান, এসব বীজ সরবারহকারী মূল প্রতারক বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসি’র ডিলার আবু মিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সার্বিক সহযোগিতা কর হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব কৃষককে রবি মৌসুমে প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে।সূত্র:এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন