চট্টগ্রামে পোল্ট্রি সেক্টরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মশালা অনুষ্ঠিত

377

shim-ii

দেশের মানুষের প্রাণীজ আমিষের ৪৫ ভাগ পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিচ্ছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প উদ্যোক্তারা। নব্বই দশক থেকে পোল্ট্রি শিল্প ব্যাপক প্রসার ঘটলেও বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দিনে দিনে ব্রয়লার মুরগী পালনে আগ্রহী হয়ে উঠে। কিন্তু নিন্মমানের ফিড, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়েটিকের ব্যবহার, খুচরা বিক্রেতাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই ও বিক্রি ইত্যাদি কারনে পোল্টিকে অনিরাপদ করে তুলেছে।

খামারীরা নিজের অজান্তে রেজিস্টার্ড প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের পরামর্শকে বাদ দিয়ে স্থানীয় কুয়ার্কদের পরামর্শে বিভিন্ন মানহীন কোম্পানির ওষুধ ও মুরগির ফিড ব্যবহার করছে। অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারনে একদিকে মুরগির মাংশে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, অন্যদিকে খামারীদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকার বিভিন্ন শিল্প, ব্যবসা-বানিজ্য খাতে সরকারী প্রণোদনা, ভুর্তকি ও সুযোগ সুবিধা দিলেও পোল্ট্রি শিল্পকে এখনও শিল্প ঘোষনা করা হয়নি।

খামারীদের বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেশি, অন্যান্য সরকারি করও কম নয়, তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্পসুদে ঋণ পাবার কোন সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারীদের ব্যবসা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই পোল্ট্রি খাতকে শিল্প ঘোষনার পাশাপাশি এ খাতে সরকারি যাবতীয় প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন দেশের পুরো খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

১৬ সেপ্টেম্বর নগরীর তেহরান রেস্টুরেন্ট এর কনফারেন্স হলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর পোল্ট্রি সেক্টরে সুশাসন প্রকল্পের উদ্যোগে চট্টগ্রামে পোল্ট্রি সেক্টরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় কর্মশালায় বিভিন্ন বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

ইউকেএইড, বৃটিশ কাউন্সিল প্রকাশ প্রকল্পের সহায়তায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম।

বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য শাহিদা আকতার জাহান, থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সেতু ভুষন দাস।

আলোচনায় অংশনেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, এলবিয়ন গ্রুপের ডা. মোবারক হোসেন, ওষুধ বিক্রেতা ক্ষুদ্র খামারি মোবারক আলী, মোহাম্মদ ইউসুপ, ফিড বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী, বাজার সমিতির নেতা জানে আলম, ক্যাব নেতা সেলিম জাহাঙ্গীর, মোনায়েম বাপ্পী, ক্যাব চট্টগ্রামের ডিপিও জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

বক্তারা আরো বলেন প্রাণী সম্পদ অফিসের লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা ও আইনি দুর্বলতার কারনে পশু জবাই ও মাংশ নিয়ন্ত্রণ আইন ও নতুন জনবল কাঠামো প্রণীত হলেও বিধিমালা তৈরীসহ নানা প্রাতিষ্ঠানিক জঠিলতায় জনগনের কাছে কাংখিত সেবা পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না। যার কারনে কিছু মানহীন পোল্ট্রি ফিড বাজারজাত হচ্ছে, খুচরা পোল্ট্রি বিক্রেতারা যত্রতত্র অপরিষ্কারাছন্ন পোল্ট্রি জবাই ও বিক্রি করছে।

প্রাণিসম্পদ অফিস এ বিষয়ে বাজার তদারকি ও নিরাপদ পোল্ট্রি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানে সক্ষম হচ্ছে না।
নিরাপদ খাদ্য ও মানহীন পোল্ট্রি বিষয়ে জনমনে এখনও বিভ্রান্তি থাকায় এখাতে উদ্যোক্তারা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে পোল্ট্রি শিল্পে জড়িত উদ্যোক্তা ও খামারীরা দিনের পর দিন লোকসান গুনতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ শিল্পের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশীয় প্রাণীজ আমিষের যোগান হুমকির মুখে পড়বে। তাই পোল্টি শিল্পের সাথে জড়িত পোল্ট্রি ফিড, খামারী ও ব্রয়লার উৎপাদকদের নিরাপদ ও মানসম্মত পোল্ট্রি খাবার, উৎপাদন, সরবরাহ এবং খুচরা পর্যায়ে লাইভ বার্ড বিক্রিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত, যথাযথ মান নিশ্চিত করতে এখাতে মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও প্রণোদনার পাশপাশি, সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন