শেরপুর: আমন মৌসুমে কৃষকদের মাঝে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে হাইব্রিড জাতের অ্যারাইজ তেজগোল্ড ধান। পাতা পোড়ানো রোগ প্রতিরোধী, ফলও বিঘাপ্রতি ২০/২২ মণ এবং ধানের আকার মাঝারি চিকন হওয়ায় শেরপুররের কৃষকদের মাঝে এ ধান এবার বেশ সাড়া ফেলেছে। কৃষি কর্মকর্তারাও আমন মৌসুমের জন্য হাইব্রিড জাতের অ্যারাইজ তেজগোল্ড ধানকে একটি সম্ভাবনাময় জাত হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অ্যারাইজ তেজগোল্ড জাতের ধান কৃষকরা মুলত বোরো মৌসুমে আবাদে চাষ করলেও আমন মৌসুমেও ধানটি আবাদ করা যায়। বীজ ধান ভেজানো থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত মাত্র ১২৫ দিনেই এর ফলন ঘরে তোলা যায়। এবার আমন মৌসুমে ধানটি আবাদ করতে জেলায় ২০ জন কৃষকের প্রত্যেককে ২০ শতক জমির জন্য ১ কেজি করে বীজধান প্রদান করে ধানটির বাজারজাতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বায়ার ক্রপ সাইন্স। প্রদর্শনী প্লটগুলোর ধান কেটে একর প্রতি ৬০/৬২ মণ করে ফলন পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার হরিণধরা গ্রামের একটি প্রদর্শনী প্লটের এক বিঘা জমির ধান কেটে ২০ মণ ফলন পাওয়া যায়। এ শস্য কর্তন অনুষ্ঠানে শেরপুর খামারবাড়ীর কর্মকর্তারাসহ মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং স্থানীয় অর্ধশতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন। শস্য কর্তন শেষে কৃষক হারেজ আলীর বাড়ীর উঠোনে ‘ভালো বীজে, ভালো জীবন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
মাঠ দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আজিজুর রহমান। কৃষিসামগ্রী ব্যবসায়ী মো. মুখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পিকন কুমার সাহা, বায়ার ক্রপ সাইন্স ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ চন্দন কুমার মিত্র, টেরিটরি এক্সিকিউটিভ বিশ্বনাথ মালাকার, হরিণধরা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারা বেগম, কৃষক হারেজ আলী প্রমুখ।
হরিণধরা গ্রামের কৃষক নায়েব আলী বলেন, আমি এবার এক একর ২০ শতাংশ জমিতে অ্যারাইজ তেজগোল্ড ধান আবাদ করছি। আমন মৌসুমের অন্যান্য জাতের তুলনায় হাইব্রিড জাতের অ্যারাইজ তেজগোল্ড ধান ফলনে ভালো। এর ধান চিকন হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এ ধানের ভাত খেতেও সুস্বাদু। তাছাড়া পাতা পোড়ানো রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় উৎপাদন খরচও অনেক কম লাগে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার শেরপুর সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এবার বেশকিছু জমিতে অ্যারাইজ তেজগোল্ড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পিকন কুমার সাহা জানান, হাইব্রিড জাতের ধান সাধারণত মোটা হয় এবং ‘বিএলবি’ বা ব্যাকটেরিয়াল লেট ব্লাইট (পাতা পোড়ানো রোগ) রোগের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু অ্যারাইজ তেজগোল্ড জাতের ধান মাঝারি চিকন এবং ‘বিলবি’ রোগ প্রতিরোধী হওয়ায় কৃষকদের নিকট এ ধান জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। আগামীতে এর আবাদ এবং চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও কৃষকদেরকে আগাম উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন