গাভী থেকে স্বাভাবিকভাবে আমরা সবাই বেশি বেশি দুধ আশা করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় ওলান বড় থাকলেও অজ্ঞাত কারণে আশানুরুপ দুধ আমরা পাই না। আসুন আপনাদের জন্য এ বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক।
যে বিষয়গুলোর ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভরশীল:
১. গাভীর আকার: গাভীর আকার এর ওপর উৎপাদন অনেকটা নির্ভর করে। সাধারণত বড় আকারের গাভী হতে বেশি দুধ পাওয়া যায়।
২. বাছুর প্রসবের সময়: বাছুর প্রসবের সময়ের ওপর দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। শরৎকালে গাভীর বাচ্চা প্রসবে বসন্ত ঋতুতে প্রসব অপেক্ষা প্রায় ১০% অধিক দুধ উৎপাদিত হয়, এর কিছু আবহাওয়াগত কারণ রয়েছে।
৩. পুষ্টি: গাভীর পুষ্টির উপর অনেকাংশে দুধ উৎপাদন নির্ভর করে। দুধ নিঃসরণকারী কোষে দুধ সৃষ্টি করতে পারে যদি পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় আর গাভীর পুষ্টির উৎস দুইটি তার নিজের দেহ এবং যে খাদ্য সে খায়।
৪. বয়স: গাভীর বয়সের সাথে সম্পর্কিত দুধ উৎপাদন ক্ষমতা সাধারণত গাভী তার ৩ থেকে ৬ (বাছুর সংখ্যা) দুধকাল সর্বোচ্চ পরিমাণ দুধ দেয়।
৫. স্বাস্থ্য: গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দুধ উৎপাদন অনেকটা ভালো থাকে।
৬. আদর্শ ব্যবস্থাপনা : দুধ দোহনের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও বাসগৃহ এবং সামগ্রীর পরিচালনায় দুধ উৎপাদন প্রভাব রয়েছে।
দুগ্ধবতী গাভীর দানাদার খাবারের তালিকা:
গাভীর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ধরে রাখতে হলে গাভীকে সুষম ও সঠিক পরিমাণে খাদ্য দেয়া দরকার। গরুর সুষম খাদ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ হলো; খড়, সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য এবং পানি। ১০০ কেজি দৈহিক ওজন বিশিষ্ট একটি গাভীর জন্য সাধারণত ১-২ কেজি খর, ৫-৬ কেজি সবুজ ঘাস এবং ১-১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হয়।
দানাদার খাদ্য মিশ্রনে গমের ভূষি ৫০%, চাউলের কুঁড়া ২০%, খেসারি ভাঙ্গা ১৮%, খৈল ১০% খনিজ মিশ্রণ ১% এবং আয়োডিন লবন ১% থাকা প্রয়োজন। দুগ্ধবতী গাভীর ক্ষেত্রে প্রথম ১ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য ৩ কেজি দানাদার খাদ্য এবং পরবর্তী প্রতি ৩ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য ১ কেজি হারে দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
নিম্নে ২৫০- ৩০০ কেজি দৈহিক ওজনের দুগ্ধবতী গাভীর (দৈনিক দুধ উৎপাদন ১৩ লি.) জন্য সুষম খাদ্য তালিকা দেয়া হলো।
উপাদান দৈনিক দেয়ার পরিমাণ
১। কাঁচা সবুজ ঘাস ৯-১২ কেজি
২। শুকনো খড় ৩-৪ কেজি
৩। দানাদার খাদ্য মিশ্রণ ৪-৭ কেজি
গাভীর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে খাদ্যে পাচ্যতা, পুষ্টিগুণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
যে বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি রাখলে উৎপাদন বাড়বে-
১. ড্রাই পিরিয়ড বৃদ্ধি : ড্রাই পিরিয়ড বলতে সেই সময়কে বোঝায় যখন গাভীর বাছুর বড় হওয়ার পর থেকে পুনরায় গর্ভবর্তী হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে। এ সময় সাধারণত ৫০-৬০ দিন হলে ভালো হয়। এ সময়ে গাভীর তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে এবং পরবর্তী বাছুরের জন্য নিজের দেহকে সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে পারে।
২. সুষম খাদ্যের সরবরাহ: গর্ভবতী গাভীর জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য সরবরাহ। এ সময় প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি প্রয়োজন। যা গাভীর নিজের জন্য ও বাছুরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাভীর পুষ্টির উপর নির্ভর করে গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ও বাচ্চার দেহ গঠন। তাই গর্ভবতী গাভীকে বিশেষভাবে সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: দেহের পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুষম পানি প্রয়োজন। পানি দেহের পরিমিত পানি দেহের মেটাবলিজম সঠিক রাখে।
৪. বাছুর প্রসব কালের গাভীর পরিচর্যা নিশ্চিত করা: গাভীর বাছুর প্রসবকালে নিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা। এ সময় গাভীকে নরম বিছানার (খড় বিছিয়ে) ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণত বকনা গরুর ক্ষেত্রে প্রথম বাছুর প্রসবকালে সমস্যা একটু বেশি হয়।
৫. এই সময় মিল্ক ফিভার (দুস্থ জ্বর) যাতে না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম খাবারের সাথে দিতে হবে। বাছুর প্রসবের প্রায় ১ সপ্তাহ আগে ভিটামিন ডি খাওয়ালে গাভীর জন্য সহায়ক হয়।
৬ গাভীকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা: বাছুর প্রসবের পর গাভীকে সঠিকভাবে গোসল করাতে হবে। শীতের সময় পানি হালকা গরম করে নিতে পারেন।
৭. বাছুর প্রসবের পর এমনিতেই দেহের দুর্বলতা ভাব প্রকাশ পায়। এই সুযোগ নিয়ে জীবাণু সহজে বংশ বিস্তার ও রোগ ছড়াতে পারে। আর জীবাণু পরজীবীর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ হলো অপরিচ্ছন্নতা।
৮. গাভীর বাসস্থান পরিচ্ছন্ন রাখা : যে স্থানে গাভীকে রাখা হয় তার উপর গাভীর স্বাস্থ্য ও দুধ অনেকটা নির্ভর করে। ভালো ভ্যান্টিলেশন শুকনো ও স্যাঁতসেঁতে মুক্ত পরিবেশে গাভীকে রাখতে হবে। এতে করে লোমের অর্থাৎ সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ ঠিক থাকে। যা দুধ উৎপাদন সহায়ক।
৯. বাচ্চা প্রসবের আগে ও পরে কিছু দিন বাসস্থানকে আগে আরাম দায়ক করতে শুকনো খড় ব্যবহার করা উত্তম।
কোন রকম ময়লা আবর্জনা সেখানে রাখা উচিত নয়। এতে করে পরবর্তীতে কৃমি বৃদ্ধি পেতে পারে। সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্লিচিং পাউডার দ্বারা গাভীর স্থানের মেঝে পরিষ্কার করতে হবে। এতে করে জীবাণুর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমানো যায়।
১০. পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের সরবরাহ করা : গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়াতে কাঁচা ঘাসের কোনো বিকল্প নেই। সুষম খাদ্যের পাশাপাশি কাঁচা ঘাস দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ঘাসের বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতিতে দুধ উৎপাদন বাড়ায়।
১১. নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করা : প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দোহন করলে এর উৎপাদন ভালো থাকে। গাভীর দেহের হরমোন তখন ভালো কাজ করতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে একই ব্যক্তি দ্বারা দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদনের মান ভালো থাকে বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য ব্যক্তি বা পদ্ধতির পরিবর্তন হলে গাভী অনেকটা বিরক্ত হয়। ফলে দুধ উৎপাদন কমে যায়।
১২. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দোহন শেষ করা : দুধ নিঃসরনের সাথে জড়িত হরমোন অক্সিটোসিন মাত্র ৮ মিনিট কাজ করে । এজন্য ওই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ দুধ পেতে দোহন শেষ করতে হবে।
১৩. দুধ দোহনের সময় : দুধ উৎপাদনের পরিমাণের ওপর দুধ লোহানের সময় নির্ভর করে। সাধারণত সকাল ও বিকালে দুধ দোহন করা হয়। এতে দুধ উৎপাদন পরিমান বাড়ে।
১৪. ব্যায়াম করানো : দীর্ঘদিন পেটে বাছুর/ গর্ভবর্তী থাকায় প্রায় অনেকটা অলস হয়ে থাকে গাভীগুলো। তাই বাছুর হওয়ার পর থেকে গাভীকে একটু ব্যায়াম (হাঁটানো) এর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫. বাছুরকে দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু দেয়া : গাভীর দুদ্ধ প্রদান কালে বাছুরকে তার মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু খাওয়াতে হবে। এতে করে দুধ এর চাহিদা কম হবে। যার ফলে বাছুর প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ গাভী তার মালিককে প্রদান করবে।
১৬. উপযুক্ত গোয়াল ঘরের অবস্থা : ঘরের পরিবেশ আরামদায়ক ও সন্তুষ্ট অবস্থায় দুধ দোহন করা উত্তম। এতে দুধ দোহন এর গতি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। ঘরের পরিবেশ শান্ত হওয়া দরকার। উচ্চ শব্দ, কুকুর, আগন্তক অযথা চিৎকার ও অন্যান্য উদ্ভূত পরিস্থিতি অবশ্যই পরিহার করা। এসব হলে দুধ দুহনে ব্যঘাত ঘটে।
১৭. দোহন কালে খাওয়ানো : দৈনিক দানাদারের কিছু অংশ দোহনের সময় সরবরাহ করলে গাভীর মনোযোগ খাওয়ার দিকে থাকে। এ সময় হরমনের কাজ ভালো হয় ফলে দুধ দুহনে পর্যাপ্ত হয়। এ পদ্ধতি বদমেজাজি গাভী দোহনের সহায়ক হয়।
১৮. ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স খাওয়ানো : বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের মিক্সড পাউডার পাওয়া যায়। যা ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে দুধ উৎপাদন বাড়ায়। ভিটামিন ডি বি’সহ বিভিন্ন নামে বাজারে পাওয়া যায়। যা খাবারের সাথে সরবরাহ করতে হয়।
কপি।
দুধের গুণগত মান কমবেশি হওয়ার কারণ
বিভিন্ন জাতের গাভীর দুধের গুণগত মান ও দুধের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এমনকি একই জাতের গাভীর দুগ্ধমান ও পরিমাণ এক নাও হতে পারে। আবার একটি গাভীর দুধ অনেক সময় বিভিন্ন কারণে গুণগত মান ও পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। এজন্য গাভী পালনকারী খামারিদের এ বিষয়ে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্নবর্নিত কারণে দুধের মান ও পরিমাণ কম-বেশি হয়ে থাকে।
জাত
দুধের গুণগত মান ও পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে গাভীর জাতের ওপর। দুধ উৎপাদনের মোট পরিমাণ ও গুণাগুণ এক জাত থেকে অন্য জাতের গাভীর ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল। এর কারণ হলো বংশগত গুণাগুণ বা দক্ষতা। যেমন-সিন্ধি, জার্সি, শাহীওয়াল প্রভৃতি জাতের গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে কিন্তু দুধের উৎপাদন কম হয়। আবার হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীর দুধের উৎপাদন অন্যান্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু দুধে চর্বির পরিমাণ কম। অর্থাৎ দুধের মান ও পরিমাণ পরস্পর বিপরিতমুখি।
বয়সের প্রভাব
দুধের গুণগত মান ও পরিমাণ উভয়ের ক্ষেত্রে গাভীর বয়স একটি ক্রিয়াশীল প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- প্রথম বিয়ানের গাভীর দুধে মোট চর্বির পরিমাণ ৭৭%, ২য় বিয়ানে ৮০% ৩য় বিয়ানে ৯০-৯৫% ৪র্থ বিয়ানে ৯৮% এবং ৫ম বিয়ানে ১০০% চর্বি থাকে। দুধের পরিমাণ ১ম বিয়ান থেকে ৩য়-৪র্থ বিয়ান পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। আবার ৫ম বিয়ানের পর থেকে উক্ত গাভীর দুধের গুণগত মান ও পরিমাণ পর্যায়ক্রমে কমতে থাকে।
খাদ্য
খাদ্য ব্যবস্থাপনা গাভীর দুধ উৎপাদন ও গুনগত মানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। নির্দিষ্ট পরিমান সুষম দানাদার খাদ্য, খড় ও কাঁচা ঘাস খাওয়ালে দুধ বাড়বে অন্যথায় খাবার কম দিলে দুধও কম হবে। চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ালে দুধে চর্বির পরিমান বাড়বে আবার চর্বিযুক্ত খাবার না দিলে দুধে চর্বি কম হবে।
দোহনকাল
গাভী বাচ্চা দেয়ার পর থেকে পরবর্তি দুধ বন্ধ করন পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দুধের মান ও পরিমান হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। প্রথম ২-৩ মাস দুধের উৎপাদন বেশি হলেও চর্বির পরিমান কম থাকে এবং ৩ মাস পর থেকে দুধে চর্বি ও আমিষের হার বৃদ্ধি পায় কিন্তু দুধের উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। আবার দোহনের সময় কাল বেশি হলে অর্থাৎ দীর্ঘ বিরতিতে দুধ দোহনে দুধের পরিমানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমনঃ দুধ দোহনের মধ্যবতী সময় বেশি পেলে দুধের পরিমান বেশি হয় এবং চর্বির পরিমান হ্রাস পায় পক্ষান্তরে দুধ দোহনের মধ্যবতী সময় কম হলে চর্বির পরিমান বেড়ে যায়।
দোহন প্রক্রিয়া
প্রথম দোহনকৃত দুধ এবং শেষ দোহনকৃত দুধের মধ্যে চর্বির পার্থক্য অনেক। অর্থাৎ দোহনের সময় প্রথম ৩-৪ লিঃ দুধে চর্বির পরিমান খুবই কম থাকে এবং শেষের দুধ গুলোতে চর্বির পরিমান খুব বেশি থাকে। এজন্য দুধ দোহনের সময় ওলানে দুধ রেখে দোহন বাদ দেয়া যাবে না। দোহনের সময় সম্পুর্ন দুধ দোহন করে নিতে হবে। নতুবা দুধে চর্বির মানের তারতম্য ঘটবে।
গর্ভাবস্থা ও গরম হওয়া
একটি দুগ্ধবতী গাভী গর্ভবতী হওয়ার ৫ মাস পর থেকে দুধ উৎপাদনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এ সময় দুধ অস্বাভাবিক ভাবে কমতে থাকলেও চর্বির পরিমান ব্যাপক বেড়ে যায়।
আবার দুগ্ধপ্রদান কালে গাভী গরম হলে দুধ উৎপাদনে দায়ী ল্যাকটোজেনিক হরমোন এ সময় গাভীর ইস্ট্রাস চক্রে অংশ নেয়। তাই গাভী যেদিন হিটে আসে সেই দিন দুধ অস্বাভাবিক ভাবে কম হতে পারে এবং সেই দিন চর্বির পরিমান বৃদ্ধি পাবে।
স্বাস্থ্য
দুধ প্রদান কালে অথবা গর্ভাবস্থায় দুধ প্রদান কালে যদি গাভী সুস্থ্য ও সবল থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবে দুধের পরিমান ও গুনগত মান ২৫-৩০% বেশি থাকে। এ কারনে দুধের পরিমান ও গুনগত মানের উপর গাভীর সুস্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।
রোগ-বালাই
অধিকাংশ রোগ-বালাই একটি দুগ্ধবতী গাভীর দুধ উৎপাদনের পরিমান ও গুনগত মান কে হ্রাস করে। বিশেষ করে ওলান প্রদান (Mastitis) রোগের প্রভাবই বেশি ফেলে। এ রোগে গাভীর দুধ উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে দুধ উৎপাদন কমানো থেকে দুধের গুনগত মানকে একেবারে নিকৃষ্ট করে দেয়। যার ফলে দুধে শর্করা কমে যায়, সোডিয়াম ক্লোরাইড বৃদ্ধি পায় এবং দুধের PH বৃদ্ধি পায়। এতে করে দুধে কেজিন হ্রাস পায় এবং গ্লোবিউলিন ও এলবুমিন বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক ভাবে একটি অসুস্থ্য গাভী খাদ্য গ্রহন কম করে বিধায় দুধ উৎপাদন কম হয়।
পানির প্রভাব
গাভীর শরীরে ৮০% পানি এবং দুধে ৮৭% পানি দ্বার গঠিত। সারা দিনে ২-১ বার পানি পান করালে যে পরিমান দুধ পাওয়া যায়, তার পরিবর্তে (Free of choice) হিসাবে গাভীকে পানি পানের সুযোগ দিলে ৩.৫% দুধ উৎপাদন বেশি হয় এবং চর্বির হার ১০.৫% পর্যন্ত বেশি হয়। ২৯.৪ ডিঃ সেঃ তাপমাত্রার উপরে গাভীর পানি পানের পরিমান বেড়ে যাবে, কিন্তু এ সময় যদি যথেষ্ট পানি সরবরাহ না করা হয় তাহলে দুধের পরিমান ও গুনগত মান উভয়ই হ্রাস পাবে।
তাপমাত্রার প্রভাব
সবচেয়ে ১০ ডিঃ সেঃ তাপমাত্রা গাভীর দুধ উৎপাদন ও গুনগত মানের জন্য উপযুক্ত। যখনি ২৯ ডিঃ সেঃ তাপমাত্রার উপরে যাবে তখন থেকেই দুধের উৎপাদন ও গুনগত মান হ্রাস পাবে। ৪০-৪৫ ডিঃ সেঃ পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রায় দুধে লবন বেড়ে যাবে এবং ল্যাকটোজ ও আমিষ একেবারে কমে যাবে।
দোহনকারীর প্রভাব
একই ব্যক্তি নিয়মিত দুধ দোহন করলে সেই ব্যক্তি গাভীর নিকট পরিচিত হয়ে যায়। যার ফলে গাভী ভদ্র আচরন সহ দুধ দিতে কোন বাধার সৃষ্টি করে না। এ কারনে গাভীর ওলান থেকে সম্পুর্ন দুধ নেমে আসে এবং দুধের পরিমান ও গুনগতমান বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে হঠাৎ দোহনকারীর পরিবর্তন ঘটলে দুধ নামতে বাধাগ্রস্থ হয় যার ফলে শেষের দুধ নামতে না পারায় দুধের গুনগত মান কমে যায় ও দুধের পরিমানও কম হয়।
গাভীর আকার
একই জাতের গাভী যদি আকারে ছোট হয় তাহলে এর থেকে দুধ কম পাওয়া যাবে এবং পক্ষান্তরে যদি গাভী আকারে বড় হয় তবে উক্ত গাভী থেকে দুধ বেশি পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে বড় গাভীর তুলনায় আকারে ছোট গাভীর দুধে গুনগত মান তুলনা মুলক ভাবে বেশি হয়ে থাকে।
ওষুধের প্রভাব
ওষুধ (Medicine) এটা গাভীর দুধ উৎপাদন ও গুনগত মানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। যে কোন রোগের ক্ষেত্রে যদি অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, জেন্টামাইসিন প্রভৃতি ঔষধ একটি দুগ্ধবতী গাভীকে প্রয়োগ করা হয় তাহলে উক্ত গাভীর দুধের পরিমান ও গুণগত মান কমে যাবে। আবার থাইরক্সিন, আয়োডিনেট কেজিন এবং থাইরোপ্রোটিন যদি উপযুক্ত অনুপাতে প্রয়োগ করা হয় তাহলে দুধের মান ও পরিমান উল্লেখ্য যোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
হরমোনের প্রভাব
গাভীর থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারন করলে দুধের গুনগত মান ও পরিমান উভয়ই নিকৃষ্ট হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে সিনথেটিক থাইরক্সিন প্রয়োগ করলে দুধের মান ও পরিমান পুর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
বাচ্চা প্রদানের প্রভাব
গাভী দীর্ঘ বিরতিতে বাচ্চা প্রসব করলে পরবর্তিতে দুধের পরিমান ও গুনগত মান বৃদ্ধি পায়। আবার গর্ভাবস্থায় দুধ প্রদানকাল বেশি হলে বিরতি কম পাবে ফলে পরবর্তিতে দুধ উৎপাদন কম হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন