গোপালগঞ্জে কচুরিপানায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে লাভবান কৃষকরা

546

ভাসমান

এম শিমুল খান, গোপালগঞ্জ থেকে : বাড়ির আঙ্গিনা ও পতিত জমিতে কচুরিপানার উপর ভাসমান পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন গোপালগঞ্জের কৃষকরা।

রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ছাড়াই এ পদ্ধতিতে গ্রিন ব্রোকলি, ওলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, বেগুন, লাউ, শিম, শশা, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ হয়। এ সবজি মানবদেহের জন্য উপকারী, খেতেও সুস্বাদু। ফলে বাজারে চাহিদাও বেশি। আর দাম অন্যান্য সবজির চাইতে তুলনামূলক বেশি থাকায় ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগ বলছে, এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করে একদিকে কৃষক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছেন, অন্যদিকে তারা সার ও কীটনাশকের খরচ সাশ্রয় করে লাভবান হচ্ছেন। বছর ব্যাপী এ সবজি আবাদই কৃষকের জীবন যাত্রার মান বদলে দিচ্ছে। এ কারণেই জেলার কৃষকের কাছে বর্তমানে এ সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম এম কামরুজ্জামান ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কৃষকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লীবাংলা গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুর জেলার জলাভূমি বেষ্টিত এলাকায় এই নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কাজ শুরু করে।

তিনি আরো বলেন, গোপালগঞ্জ সদরের কন্দর্পগাতী, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মিত্রডাঙ্গা, কোটালীপাড়া উপজেলার তারাকান্দর এবং পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বিল ডুমুরিয়া গ্রামের ৯৬ জন কৃষক বাড়ির আঙ্গিনা ও আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কচুরিপানা দিয়ে নিরাপদ সবজির ৯৬টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করেন।

টুঙ্গিপাড়ার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শক্তি কীর্ত্তনীয়া বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের নিম্ন এলাকার জমি পানিতে ডুবে যায়। তখন আমরা বেকার হয়ে পড়ি। কিন্তু এখন কচুরিপানা উপর সবজি উৎপাদন করে বর্ষা মৌসুমেও আমরা প্রচুর টাকা আয় করেছি।

তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে প্রথমে পানিতে কচুরিপানা জমা করে পচানো হয়, জড়ো করা কচুরিপানাকে ভাসমান বেড বলা হয়। কচুনিপানা পচতে প্রায় দশ থেকে পনেরো দিন সময় লাগে। এরপর ওই ভাসমান বেডে সবজির বীজ বপন করা হয়। জমি থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর ভাসমান বেডের অবশিষ্ট অংশ জমির মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে  গ্রিণ ব্রোকলি, ওলকপি, হোয়াইট ব্রোকলি, বাঁধাকপি, পালং শাক, বেগুন, লাউ, শিম, শশা, মরিচ, লাল শাক, করলা, টমেটো, উচ্ছেসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। এসব সবজিতে  কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করিনা। এ কারণে সবজি উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়েছে, লাভও হচ্ছে ভালো।

শক্তি কীর্ত্তনীয়া আরও জানান, তার ক্ষেত থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা নিরাপদ সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সবজি শেষ হলে জমিতে ডাটা, পুঁই শাক, ঢ্যাড়সসহ গ্রীষ্মকালীন ফসলের আবাদ করবেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কন্দর্পগাতি গ্রামের কৃষক মলয় মজুমদার বলেন, শীতে নিরাপদ সবজি চাষ করে তারা এক একর জমি থেকে অন্তত এক লাখ টাকা লাভ করেছেন, বর্ষায় আয় হয়েছে ৫০ হাজার। গ্রীষ্মেও অনেক টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন।

কৃষক গুরুপদ বিশ্বাস জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এখন এ অঞ্চলের অনেক কৃষক লাভজনক এ সবজি আবাদে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

পাইকের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের শহর আলী শেখ বলেন, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি খেতে সুস্বাদু। বাজারে এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষকের ক্ষেত থেকে বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনে বাজারে নিয়ে যাই। বাজারে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সবজি দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। এতে লাভও ভাল থাকে।

গোপালগঞ্জ সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম এম কামরুজ্জামান বলেন, জেলার কৃষকেরা নিরাপদ সবজি আবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছে। নিরাপদ সবজি আবাদ করে তারা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায়ও প্রস্তুত হচ্ছেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন