এবার যে কারণে বোরোতে লাভের মুখ দেখতে পারেন কৃষকরা

348

বোরো ধান

সরকারের বোরো অভিযান থেকে এবার কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারেন। বোরো সংগ্রহ অভিযান অগ্রিম শুরু ও সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনায় এ সুবিধা পেতে পারেন কৃষকরা।

মাঠ পর্যায়ের তথ্য-গত বোরো মৌসুমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মুনাফার অন্তত ৩৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ওই সময় কৃষকের কাছ থেকে সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে ১ লাখ ৫০ হাজার টন ধান এবং চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে ৯ লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় বরাবরের মতোই বঞ্চিত হন ১ কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক।

শুধু তাই নয়, সংগ্রহ অভিযানও শুরু হয় মে মাসে, যখন দাদনের টাকা শোধ করতে প্রান্তিক চাষিরা চালকল মালিকদের কাছে কমদামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। আগের প্রথা ভেঙে এবার এপ্রিলেই দেশের সবচেয়ে বড় খাদ্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরিফুর রহমান অপু সংগ্রহ অভিযান এগিয়ে আনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সরকার কৃষি ও কৃষকবান্ধব। আমরা কৃষকের ন্যায্যপ্রাপ্য দিতে চাই। তাই এপ্রিলেই সংগ্রহ অভিযান শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে। এতে প্রান্তিক কৃষকের কাছে থাকা ধান কিনতে পারবে সরকার।

মহাপরিচালক জানান, বোরো ধান চালে রূপান্তর করতে কৃষকের হাতে সময় কম থাকে। আর এ সুযোগ নেয় অন্য পক্ষ। আমরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে চালকল মালিকদের কাছ থেকে কিনব না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশে ২ কোটি ৫ হাজার কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন, যাদের মধ্যে ১ কোটি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার ঘোষণা দিলেও নানা অজুহাতে ক্রয় অভিযান দেরিতে শুরু হতো। ফলে কৃষকের কোনো লাভ হয়নি বলে মনে করেন কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রেজাউল করীম সিদ্দীক। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিংহভাগ কৃষকই বর্গাচাষি।

তারা মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়ে ধান উৎপাদন করে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে মহাজনও দাদনের টাকা সুদাসলসহ আদায় করতে হাজির হয় কৃষকের বাড়িতে এবং কৃষকও বাধ্য হয়ে তাদের কাছে কমদামে ধান বিক্রি করে এসেছে। এখন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে যদি খাদ্য বিভাগ ধান কেনা শুরু করে তা হলে কৃষক কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখতে পারবে বলে আমি মনে করি। মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গতবার প্রতিকেজি বোরো ধান উৎপাদনে ২৪ টাকা ও চাল উৎপাদনে ৩৬ টাকা খরচ হয়। ফলে কৃষকদের প্রতিকেজি চাল উৎপাদনে খরচ পড়ে ৩৬ টাকা আর সরকার চাল কেনে ৩৮ টাকা কেজি দরে। ধান আর চালের মাঝখানে মূল্য পার্থক্য থাকে ৩ থেকে ৪ টাকা। এ সময় কৃষক সরকারের কাছে ধান বেচতে না পারায় তাদের মুনাফার প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা চলে মধ্যস্বত্বভোগী ও মিলারদের পকেটে।

বিদ্যমান বাস্তবতা বলছে, সরকারের নীতিমালার সঠিক প্রয়োগের অভাব আর কথিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে চাল কিনে থাকে। ফলে সংগ্রহ মূল্য বাড়ালেও উৎপাদক কৃষকরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি দাম থেকে। আসছে বোরো সংগ্রহ মৌসুমে প্রতিকেজি ধান ২৮ ও চালের সংগ্রহ মূল্য ৩৯ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আর ফলন ভালো হওয়ায় এবার সরকার ১৪ লাখ টন বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে পারে বলে খাদ্য বিভাগ থেকে এমনই আভাস পাওয়া গেছে। আর এর পুরো জোগান কৃষকের কাছ থেকে নেওয়ার সব উদ্যোগই নেবে খাদ্য বিভাগ।

খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কার্ডধারী একজন কৃষক সর্বনিম্ন ৮০ কেজি ও সর্বোচ্চ ৩ টন পর্যন্ত ধান সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, অধিক সংখ্যক কৃষককে সুযোগ দিতে সরকারের এ উদ্যোগ। সে হিসাবে একজন কৃষকের কাছ থেকে ৫০০ কেজি করে ধান কিনলে ১৪ লাখ, ১ টন করে কিনলে ৭ লাখ এবং ৩ টন করে কিনলে ২ লাখ ৩৪ হাজার কৃষক সরকারি সুযোগের আওতায় পড়বেন। বিগত বছরগুলোয় সাকল্যে ১ লাখ টন ধান কিনেছে খাদ্য বিভাগ।

সূত্র জানায়, কৃষকদের সরাসরি প্রণোদনা দিতে এবং মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত তালিকা অনুযায়ী স্থায়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করবে খাদ্য বিভাগ। কৃষকের নাম, কৃষক পরিচয়পত্র, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের দ্বারা প্রত্যয়নকৃত জমির খতিয়ান নম্বর, জমির আয়তনের ভিত্তিতে উৎপাদনের পরিমাণ এসবের ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে কৃষকের পাওনা বুঝে দেওয়ার নিয়ম এখনো বহাল রয়েছে। চেক দেওয়ার আগে সবকিছু যাচাই করবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। পুরো বিষয়টি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে তদারকি কমিটি গঠন করবে খাদ্য বিভাগ, জানান মহাপরিচালক। সূত্র: এএস।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন