উন্নত জাতি গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে পুষ্টি । আত্মনির্ভরশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও বাস্তবমুখী ও শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ।
তিনি বলেন, খাদ্যের পাশাপাশি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, তথ্য-প্রযুক্তিসহ প্রতিটি খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছি। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমি কৃষি, স্বাস্থ্য, সমাজ কল্যাণ, পরিবেশ, পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মহিলা ও শিশু, শিল্প, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানাই।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড-১৯’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা করেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদুর প্রসারি চিন্তার ফলশ্রুতিতে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাধিকার হিসেবে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি কৃষি গবেষণার প্রায় সকল বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাঁর সৃষ্টি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই খাদ্য উৎপাদনে বিশেষতঃ দানাদার জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে দেশ।
খাদ্য মন্ত্রী বলেন, পারিবারিক সম্পদ- ভিত্তির উন্নয়ন,মাতাপিতার শিক্ষা, প্রসব-পূর্ব ও প্রসব পরবর্তীকালে উন্নত স্বাস্থ্যও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী অনেকক্ষেত্রে তুলনামূলক অবদান রাখছে। বাংলাদেশে পুষ্টি উন্নয়নে সম্প্রতিককালে তরুণ ও কিশোরদের সম্পৃক্ততা একটা উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক নিউট্রিশন ক্লাবের প্রতিষ্ঠা তাদের যথেষ্ট উৎসাহ যোগাচ্ছে। এসডিজি এর খাদ্য ও পুষ্টি সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যসমূহ অজনে জাতিসংঘের খাদ্য ও পুষ্টি সংস্থার কারিগরি সহায়তায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি ‘জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি’ প্রণয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নে বতমানে তরুণ ও কৃষকদের সম্পৃক্তততা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এ সম্পৃক্ততা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। পুষ্টি উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়ন এবং লাভজনক করার লক্ষ্যে সার,বীজ,সেচসহ কৃষি উপকরণ আরও সহজলভ্য করা হয়েছে। আবহাওয়া ও জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার ক্রমাগত মানোন্নয়ন, আয় বৃদ্ধি ও খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান অপরিসীম। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও পুষ্টিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এ খাতের অবদান প্রায় ৮%। প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৯০% মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাত থেকে আসে। মাছের চাষ বাড়াতে হবে। আমাদের অনেক প্রজাতির সুস্বাদু মাছ ছিল। সেগুলোকে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
ড. রাজ্জাক বলেন, পরিবেশ উন্নয়ন, জীববৈচিত্র রক্ষা এবং বনভূমি সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। বিগত সাড়ে ১০ বছরে আমাদের বনভূমির পরিমাণ ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২০ সালে দেশের বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমি শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
‘Bangladesh Delta Plan-২১০০’ শীর্ষক একটি শতবর্ষী ও সামগ্রিক কৌশলগত পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই দীর্ঘ মেয়াদি শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও কাজ করছি।
খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রীসাধন চন্দ্র মজুমদার এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ডেলিগেশনের প্রধান ও মান্যবর অ্যাম্বাসেডর, মিজ রেঞ্জজতেরিংক; সম্মানিত অতিথি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি সিম্পসন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন