হালিম সৈকত, কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লার দাউদকান্দির আদমপুরে মৌসুমব্যাপি বিঘাপ্রতি দুইশ টাকা সেচ খরচে বোরোধানের আবাদ করা যায়। এ সেচ সুবিধার জন্য মো. কালু মিয়া গ্রাম দৈয়ারা, মুরাদনগর । মো. আলম মিয়া গ্রাম, দক্ষিণ মোহাম্মদ পুর, দাউদকান্দি। আবদুল মান্নান গ্রাম, নাওতলা, আবদুস সাত্তার, গ্রাম মুরাদনগর, চান্দিনা। তাদের মতো আরো অনেক কৃষক নিজের এলাকা ছেড়ে ১০/১৫ কিলোমিটার দুরে আদমপুর এসে বোরোধানের আবাদ করেন।
তারা জানান, আমরা স্থানীয় কৃষকদের সাথে মিলেমিশে জমি পত্তন ও বর্গা নিয়ে ধান চাষ করছি। কারণ একটাই আমাদের এলাকায় বোরোধানের সেচ খরচ দিতে হয় ২০০০/২২০০ টাকা। আদমপুরে মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে কৃষকবন্ধু মতিন সৈকত মৌসুমব্যাপী পৌষ থেকে বৈশাখ পাঁচ মাস, ধান লাগানো থেকে পাকা ধান কাটা পর্যন্ত মাত্র দুইশ টাকা বিঘাপ্রতি সেচ খরচ নেন। এখানে প্রায় বিনামূল্যে সেচ দিয়ে ধান উৎপাদন করে আমরা লাভবান হচ্ছি।
আদমপুর গ্রামের মো. কালা মিয়া, মো. রোশন আলী, মো. আলী আশ্রাফ, সিংগুলা গ্রামের মো. আব্দুর রহিম মোল্লা, পুটিয়ার মো. সুরুজ মিয়া ৫৩ জানান, আমরা ৫/৬ কানি (৩০ শতাংসে ১ কানি) করে ধান করি। আমাদের কৃষকবন্ধু প্রফেসর মতিন সৈকত ২২/২৩ বছর ধরে আদমপুর আপুসি বোরোধানের মাঠে নিজের পকেটের টাকা ব্যয় করে ১৫০ বিঘা বোরোধানের জমিতে বিঘাপ্রতি মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে বোরোধানে সেচ দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা প্রতি বছর তার উদ্যোগে বোরোধান কাটা উপলক্ষে সেচ উৎসব করি। এবারো করেছি সেচ উৎসব। আমাদের আশেপাশেই সেচের খরচ ২০০০/২২০০টাকা নেয়। আমরা মতিন সৈকতের কাছে ২০০০ টাকার সেচের পানি পাই মাত্র দুইশ টাকায়। দেশের কোথায় ও এত মাগনা (সস্তায়) সেচের পানি নাই। দূরের লোকজন ২০০ টাকা সেচের কথা শুনলে বিশ্বাস করে না। অথচ অবিশ্বাস্য মূল্যে মাত্র দুইশ টাকা সেচের নায়ক মতিন সৈকত।
বিবিসি বাংলার প্রতিনিধি শাহনেওয়াজ রকি, চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ, বিটিভির মাটি মানুষের রেজাউল করিম সিদ্দিকী, রামেন্দু মজুমদার, মুন্নি সাহা, রোম্মান রশিদ-সাদিয়া ওহাব, জাহাঙ্গীর আলম ইমরুলসহ অনেক সাংবাদিক মতিন সৈকতকে নিয়ে প্রতিবেদন করেন।
দুইশ টাকা সেচের নায়ক, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষি, পরিবেশ, সমাজ উন্নয়ন সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষি, সেচ, কালাডুমুর নদী পুনঃখনন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন আন্দোলন আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। মৌসুমব্যাপী ১৫০ বিঘা জমিনে বিঘাপ্রতি দুইশ টাকায় ২২ বছর ধরে সেচ প্রদান আমার অন্যতম একটি সেবামূলক কাজ।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জামান বলেন, আমি দাউদকান্দি আসার আগেই মতিন সৈকতের কাজের কথা অনেক শুনেছি। এখানে এসে তাকে কৃষি উন্নয়নে সব সময় কাছে পেয়েছি। তিনি ত্রিশ বছরের ও বেশি সময় ধরে কৃষি, পরিবেশ, সমাজ উন্নয়ন, মৎস্য চাষপ্রকল্প প্রতিষ্ঠায়, খাল-নদী পুনঃখনন, পাখি উদ্ধার ও অবমুক্তি, বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনসহ বহুমুখী আনন্দোলন করে আসছেন। মতিন সৈকত তার কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন পত্র পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক দিয়েছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে চারবার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী (অব.) বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিনন্দন ধন্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষি, পরিবেশ, সমাজ উন্নয়ন সংগঠক, কৃষকবন্ধু মতিন সৈকত পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে চতুর্থবার চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করায় আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
দাউদকান্দি-মেঘনা আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. সুবিদ আলী ভূইয়া মন্তব্য করেন, মতিন সৈকত দুই দশকের বেশি সময় ধরে কৃষি, পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে জাতি গঠনে অবদান রাখছেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন