খুলনা জেলায় ব্যাপকহারে চিংড়ি মরছে। মাছ মরে লালচে হয়ে ভেসে উঠছে পানির ওপর। কখনও আবার লালচে হয়ে পড়ে থাকছে ঘেরের বেড়ির পাশে। এভাবে মাছ মরে যাওয়ায় আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে চাষিদের মধ্যে।
চাষিরা বলছে ভাইরাসে মরছে আর মৎস্য অফিস বলছে, তীব্র গরমের কারণে ঘেরের পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মরছে চিংড়ি।
খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, খুলনা জেলায় চিংড়ি চাষি রয়েছে ৫১ হাজার ৬শ ১৪ জন এবং চিংড়ি চাষি সমিতি রয়েছে ৮টি। বাগদা চিংড়ি (উৎপাদন) ঘের রয়েছে ২৫ হাজার ৩শ ৬৩টি এবং গলদা চিংড়ি (উৎপাদন) ঘের রয়েছে ৪১ হাজার ২টি। যার মধ্যে ডুমুরিয়ায় ৭ হাজার ৮শ ১০টি, বটিয়াঘাটায় ৮শ ১টি, দাকোপে ৭ হাজার ৪শ ৬০টি, পাইকগাছায় ৩ হাজার ৯শ ৪০টি, কয়রায় ৪ হাজার ৮শ’টি এবং তেরখাদায় ১টি বাগদা ঘের রয়েছে।
অন্যদিকে ডুমুরিয়ায় ১৮ হাজার ৭শ ১২টি, বটিয়াঘাটায় ১শ ৩৬টি, দাকোপে ৩ হাজার ৩শ ৬০টি, পাইকগাছায় ২শ ২৫টি, কয়রায় ৫শ ৪০টি, দিঘলিয়ায় ১ হাজার ৫শ ৩২টি, ফুলতলায় ৪ হাজার ৫শ ৯০টি এবং তেরখাদায় ৭ হাজার ২শ ৫০টি গলদা ঘের রয়েছে।
খুলনা অঞ্চল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৩৪৩.২২১ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে যার মূল্য ৩৮৭.২৬৭ কোটি টাকা। একই সময়ে বাগদা রপ্তানি হয়েছে ১৪৭০৬.৩৪৭ মেট্রিক টন, যার মূল্য ১২৬৭.৭০৭ কোটি টাকা।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এবং চিংড়িচাষি মো. রবিউল ইসলাম শেখ জানান, ভাইরাসের কারণে দিশাহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দরিদ্র এবং ক্ষুদ্র চাষিদের অবস্থা খুবই খারাপ। ঘেরে মাছা ছাড়ার পূর্বে বিভিন্ন প্রকার সার-মেডিসিন দেয়া হয়। হয়তো তার কারণে ভাইরাস হচ্ছে। যদি গরমের কারণে মরবে তাহলে অনেক গভীর পানির ঘেরের মাছ মরছে কেন? মৎস্য অফিস থেকে যদি মাঝে মাঝে চিংড়ি চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং ঘের পরিদর্শন করে পরামর্শ দেয় তাহলে ঘের মালিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
কয়রা মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী এবং চিংড়িচাষি মো. আফসার আলী গাজী জানান, এই এলাকার অল্প কিছু ঘেরে মাছ মরছে। মাছ মরে ঘের বেড়ির গায়ে লেগে থাকে। তবে এলাকার বেশিরভাগ ঘেরের মাছ ভালো রয়েছে।
পাইকগাছায় গদাইপুর এলাকার চিংড়িচাষি মো. কবিরুল ইসলাম জানান, বাগদায় ভয়াবহ আকারে ভাইরাস ধরেছে। এবার খরচের টাকা উঠবে না। এখন হারির (জমি ভাড়া) টাকা দিতে পারবো কি না তাই চিন্তায় আছি। আমার ঘেরে কোমর পর্যন্ত পানি রয়েছে। তাহলে এখানে পানি গরম হচ্ছে কীভাবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু ছাইদ জানান, ভাইরাসের কারণে মাছ মরছে না। মাছ মরছে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে। চিংড়ির জন্য ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ভালো। তবে এর বেশি হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত চিংড়ি মাছের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। কোনো ভাইরাসের উপস্থিতি পাইনি। পানিতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরছে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন