শেষ সম্বল দিয়ে গড়ে তোলা হাঁসের খামারে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ইয়াকুব

558

হাঁসের খামার
দিনাজপুর থেকে: নিজেদের শেষ পুঁজিটুকু দিয়ে পাঁচশো হাঁসের বাচ্চা কেনেন মো. ইয়াকুব আলী ও তার স্ত্রী জিন্নাতুন বেগম। একেবারে নিজেদের সন্তানের মতো করে যত্ন করেন এগুলোর। ওই হাঁসের খামারেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।

ইয়াকুব ও জিন্নাতুন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা।

আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের জয়গঞ্জ-ঝাড়বাড়ী খেয়াঘাটের আত্রাই নদীর বালুচরে ছোট পরিসরে খামার করেছেন ইয়াকুব আলী ও তার স্ত্রী জিন্নাতুন বেগম। তারই পাশে ছোট্ট একটা টিনের ঘর। সেখানেই থাকেন ওই দম্পতি।

মাত্র একদিনের হাঁসের বাচ্চা কিনে সন্তানের মতই আদর যত্ন করে বড় করে তুলেছেন হাঁসের খামার। দিনরাত হাঁসের বাচ্চাগুলোকে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলছেন।

ইয়াকুব আলী বলেন, ‘‘আমার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়ে দুটির বিয়ে দিয়েছি। আমার ছেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়। আমরা স্বামী-স্ত্রী বৃদ্ধ মানুষ। আমাদের দেখাশোনা করার মত কেউ নেই। তাই আমাদের জীবনের যেটুকু পুঁজি ছিল তাই দিয়ে আমি ৫০০ হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার করি।’’

মাত্র দুই মাসে সেই হাঁসের খামারে লাভের মুখ দেখছেন ইয়াকুব আলী।

সারাদিন হাঁসের পিছনে সময় দেন ইয়াকুব আলীর স্ত্রী জিন্নাতুন বেগম। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই বয়সে অন্যের বাড়িতে কাজ করার মত শক্তি সামর্থ নেই। আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে বুদ্ধি করে হাঁসের খামার দেই। আত্রাই নদীতে দিনের বেলায় হাঁসগুলো পানিতে থাকে। বিকেল এবং সন্ধ্যায় হাঁসগুলোকে খামারে নিয়ে এসে খাবার দেই। প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা (একদিনের বাচ্চা) ৩০ টাকা করে কিনেছিলাম। মাত্র দুই মাসে সেই হাঁসের বাচ্চাগুলোর প্রতিটির দাম হয়েছে ১৮০ টাকা করে।’’

হাঁসের খামারে রোগবালাই সম্পর্কে ইয়াকুব আলী বলেন, ‘‘আমরা পাঁচশো হাঁসের বাচ্চা কিনেছিলাম। বর্তমানে সাড়ে ৪০০ হাঁস খামারে আছে। বাকিগুলো রোগে মারা গেছে। তবে নিয়মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ ও চিকিৎসায় বর্তমানে বাকিগুলো ভালো আছে।’’

এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমাদের দেশে হাঁসের মাংসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের দেশে খাকি ক্যামবেল, বেইজিং জাত হাঁস পালন বেশি হয়।’’

রোগ বালাই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘হাঁসের ডাক প্লেগ, ফাউল কলেরা, ডাক ভাইরাল হ্যাপাটাইটিস রোগ হয়। এসব রোগের সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।’’

ইয়াকুব জানান, হাঁসগুলো যত ডিম দেয়, তা বিক্রি করে সংসার চলে। ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে আরো বৃহৎ আকারে খামার গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে তাঁর।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন