নাটোরে ‘অ্যারেটর’ প্রযুক্তিতে মৎস্য চাষে আগ্রহ বাড়ছে

820

অ্যারোটর
নাটোর থেকে: দুষণমুক্ত পানির পরিবেশ নিশ্চিত করতে জেলায় মৎস্য চাষিদের মধ্যে ‘অ্যারেটর’-এর ব্যবহার ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে মাছ চাষে শুধু মাছের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়, পানি থাকে উপেক্ষিত। মাছের আবাসস্থল পানিতে মোনিয়াসহ অন্যান্য রাসায়নিক ও জীবাণুর বিষক্রিয়া, অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদি কারনে মাছের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে, বিদ্যুৎ বা সোলারের মাধ্যমে পুকুরের পানিতে মটর চালিত অ্যারেটরের পাখা ঘুরতে ঘুরতে পানিতে কম্পন তৈরি করে। ফলে পানিতে ফাইটো প্লাংটনের সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি হয় অক্সিজেন। অ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকযুক্ত পুকুরের নীচের পানি উপরে উঠে আসে এবং সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে মারা যায়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য কর্মকর্তা এবং দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মৎস্য চাষিদের অংশগ্রহনে নাটোর শহরতলীর দিয়ারভিটা এলাকায় একটি খামারে অ্যারেটর ব্যবহার করে মাছচাষের এক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদর্শনীতে এক একরের একটি মৎস্য খামারে অ্যারেটর ব্যবহার করে সাড়ে সাত মাসে রুই প্রজাতির মাছের উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করা হয়। সাতফুট গভীরতার পুকুরটিতে ৬৬৬ গ্রাম ওজনের পাঁচ হাজার পিস পোনা ছাড়া হয়েছিল। সাড়ে সাত মাস সময়ে চার লাখ ৬৩ হাজার টাকার নয় হাজার ১৭০ কেজি খাবার, আটহাজার চারশ টাকার সাতশ কেজি লবন, একলাখ ১৬ হাজার টাকা মূল্যে ১২ হাজার ৯১৬ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ বিল এবং শ্রম ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ ৭৫ হাজার টাকাসহ মোট উৎপাদন খরচ হয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

সাড়ে সাত মাসে প্রতিটি রুই মাছের গড় ওজন দুইকেজি হয়। প্রতি কেজি ২৬৬ টাকা হিসেবে বিক্রয় মূল্য ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ নীট মুনাফা ১৪ লাখ টাকা।

প্রদর্শনীতে অংশগ্রহনকারী নাটোরের মৎস্য চাষি গোলাম নবী, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশের নবীপুর এলাকার মৎস্য চাষি ডা. মো. হাফিজুর রহমান মিলন, ময়মনসিংহ জেলার মাসকান্দা ও ত্রিশাল এলাকার খামারী এ বি এম শামসুল আলম বাদল, যশোর জেলার চৌগাছার লস্করপুর এলাকার মৎস্য চাষী আবুল কাশেম মাছ চাষে অ্যারেটর ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন বলে জানালেন।

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের চারশ একরের খামারে মাছ চাষি আক্কাছ আলী বলেন, অ্যারেটর ব্যবহারে মাছ চাষে পানির অবস্থা ও মাছের বৃদ্ধি দেখলাম সরেজমিনে।

নাটোরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘এই জেলায় মৎস্য চাষিদের মাঝে অ্যারেটর-এর ব্যবহার বাড়ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফলগুলো রপ্ত করে মাছ চাষ করলে অল্প খরচে অধিক পরিমাণে নিরাপদ মাছ উৎপাদন সম্ভব। এতে মৎস্য উৎপাদন আরো বাড়বে।’’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-এর ফিশ, বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম বলেন, ‘‘অ্যারেটর-এর এখন বিশ্বের বিভিন্ন মাছ উৎপাদনকারী দেশের জনপ্রিয় প্রযুক্তি। এটি ব্যবহারের ফলে পানির গুনগত মান ভালো থাকে বলে গুনগত মানের নিরাপদ মাছ অধিক পরিমানে উৎপাদন সম্ভব। সীমিত আয়তনের জলাধারে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।’’

তিনি বলেন, ‘‘অ্যারেটর ব্যবহারের মাধ্যমে পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও শ্যাওলা জন্মাতে পারে না, মশার উপদ্রব্য থেকে রক্ষা হয়, অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিষক্রিয়া থেকে মাছের জীবন রক্ষা পায়। মাছ স্বাভাবিক খাবার খায় বলে অপচয় রোধ হয় ও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। অল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ সম্ভব হয়।”

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন