ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত জাতের গাভী নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি ঠিকমত পালন করতে না পারলে ডেইরি খামার লাভজনক তো হবেই না উপরন্তু পুঁজিও হারাবেন। তাই গাভী কেনার আগে অবশ্যই ভালো দুধ দেওয়ার লক্ষণবিশিষ্ট গাভীটিই নির্বাচন করতে হবে। কারণ দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা সব গাভীর এক রকম নয়। সুষম খাবার, উন্নত বাসস্থান, সঠিক পরিচর্যাসহ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লালন-পালন করার পরও শুধু গাভী নির্বাচনে ভুল করলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে না। আজ ভালো জাতের দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচনের কিছু লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খামারিদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
দেহের গঠন কেমন হবে:
দেহের আকার বড় হবে, পেট থাকবে ঢিলাঢালা, পা শিথিল, চওড়া কপাল ও মাথা ছোট একটি উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভীর বৈশিষ্ট্য। ভালো জাতের গাভীর শরীরের চামড়া থাকবে পাতলা, নরম ও আলগা থাকে। দুধেল গাভীর ত্বকে থাকে চাকচিক্য। বুক বেশ গভীর ও প্রশস্ত। সামনের ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকবে। পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে বড় হয়। গাভীর মুখগহ্বর ও নাসিকা প্রশস্ত হবে। উৎকৃষ্ট গাভীর চোখ সবসময় উজ্জ্বল হবে। দেহ তেমন চর্বিবহুল হবে না। দুগ্ধবতী গাভীর শরীর সাধারণত অপ্রয়োজনীয় পেশিমুক্ত থাকে।
গোঁজ আকৃতির দেহ:
ভালো জাতের গাভীর পেছনের দিক সামনের দিক অপেক্ষা প্রশস্ত হবে। তাই উন্নত দুগ্ধবতী গাভীকে পেছনের দিক থেকে গোঁজকৃতি দেখায়। প্রশস্ত চওড়া পাছা ও পেছনের পা দুটির মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক উন্নত গাভীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পেছনের পা দুটির মধ্যে পর্যাপ্ত ফাঁক থাকলে ওলান বড় হওয়ার সুযোগ থাকে।
গাভীর ওলান:
ভালো গাভীর ওলান বেশ বড়, চওড়া, মেদহীন এবং কক্ষগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। ওলান সামনে ও পেছনে সমভাবে প্রসারিত থাকে। ওলানের পেছন দিক সুডৌল ও প্রশস্ত হয়। পাশ থেকে ওলানের তলদেশ সমতল দেখায়। দুগ্ধবতী গাভীর ওলান স্পঞ্জের ন্যায় নরম থাকে যা দুধ দোহনের পূর্বে বড় দেখায় এবং পরে সংকুচিত হয়ে ঝুলে থাকে। অধিক মাংসল ও চর্বিযুক্ত ওলান ভালো নয়। এ ধরনের ওলানে দুধ ধারনের জায়গা কম থাকে।
ওলানের বাঁট:
তাছাড়া উৎকৃষ্ট গাভীর বাঁটগুলো প্রায় একই মাপের এবং সমান দূরত্বে থাকবে। বাঁটের আকার দোহন উপযোগী হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
দুধের শিরা:
উত্তম দুগ্ধবতী গাভীর পেটের নিচে ওলানের সঙ্গে সংযুক্ত সুস্পষ্ট শাখা-প্রশাখাযুক্ত দুধের শিরা থাকে।
গাভীর প্রকৃতি:
দুগ্ধবতী গাভী শান্ত, ধীরস্থির ও মাতৃভাবাপন্ন হয়। উন্নত দুগ্ধবতী গাভী সাধারণ ভীত প্রকৃতির হয়, দুধ দোহনকালে অস্থিরতা প্রকাশ করে না। এদের হাঁটাচলাও ধীর ও মন্থর প্রকৃতির হয়।
বয়স কেমন হবে:
সাধারণত একটি গাভী প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা ও দুধ উৎপাদন করে। সুতরাং গাভীর বয়স জানা আবশ্যক। তাছাড়া গাভীর প্রথম প্রসবে যেসব বিপদের সম্ভাবনা থাকে সেগুলো একবার প্রসবের পর দূর হয়ে যায়।
দুধ উৎপাদন :
সাধারণত পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদনকারী গাভী উৎকৃষ্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেক গাভী দুধ বেশি দিলেও দুধ পাতলা হয় এবং ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ কম থাকে। সুতরাং দুধে ফ্যাটের পরিমাণ যাচাই করে গাভীর উৎকৃষ্টতা বিচার করা প্রয়োজন। স্বাভাবিক ফ্যাটযুক্ত দুধ ঘন ও ঈষৎ হলদে বর্ণের হয়।
লেজ:
লেজ দেখেও ভাল জাতের গাভীর বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা যায়। ভালো জাতের গাভীর লেজ সবসময় লম্বা হয়। লেজের অগ্রভাগের চুলের গুচ্ছও বড় হয়।
বংশ :
বংশ ইতিহাস জেনেও দুধেল গাভীর বৈশিষ্ট্য যাচাই করা যায়। খনার বচনে আছে, ‘যেমন মা তেমন ছা’। তাই গাভীর মা-নানীর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা যাচাই করে নিতে পারলে উৎকৃষ্ট দুগ্ধবতী গাভী নির্বাচন ও মূল্যায়ন সহজ হয়।
ডেইরি খামার লাভজনক করতে চাইলে উন্নত মান ও জাতের গাভী নির্বাচন সর্ব অপেক্ষা গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ খামারির সাহায্য নিতে হবে। এসব মাথায় রেখে ডেইরি খামার করলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন