বরেন্দ্র মাটিতে বিদেশি ফল ‘মেলন’ চাষে সাফল্য

1007

লেমন001
ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার: বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুরের মাঠে ‘মেলন’ ফলের চাষ করে সাফল্য পেয়েছে চাষি মনিরুজ্জামান মনির। বিদেশ থেকে আমদানি হওয়া ফলটির চাহিদা দেশে চাষ করেও মেটানো সম্ভব।

দুই ধরনের নতুন ফল এবার চৈতন্যপুরের মাঠে চাষ হয়েছে। একটির রঙ হলুদ ও অন্যদির সাদা। প্রতিটি ফলের ওজন ১ কেজি থেকে ৩ কেজি হয়। এ ফল প্রধানত তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও ভারতে উৎপাদন হয়। এটিকে সুইট মাস্ক মেলন বা ক্যান্টালুপও বলা হয়।

অনেকেই এই ফলটাকে দেখলে তরমুজ মনে করে। তবে এটা দেশি বাংগি জাতীয় ফল। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশেও আস্তে আস্তে পরিচিতি বাড়ছে। দেশের নামিদামি হোটেলগুলোতে অতিথিদের চাহিদার তালিকায় ফলটি পাওয়া যায়। দেশে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার গ্রীষ্মকালীন ‘মেলন’ ফল আমদানি করা হয়। যার পুরোটাই আসে তাইওয়ান, থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে এ ফলের উৎপাদন হচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার আমদানি নির্ভর বাজারে কিছুটা হলেও যোগান দিতে সক্ষম হয়েছে গোদাগাড়ীর সবজিগ্রাম খ্যাত উৎপাদিত ‘মেলন’।

রাজশাহীর মহিষবাথান এলাকার মনির মেলন চাষ করেছেন। তিনি ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, যে ফলটা পেকে হলুদ রঙ ধারণ করেছে, মেলনকে সৌদি আরবে ‘শাম্মাম’ বলা হয়। সাদা রঙের ফলটাকে ‘রক মেলন’ বলা হয়। পাকা ফল কাটলে ভেতর গোলাপি রঙের। খেতে মিষ্টি ও সুন্দর ঘ্রাণ আছে। কাঁচাতে খেতে শশার মত। মনিরুজ্জামানের নিজের কোনো জমি নেই। নতুন ফসল চাষের বিষয়ে তার খুব আগ্রহ। অন্যের জমি লিজ নিয়ে সে তার কৃষি খামার গড়ে তুলেছে।

দুই বছর ধরে তিনি ‘মেলন’ চাষ করেছেন। প্রথম বছর সফল হতে না পারলেও দ্বিতীয় বছর এবার তিনি ভাল সফল হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, এ দুই ধরনের ফলই মেলন। হলুদ রঙের ফলটাকে ইংরেজিতে শুধু ‘মেলন’ বলা হয়। আর সাদা রঙেরটাকে সুইট মাস্ক মেলন বা ক্যান্টালুপ বলা হয়। বাংলায় এর কোনো নাম নেই। অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল নতুন এই ফল চাষ করলে চাষিরা লাভবান হবে।

লেমন001

তিনি বলেন, গোদাগাড়ীতে মনিরুজ্জামান নতুন ধরনের ফসল ও ফলের চাষ করে থাকেন। তিনি মেলন চাষ করেছেন। এতে তাঁর বেশ মুনাফা হয়েছে।

চৈতন্যপুরে মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আদিবাসী দিনমজুর চন্দনা রানী খেতের পরিচর্যা করছেন। তরমুজের গাছের মতোই লতানো গাছ বাঁশের কাঠি বেয়ে মাছায় উঠে গেছে। ফল ধরে মাচায় ঝুলছে।

মনিরুজ্জামান সাথে, গত বছর মেলন চাষ করতে গিয়ে তিনি ব্যর্থ হন। এবার সফল হয়েছেন। মেলন চাষে তার ১২ কাঠা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ, এক হাজার মেলন হয়েছে। প্রতিটি প্রায় দুই কেজি ওজনের হয়েছে। এবার তার ভালো মুনাফা হয়েছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি বীজতলায় এর চারা রোপণ করেছিলেন। ৭৫ দিনের মাথায় ফল উঠতে শুরু করেছে। এটি একটি লাভজনক ফসল হবে। ঢাকার সুপারমার্কেটগুলোতে এর চাহিদা রয়েছে। মনিরুজ্জামান তার উৎপাদিত ফল ঢাকায় বিক্রি করে।

গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের মধ্যে উঁচু বরেন্দ্র নামে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা। প্রচ- খরাপ্রবণ এই এলাকায় চাষিরা শুধু বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের চাষ করতেন। শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের আওতায় এ এলাকার কৃষকেরা এখন ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফল ও ফসলের আবাদ করছেন। এ এলাকায় এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জমি খালি পড়ে থাকে। গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর এলাকায় মনিরুজ্জামান জমি ইজারা নিয়ে এই অসময়ে নানা রকম নতুন জাতের ফসল ও ফলের চাষ করে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আরাফাত/ মোমিন