জাভা স্প্যারো পালন করে বাড়তি আয়

1785

জাভা
পাখি পালন অনেকের শখ। আবার অনেকে পাখি পেলে বাড়তি আয় করেন। খাঁচায় পালন করা যায় এরকম পাখির মধ্যে জাভা স্প্যারো অন্যতম।

এই পাখি পালন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শৌখিন পাখি পালক শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, জাভা স্প্যারো, অনেকে জাবা ফিঞ্চ নামে চেনেন। খাঁচার পাখি বাণিজ্যের ফলে বিশ্বজুড়েই এই পাখি পালন চালু রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার বালি এলাকায় বসবাস করা এই পাখি খাঁচায় পালন করা হলেও তাদের নিজ এলাকায় এরা দলবদ্ধভাবেই বসবাস করে।

এই পাখি বেশ চঞ্চল। শুধুমাত্র পুরুষ জাভা গান করে। ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই এরা গান করা শুরু করে। যে পাখিটি গান করবে সে পাখিটিকে আলাদা করে একটি প্লাস্টিকের রিং পায়ে পরিয়ে দিলে স্ত্রী পুরুষ চেনা সহজ হয়।

একই রংয়ের পাখির বাম পায়ে রিং এবং অন্য রংয়ের পাখির ডান পায়ে রিং পরাতে হয়। তবেই সনাক্তকরণে সুবিধা হয়। স্ত্রী ও পুরুষ ভেদে শব্দের মধ্যে তারতম্য লক্ষ করা যায়। প্রজনন উপযোগী পুরুষ জাভার চোখের বৃত্ত গাঢ় রংয়ের হয়। জাভা পাখির ডাক অনেকটা ছিপ্‌ছিপ্‌ছিপ্‌ছিপ্‌ এর মতো শোনা যায়। আর শুধুমাত্র পুরুষ জাভাই গান করে।

ডিমের পরিমাণ: ৪টি থেকে ৬টি। কখনও ৮টি পর্যন্ত হতে পারে।

ডিম ফোটার সময়কাল: ১৪ দিন পর থেকে ১৮ দিন।

বাচ্চারা উড়তে সক্ষম: ২১ থেকে ৩১ দিন।

প্রথম পালক খসা বা ঝরা: ৩ মাস থেকে ৫ মাস।

পূর্ণাঙ্গ বয়স: ৬ থেকে ৭ মাস।

জাভা স্প্যারো লম্বায় ১৫ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার হয়। উপরের অংশ থেকে শুরু করে বুক পর্যন্ত ধূসর বর্ণের। পেট গোলাপি, সাদা গলা, কালো, চোখের বৃত্ত লাল, পা গোলাপি এবং চিকন লাল ঠোঁট। সাদা জাভা দেখতে খুবই সুন্দর।

অপ্রাপ্ত বয়সের জাভা স্প্যারোর উপরের অংশ ধূসর এবং নিচের অংশ ফ্যাকাসে বাদামি। খুবই তরুণ অবস্থায় এদের মতল ঠোঁটে কালো-গোলাপি হয়। এরা গাছে ও পাকাবাসায় বাসা বাঁধে।

ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে অগাস্ট পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। বছরে চারবার করে এরা সর্বোচ্চ আটটি ডিম দেয়। ডিমের রং সাদা।

স্ত্রী জাভা প্রতিদিন সকাল বেলায় ১টি করে ডিম দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৪ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৩১ দিন বয়স হলেই উড়তে পারে। বাচ্চা পাখি প্রজনন উপযোগী হতে ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর কমও হতে পারে।

জাভা পাখির দাম বেশি বলেই শৌখিনভাবে না পুষে বেশিরভাগই বাণিজ্যিকভাবে পুষে থাকেন।

এক জোড়া পাখির দাম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। বিক্রেতারা আরও বেশি চেয়ে থাকেন। বাচ্চা পাখি কিনলে কম টাকায় পাওয়া যায়। তবে কেনার সময় খুব বিচক্ষণ হতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে সঠিক বয়স এবং স্ত্রী-পুরুষ সনাক্তকরণ ও কী ধরনের খাবার খায় ইত্যাদি সম্পর্কে অবশ্যই জেনে নিতে ভুল যেন না হয়।

জাভা-স্পেরো
পালনের সঠিক পদ্ধতি:

খাঁচার দাম ২শ’ আড়াইশ টাকার মধ্যে। খাবারের পাত্র ২০ টাকা। পানির পাত্র ১০ টাকা। ডিম পাড়ার হাঁড়ি ২৫ টাকা। বসার জন্য কাঠের দণ্ড সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও দড়ি ঝুলিয়ে দিলে আরও ভালো।

ডিম পাড়ার জন্য খাঁচার ভিতরে নারকেলের খোসা দিতে হয়। হাঁড়িটি খাঁচার এক কোণে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। এর মধ্যে শুকনা দূর্বাঘাস বা নারকেলের ছোবড়া বা শুকনা যে কোনও ঘাস বা শুকনা পাতা বা শুকনা খড় দিলে ভালো।

হাত দিয়ে ভালো করে বাসার মতো করে বানিয়ে দিলেও চলে। কারণ এখানেই ওরা ডিম পাড়বে। খাঁচার মেঝেতে চিকনজাতীয় বিভিন্ন কাঠি বা খরের টুকরা ফেলে রাখলেও এগুলো নিয়ে সুন্দর করে বাসা তৈরি করে জাভা।

একটু যত্ন নিলেই দেখবেন, শখের জাভা পাখি ৪টি থেকে ৮টি ডিম দিয়েছে। শখের বসে একদিন আপনি পেতে পারেন ৫/৬টি বাচ্চা। তখন প্রয়োজন হবে আরেকটি খাঁচা। কারণ আলাদা করতে হবে বাচ্চাগুলোকে।

মাঝে মাঝে পাখিদের রোদে রাখতে হয়। রোদের অভাবে অনেক সময় মুখ থুবরে বসে থাকে। তাই রোদ পোহাতে দিতে হয়। সকাল বেলায় রোদ পায় এবং প্রচুর আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় পালন করা ভালো।

খাবার:

এদের কাছে সব সময়ের জন্য পানি দিয়ে রাখতে হয়। ধান, চিনা ও কাউনজাতীয় খাবার এরা খেয়ে থাকে। চীনাবাচাম, মুরগির সিদ্ধ ডিম, বিস্কুটগুঁড়া, পানিতে মিশানো মধু বা দুধ পাউরুটি ভিজিয়ে দিলে বেশি পছন্দ করে।

ছোট ছোট ধান ও ভুট্টা ভাঙা দেওয়া যেতে পারে। গ্রিট, সমুদ্রের ফেনা, মিনারেল ব্লক ও ভিটামিন সিরাপ বা ভিটামিন ট্যাবলেট পানিতে মিশিয়ে বা পাউরুটির সঙ্গে খাওয়ানো যেতে পারে। এগুলো নিউমার্কেট ও পাখির দোকানে পাওয়া যায়। এসব মিনারেল মুড়িগুঁড়া করেও মিশিয়ে দিতে পারেন।

সবুজ শাকসবজি ও ডিমের খোসা দেওয়া যেতে পারে। তবে বাজারিগার পাখি এ ধরনের খাবার বেশ খায়। সব ধরনের পাখির বেশি পরিমাণে চর্বি হলে প্রজননে বাঁধা আসবে। তাই পানিতে বা পাউরুটিতে মিশিয়ে পরিমাণমতো সাফি সিরাপ এক, দুই সপ্তাহ পর্যন্ত দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রজননের সময় সিনকারা সিরাপ পরিমাণমতো পানি, পাউরুটি বা বিস্কুটে মিশিয়ে এক, দুই সপ্তাহ পর্যন্ত দিলেও মন্দ হবে না।

রোগ ও সাবধানতা:

সাধারণত ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই প্রতিরোধক ট্যাবলেট বা সিরাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। পানিতে সপ্তাহে দুই, তিন দিন ২-৩ ফোটা লেবুর রস বা ভিনেগার দিলে ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কলা, লবণ এই ধরনের খাবার কখনও দেওয়া যাবে না। সূত্র: অন্তর্জাল।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন