সবজি চাষেই ভাগ্য বদলে গেছে রশিদুলের

438

রশিদুল’
জমিতে শসা, লাউ, করলা, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন নীলফামারীর রশিদুল ইসলাম (৩৭)। এ বছর নিজের ও বর্গাসহ প্রায় ১২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেন জলঢাকা উপজেলার হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের এই কৃষক। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় দুই দফায় সবজি তুলেই তিনি পেয়েছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। সবজি চাষেই ভাগ্য বদলে গেছে রশিদুলের।

হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের মাঠে গিয়ে রশিদুলের দৃষ্টিনন্দন ফসলের সমারোহ লক্ষ্য করা যায়। মোটা নাইলন সুতা ও বাঁশের ফালি দিয়ে তৈরি করা মাচার নিচে ঝুলে আছে বাহারি রঙের শসা, লাউ, করলা, চিচিঙ্গা, কাকরোল ও মিষ্টিকুমড়াসহ নানা জাতের সবজি।

রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৬ সালে স্থানীয় সিনজেন্টা ফারমার্স ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার (এসএফএসএ)-এর সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে, তাদের থেকে চারা কিনি। প্রথম বছর পরীক্ষামূলকভাবে ৪০-৪৫ শতক জমিতে শসা, লাউ, করলা, কাকরোল, চিচিঙ্গা ও চালকুমড়া আবাদ করি। ওই বছর সার, বীজ, সেচ, পরিচর্যা ও পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তারপর জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকি। এ বছর নিজের ও বর্গাসহ প্রায় ১২ বিঘা জমিতে সবজির চাষ করি। প্রতি মৌসুমে বিঘা প্রতি প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এক মৌসুমে ৬-৭ বার সবজি তোলা যায়। এবার সবজির বাম্পার ফলনও হয়েছে, আগাম সবজি বিক্রি করে দামও পেয়েছি ভালো। দুই দফায় সবজি তুলে প্রায় তিন লাখ টাকা বিক্রি করেছি।’তিনি বলেন, ‘এখন আর সবজি নিয়ে বাজারে যেতে হয় না। পাইকাররা গ্রাম থেকেই কিনে নিয়ে যান।’

ওই এলাকার শ্রমিক পার্বতী রানী (৪০) ও ঝলমলি রায় (৪৫) বলেন, আগে এলাকায় কাজ পাওয়া যেত না। রশিদুল ভাই সবজি বাগান করার পর থেকে কাজের অভাব নেই। দৈনিক সাড়ে তিনশ’টাকা মজুরিতে আমরা কাজ করি। প্রতিদিন ১০-১২ জন শ্রমিক রশিদুল ভাইয়ের ক্ষেতে কাজ করেন।

স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে রশিদুল কোনও ধরনের সহযোগিতা পান কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি অভিযোগ করেন, ‘কৃষি অফিসের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেননি। তারা সহযোগিতা করলে সবজি ক্ষেতের রোগ-বালাই দমনে আগাম পদক্ষেপ নেওয়া যেত। এতে ফলন ভালো হতো। লাভও বেশি হত।’

তবে রশিদুলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সবজির পুষ্টিগুণ উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া কেনাবেচার ব্যাপারে কৃষকদের সহযোগিতা করতেও কাজ করছি। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকেন। রশিদুলের মতো যারা উদ্যোক্তা রয়েছেন আমরা তাদের সার ও বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সরবরাহ করে থাকি। পাশাপাশি নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এবার জেলায় পাঁচ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নামেন কৃষি বিভাগ। তাতে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৬০৬০ মেট্রিকটন সবজি। আগামীতে ফলন আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন