ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র এলাকায় মাল্টা ও মিষ্টি কমলা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব এলাকায় আগে যেখানে শুধু আম-ধানসহ অন্যসব ফসল চোখে পড়তো, বর্তমানে তা ছাড়িয়ে মাল্টা বাগান চোখে পড়ছে বেশি। এসব বাগানে থোকায় থোকায় এখন সোভা পাচ্ছে সবুজ মাল্টা। অন্য ফলের চেয়ে উৎপাদন খরচ কম এবং লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা মাল্টাচাষে ঝুঁকেছে কৃষক।
হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদরা জানান, আমদানি করা ভারতীয় মাল্টার চেয়ে আমাদের উৎপাদিত মাল্টা উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু ও অন্য সব মৌসুমি ফলের চেয়ে এটি লাভের ব্যাপকতা বেশি হওয়াই বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষীরা দিনে দিনে মাল্টা চাষে ঝুঁকছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার ও জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে জেলায় মাত্র ২ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হয় ৫ বিঘা। গত বছর ২০১৫ সালে বেড়ে মাল্টা চাষ হয় ১২ বিঘা জমিতে। ২০১৬ সালে জেলাই মাল্টা চাষ হচ্ছে ৯৬ বিঘা জমিতে। আর ২০১৭-২০১৮ সালে তা বিস্তার হয়ে চাষ হচ্ছে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে। এ হিসাব শুধু চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলার। এছাড়াও নওগাঁ ও রাজশাহী জেলাতেও বেড়েছে মালটা চাষ।
বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম রোড বুলুনপুর গ্রামের আকবর আলী। তার বাগান প্রায় ৬ হাজার মাল্টা গাছ রয়েছে। গত বছর থেকে ফল পেতে শুরু করেছেন।
মাল্টা চাষী আকবর ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, ধানসহ অন্য ফসল করে লোকসান গুণতে হচ্ছিল। তাই তিন বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের কৃষিবিদের পরামর্শে তার ৫০ বিঘা জমি পুরোটাই মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। গত বছর থেকে অল্প পরিসরে ফলও পেতে শুরু করেছেন তিনি। চলতি বছর ব্যাপক হারে গাছে মাল্টা এসেছে। সব মাল্টা বাজারে বিক্রি করতে পালে তিন বছরের লোকসান এ বছরেই উঠে আসবে বলে আশা তার।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা গ্রামের মিঠু শেখ নামের এক চাষী প্রায় তিন বিঘা জমিতে মাল্টা চাষাবাদ করছেন। মিঠু শেখ জানান, তার বরেন্দ্র অঞ্চলে সব চেয়ে উঁচু জমি ছিল। সেখানে পানির ব্যবস্থা না থাকায় ভাল ভাবে ধানসহ অন্য ফসল উৎপাদন করতে পারতেন না। তাই কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সেই তিন বিঘা জমিতে তিন বছর আগে মাল্টা চাষ শুরু করেন। গত বছর থেকে মাল্টা ধরা শুরু হয়েছে। এ বছরও আরো বেশি মাল্টা ধরেছে। তিনি চলতি বর্ষা মৌসুমে আরো পাঁচ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগার করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবঞ্জের আকবর আলী আর তানোরের মিঠু শেখই নয়, বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিতি নাচোল, রহনপুর, নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী উপজেলায় শত শত কৃষক এখন মাল্টা চাষ শুরু করেছেন।
তানোর উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সমশের আলী ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টা গাছগুলোর উচ্চতা ও ফলন দেখে মনে হচ্ছে আগামীতে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টা চাষের আগাম বার্তা দিচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান জার্মপ্লাজম অফিসার জহুরুল ইসলাম ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, ২০১৩ সালে মতিউর রহমান নামের এক কৃষক কে প্রথম ২ বিঘা জমিতে মাল্টা চারা প্রদর্শনী জন্য দেয়া হয়। এর এক বছর পরেই সে ফল পেতে শুরু করে। তার এই সফলতা দেখে জেলার অনেক কৃষক মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলাতেই প্রায় ৫০০ বিঘা জমি মাল্টা চাষ হচ্ছে।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক জমিতে সেচের অভাবে ফসল উৎপাদন করা যায় না। সেসব উচুঁ ও পতিত পড়ে থাকা জমিতে মাল্টা চাষে কৃষদের আরো বেশি করে উৎসাহ জুগানো যেতে পারে। কারণ মাল্টা গাছে পানি খরচ নাই বললেই চলে।
সর্বপরি আরো অধিকহারে মালটা চাষের সম্প্রসরণ করা গেলে বিদেশ থেকে আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় অর্থের সাশ্রয় হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আরাফাত/ মোমিন