বিষাক্ত আগাছা পার্থেনিয়ামের কারণে ফসলের উৎপাদন কমছে প্রায় ৪০ শতাংশ

1057

পার্থেনিয়ামে

ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : অনেকটা ধনে গাছের মতো দেখতে ঝোপের মতো হয়ে থাকে। পাতা সবুজ এবং ফুল গুলি সাদা। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে, ঘাটে, পথে ছড়িয়ে পড়েছে এ ধরনের গাছ। সাধারণ আগাছা হলে কথা ছিল না। কিন্তু এগুলো এক ধরনের বিষাক্ত আগাছা। যা মাটির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে মানব শরীর ও গৃহপালিত পশুর জন্য চরম হুমকি।

রাজশাহী শুধু না সারা দেশেই এ আগাছা ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পার্থেনিয়াম আগাছা জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমে যায়। যা আগামীতে কৃষিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে কৃষিবিদরা আশঙ্কা করছেন।

উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় ১ থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এ সময়েই তিনবার ফুল ও বীজ হয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বীজের জন্ম হয়। স্থানীয় ভাবে একে গাজর ঘাসও বলে। বৈজ্ঞানিক নাম ‘পার্থেনিয়াম হিস্টেরোফোরাস’।

কৃষিবিদরা জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে একটু বর্ষা পেলেই এই গাছগুলো সবুজ ডগমগে হয়ে রাস্থার ধারে বড় হয়ে ওঠে। পার্থেনিয়াম মূলত দেখা যায় মেক্সিকো, আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশে সহ বিভিন্ন দেশে। রাস্তার ধারে, বাড়ির আশপাশে, বন-জঙ্গলে বা ফসলের মাঠে এই গাছ হয়ে থাকে।

এর বীজ খুবই ছোট। সাধারণত গোবর, গাড়ির চাকা, পথচারীদের জুতা, সেচের জল ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে। এই গাছ বিদেশ থেকে আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে।

নওগাঁর মান্দার এলাকার কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, বর্ষার শুরুতে তার জমিতে প্রচুর পরিমানে এ আগাছা জন্মে। সাধারণ আগাছা মনে করা হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে জানতে পেরে এখন রীতিমতো আতঙ্কিত হচ্ছি।

রাজশাহীর তানোর এলাকার কৃষক কামাল হোসেন ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, এ গাছ সম্পর্কে তার আগে কোন ধারনা ছিল না। এ বিষয়ে আরো বেশি প্রচারের প্রয়োজন আছে। তা না হলে কৃষি ও জীবন দুটোই হুমকির মুখে।

পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। পার্থেনিয়ামে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চরক্তচাপে ভুগতে পারে। দশ মিটার দূর থেকেও এই আগাছাটির ফুলের রেণু মানুষের এলার্জি, হাঁপানি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। পার্থেনিয়াম আগাছা যুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।

পার্থেনিয়ামে002

এই গাছ খেলে গাভীর দুধ তিতা হয়, যা দীর্ঘদিন পান করলে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ও ফসল উভয়ের ক্ষতি করে। পার্থেনিয়ামের রেণু বাতাসে মিশে টমেটো, মরিচ ও বেগুনের ফুল ঝরিয়ে দেয়। এই গাছ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণের ফলে ডাল জাতীয় ফসলের গাছের নাইট্রোজেন তৈরিতে সহায়তাকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়।

কৃষিবিদরা জানিয়েছেন, পার্থেনিয়াম দমনে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এই আগাছার পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। গাছ কেটে গভীরগর্তে পুতে ফেলা যেতে পারে। কীটনাশক ব্যবহার করেও আগাছা দমন করা যেতে পারে। চারা অবস্থায় গাছগুলোকে উপড়ে ফেলা যেতে পারে। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন