কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ শতাংশ জোগান দিচ্ছে কৃষি খাত। অথচ সেই কৃষি খাতে ঋণ দিতে অনীহা ব্যাংকগুলোর। এবার ব্যাংকগুলো যে ঋণ প্রদান করবে তার মাত্র ২ শতাংশ কৃষি খাতে দেওয়ার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল মঙ্গলবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করা হয়। এতে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাত ঋণ পাবে মাত্র ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেন ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান। এ সময় নির্বাহী পরিচালক অশোক কুমার দে ও মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা বিগত বছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮.৩৩ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থবছরে মোট ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৪ জন কৃষক কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছে। যার মধ্যে নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের (এমএফআই) মাধ্যমে ১৬ লাখ এক হাজার ৮৫৬ জন নারী প্রায় সাত হাজার ১৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। ওই অর্থবছরে ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ৩২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঋণ পেয়েছেন। চর ও হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৯ হাজার ৯৫০ জন কৃষক প্রায় ৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতে মোট ঋণ দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ৯১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত পেয়েছে ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে মোট ঋণের মাত্র ২.০৩ শতাংশ পেয়েছে কৃষি খাত। গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ১২.১৬ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ঋণ প্রবাহ আরো বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে কৃষি খাত।
মোট ঋণের তুলনায় কৃষি খাতে ২ শতাংশ ঋণ দেওয়ার বিষয়ে এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া সম্ভব নয়। ভারতের নীতিমালায় কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও তাদের বিষয়টি ভিন্ন। আমরা আমাদের মতো করে কার্যকরভাবে কৃষি খাতে ঋণ দিচ্ছি। কোনো ব্যাংক চাইলে বেশি ঋণ দিতে পারে। কিন্তু নীতিমালা পরিবর্তন করে ২ শতাংশের বেশি করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০.৬৬ শতাংশ বেশি। কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু দুর্বল ব্যাংক ছাড়া সবাই কৃষিঋণে অংশগ্রহণ করছে। তবে মধুমতি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা। এছাড়া কৃষকদের কাছে কৃষিঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে বর্তমান নীতিমালা ও কর্মসূচিতে বেশ কিছু সময়োপযোগী বিষয় সংযোজিত হয়েছে। এই নীতিমালায় সংযোজিত বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এমএফআই লিংকেজের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব শাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির নির্দেশনা প্রদান। সূত্র: কেকে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন