প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের পরিমান বাড়াতে পারলে বাংলাদেশের মানুষও দীর্ঘাকায় ও অধিক মেধাসম্পন্ন হতে পারবে। শুক্রবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ‘প্রোটিন ফর অল’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা।
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি)। পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে এবং সেই সাথে বেড়েছে প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের পরিমান।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন- স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রোটিন ইনটেকের পরিমান অনেক কম ছিল। প্রাণিজ আমিষ গ্রহণের পরিমানও ছিল অনেক কম। মাথাপিছু মুরগির মাংস গ্রহণের পরিমান ছিল বছরে মাত্র এক থেকে দেড় কেজি; ডিম খাওয়ার পরিমান ছিল বছরে গড়ে মাত্র ২০ থেকে ২৫টি। আয় বৃদ্ধি ও সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ পরিমান বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ৬.৫ কেজি মুরগির মাংস এবং ৯০টির ওপরে ডিম খাচ্ছে।
চট্টগ্রামের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন- ১৯৬০ সালের দিকে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪২-৪৫ বছর কিন্তু বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছরের বেশি। আগে লম্বায় আমরা বেশ কিছুটা খাটো ছিলাম, বর্তমানে উচ্চতা বেড়েছে। অনেক সচেতন ও সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরা এখন বেশ লম্বা কারণ তারা শর্করা জাতীয় খাদ্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাণিজ আমিষের পরিমান বাড়িয়েছেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, আমাদের শহরের অনেক ডাক্তারেরও প্রোটিন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা নেই। তিনি বলেন, পোল্ট্রি আমাদের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করছে। যারা এ শিল্প স্থাপন করেছেন অবদান রেখেছেন তাঁরা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন- পর্যাপ্ত পরিমান প্রোটিন গ্রহণ করলে আমরাও হতে পারব দীর্ঘাকায় ও মেধাসম্পন্ন জাতি।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল বলেন- টেকসই উন্নয়ন ঘটাতে হলে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন ২০৪১ সালের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন বর্তমান সরকার। যার প্রথম ধাপ হচ্ছে রুপকল্প ২০২১, এরপর মধ্যম আয়ের দেশ, তারপর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন এবং এরপর প্রত্যাশার উন্নত বাংলাদেশ। তিনি বলেন আমরা গর্বিত বাঙ্গালী হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই।
চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মিসেস হাসিনা আক্তার বলেন, শুধু খেলেই হবেনা। কতটুকু বডি ওয়েটের জন্য কতটুকু শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ ইত্যাদি গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে জ্ঞান থাকাটা খুবই জরুরি। সেমিনারে আমন্ত্রিত বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের আওতাধীন বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- আপনারা ছোটবেলা থেকেই আমাদের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। প্রতিদিন একসাথে প্রচুর মানুষের সাথে আপনাদের কথা হয়। সাধারন মানুষ আপনাদের কথা শোনেন। তাই খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক তথ্য আপনাদের মাধ্যমেও যদি প্রচারিত হয় তবে সাধারন মানুষ অনেক উপকৃত হবেন।
ইউএসএসইসি’র কনসালট্যান্ট মি. পাওয়ান কুমার বলেন- এক সময় নেদারল্যান্ডসের মানুষেরা এখনকার মত এত লম্বা ছিল না। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারনে তাদের শারিরীক গঠনে পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন- পশ্চিম ইউরোপের দেশ মোনাকোর মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। চীনের একজন মানুষ ৭৫ বছর বয়সেও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন- কারন তাঁরা পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করেন। তাঁর মতে, প্রোটিনের অভাব হলে মানুষ অকালেই বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- ইসলামী ফাউন্ডেশন চটগ্রাম এর পরিচালক আবু আহসান মো. বোরহান, বিশিষ্ট রন্ধন শিল্পী কল্পনা রহমান ও রহিমা সুলতানা রীতা।প্রোটিন ফর অল সেমিনারটি শুরুর আগে একটি রন্ধন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম দিয়ে নানান পদের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার তৈরি করেন প্রতিযোগিরা। প্রতিযোগিতায় সেরা রাঁধুনি হিসেবে প্রথম পুরস্কার পান চট্টগ্রামের পূর্ব মাদার বাড়ি সদরঘাটের সাজিয়া আফরিন, দ্বিতীয় হন খাগড়াছড়ির মানিক ছড়ির আকলিমা রহমান এবং তৃতীয় হন আমবাগান এলাকার সাদিয়া তারান্নুম। প্রথম পুরস্কার বিজয়ী ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় বিজয়ী ২০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় বিজয়ী ১০ হাজার টাকার প্রাইজমানি পান। এছাড়াও প্রত্যেক প্রতিযোগিকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ