সবে মাত্র শরৎ কাল আর এখনই শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে। শীতকালীন সবজি চাষে যশোরে ২৫ হাজার হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লালশাক, পালংশাক, সবুজসহ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উৎপাদন শুরু হবে।
সবজি চাষে কৃষকরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। যশোরের সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবৎপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালীসহ মাঠ জুড়ে এখন শীতকালীন সবজির সমারোহ।
যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকার কৃষক সামসুজ্জামান জানান, এবার অনাবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজি চাষে একটু দেরি হয়েছে। অন্যান্যবার এমন সময়ে বাজারে সবজি তোলা হতো। আগেভাগে সবজি তোলা হলে দাম পাওয়া যায় ভালো। তবে এবার দেরিতে সবজি চাষ হলেও এখন পুরোদমে সবজি চাষ চলছে। তাতেও সবজি চাষে লাভবান হওয়া যাবে।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার সবজি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবজি পরিচর্যা করার সময় চাষি আব্দুল গফুর বলেন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের কারণে সময়মতো শীতকালীন সবজি চাষ শুরু করা যায়নি। যে কারণে একটু দেরি হয়েছে। তারপর গত সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা এখন পুরোদমে চাষ করছি।
তিনি জানান, দেড় বিঘা জমিতে কপি ও এক বিঘা জমিতে লাল শাকের চাষ করেছি। আশা করছি, এবারও ভালো লাভ করতে পারব।
চাষি রহমত আরও জানান, শীতকালীন সবজি আগেভাগে বাজারে তুলতে চাই। এজন্য আগে থেকেই সবজি চাষ করার চেষ্টা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল দাম পাব।
মানসম্মত কীটনাশকের অভাবে কপি চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাবি করে নোঙরপুর মাঠে কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, যশোর অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ জমিতে কপির আবাদ করা হয়। কিন্তু কপির ফলন আসার সময় ডায়মন্ড ব্যাক মথ নামে একটি মারাত্মক পোকা সর্বনাশ করে দেয়। এসব পোকা দমনের জন্য নানা ধরনের কীটনাশক ছড়ানো হলেও তাতে কোনো কাজে আসে না। কৃষি বিভাগ যদি এ সময় সহযোগিতা করে তাহলে সবজি চাষিরা মারাত্মক উপকৃত হবেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাদ আরিফ জানান, কপি ক্ষেতে ডায়মন্ড ব্যাক মথ নামে এ পোকার আক্রমণ দীর্ঘকাল ধরে। এ পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি ফেরোমেন সেক্স ট্র্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে আবু সাদ আরিফ আরও জানান, দেশের ৬০ ভাগ সবজি যশোর থেকে উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলের সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যায়।
গত কয়েক বছর ধরে ডায়মন্ড ব্যাক মথ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি ফেরোমেন সেক্স ট্র্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে সবজি চাষিরা ব্যাপক উপকৃত হয়েছেন। এবারও কৃষকদের ডায়মন্ড ব্যাক মথ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতাও করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান জানান, সবজি জোন হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চলের চাষিরা আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন। ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে তারা সবজি বাজারে তুলবেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এবার শীতকালীন সবজি চাষে বাম্পার ফলন হবে।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, যশোর অঞ্চলে এবার ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষে টার্গেট নেওয়া হয়েছে। লক্ষমাত্রাও পূরণ করা সম্ভব হবে। অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হওয়ায় সবজি চাষে এখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারবেন এবং তাতে কৃষকরা লাভবান হবেন। আর সবজি চাষকে লাভজনক করে তুলতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। পোকা দমনে বালাই নাশক পদ্ধতি অনুসরণের জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ