ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি

850

ছগিল

একটি ছাগীকে প্রাকৃতিক নিয়মে পাঁঠা দিয়ে প্রজনন করালে একবারে যে পরিমাণ বীজ ব্যবহৃত হয়, একই পরিমাণ বীজ দিয়ে হিমায়িত কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সাহায্যে পঁচিশ থেকে ত্রিশটি ছাগীকে প্রজনন করানো যায়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফল পাওয়া যায় প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এই হিমায়িত বীজ ব্যবহার বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছে বাকৃবি’র পশুপালন অনুষদের পশুবিজ্ঞানীরা।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এম. এ. এম. ইয়াহিয়া খন্দকার আশা করছেন, বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যাবে। ইউএসডিএ’র অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গলের কৃত্রিম প্রজননে গত দুই বছর গবেষণা চালিয়ে আসছে পশুপালন অনুষদের পশু প্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া খন্দকার প্রকল্পটির পরিচালক এবং পশুপালন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বিকল্প পরিচালক হিসেবে গবেষণা পরিচালনা করছেন।

ব্ল্যাক বেঙ্গলকে পৃথিবীর সেরা জাতের ছাগল হিসেবে অভিহিত করা হলেও আন্ত:প্রজনন ও অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্খাপনার কারণে ছাগলের এ দেশী জাতটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উপলব্ধি থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাকৃবিতে কৃত্রিম প্রজননের প্রকল্পটি শুরু হয়।

গবেষক জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৭টি সুস্খ-সবল পাঁঠা এবং শতাধিক ছাগী সংগ্রহ করার মাধ্যমে শুরু হয় তাদের গবেষণা। গবেষণা ফিল্ডে সংগৃহীত পাঁঠার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নত জাতটি বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত পাঁঠার বীজের গুণাগুণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। বীজ প্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলে তা হিমায়িত করে এআই গানের মাধ্যমে ছাগীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে উন্নত জাতের পাঁঠা উৎপাদন করা হয়।

এভাবে প্রকল্পটির মাধ্যমে দ্রুত ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরো জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে একটি পাঁঠার সাথে একটি ছাগীর প্রজননের সময় ছাগী যে পরিমাণ বীজ গ্রহণ করে তার মাত্র কয়েক শতাংশ কাজে লাগে, বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু হিমায়িত বীজ দিয়ে কৃত্রিম প্রজননে ওই পরিমাণ বীজ অনেক ভাগে ভাগ করা হয়, যা ২০ থেকে ২৫টি ছাগী গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে সমপরিমাণ বীজ দিয়ে ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি ফল পাওয়া যায় ।

এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে, এই হিমায়িত বীজের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননে ছাগীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা পঞ্চাশ শতাংশের বেশি, যা গাভীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতার প্রায় সমান। এসব হিমায়িত বীজকে তরল নাইট্রোজেনের মাধ্যমে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ অবস্খায় এসব হিমায়িত বীজের গুণাগুণ ৫০ বছর অটুট থাকবে, যা ভবিষ্যতে ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করা যাবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ