নাগলিঙ্গম গাছের ফুলগুলি অদ্ভুত সুন্দর। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। হয়তো এ’ কারণেই এ ফুলের নাম নাগলিঙ্গম।নাগলিঙ্গম গাছে যখন ফুল ফোটে তখন ফুল হতে অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। কথিত আছে নাগলিঙ্গমের গন্ধে নাগিনীর গায়ের ন্যায় কাম-গন্ধ খুঁজে পায় নাগ। কামের নেশায় মত্ত হয়ে তখন নাগ ফুলের কাছে ছুটে আসে। সাপুড়েরা তাই এই গাছের নাম দিয়েছেন নাগলিঙ্গম। আর এ কারনেই উপমহাদেশে কালক্রমে এই নামটিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম খুব একটা দেখা যায়না। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার রাজবাড়িতে কয়েকটি গাছসহ সারাদেশে ২৪/২৫ টী এ গাছ রয়েছে। দুষ্পাপ্য নাগলিঙ্গম গাছ অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে। নাগলিঙ্গম গাছ দেখতে বেশ উঁচু। উচ্চতায় গাছটি প্রায় ৮০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কান্ড বেশ মোটা। এর গুচ্ছ পাতাগুলো লম্বায় সাধারণত ৫-৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ৪-৫ ইঞ্চি চওড়া। পাতার রং গাঢ় সবুজ। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং পরে নতুন করে গজায়।
নাগলিঙ্গমের আরো দুটি ভিন্ন প্রজাতির নাম হলো- নাগেশ্বর এবং নাগকেশর। নাগলিঙ্গম গাছে তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণযুক্ত বড় বড় ফুল হয়। সাপের ফুার মতো এবং বড় আকৃতির ফুল থেকে বড় গোল অনেকটা বেলের মতো দেখতে ফল হয়। এই ফল হাতির খুবই প্রিয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব ও সর্প পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।
ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর নাগলিঙ্গম গাছে ফুল ধরে। গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে ফুল ফোটে। গাছের কাণ্ডের সঙ্গে ঝুলে থাকে অসংখ্য মঞ্জুরি। প্রায় ৭ ফুট দীর্ঘ মঞ্জুরিতে বড় বড় গোলাকার ফুল ধরে।
গাছটির ফুল বিস্ময়কর সুন্দর! যেমন বড় তেমন চোখ জুড়ানো রং। নাগলিঙ্গম ফল বড় বেলের মতো। ওজন প্রায় চার কেজি পর্যন্ত হয়। ক্যানন বলের মতো দেখতে, তাই এর ইংরেজি নাম ক্যাননবল।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ