জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ আকালে দীর্ঘদিন অভাব-অনটনে ছিল জেলেরা। এখন ইলিশ পড়ায় এ অঞ্চলের জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলে পল্লীগুলোতে বইছে আনন্দ-উল্লাস।
হতাশা কাটিয়ে এখন ইলিশ আহরণে ব্যস্ত মেঘনা-তেতুলিয়া নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষগুলো। নদীতে জাল ফেললেই জেলেদের জালে ধরা পরছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। ঋণ নেওয়া জেলেদের তা পরিশোধে এবছর সমস্যা হবেনা বলে মনে করছেন তারা বিগত বছরের তুলনায় এবছর বেশি ইলিশ আহরিত হবে এমন দাবী উপজেলা মৎস্যবিভাগের।
জানা যায়, গত অর্থ বছরে জেলায় ইলিশ উৎপাদনের পরিমান ছিল ১লাখ ৩০ হাজার ৮৯২ মে. টন। আর বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ছিল ১৪ হাজার ৩৬৭ মে. টন। এ বছর জেলায় দেড় লাখ মে. টন ইলিশ উৎপাদনের আশা ব্যক্ত করেন। মেঘনা নদীর মির্জাকালু মাছঘাট, দিদার মাঝি, মামুন এর ঘাট, আলী একাব্বরের ঘাট, স্বরাজগঞ্জ মাছঘাট, তেতুলিয়া নদীর জয়া মাছ ঘাট, নয়নের ঘাট মাছ ঘাটসহ বিভিন্ন ইলিশের মোকামে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। মোকামগুলোতে জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীতে মাছ ধরে ঘাটগুলোতে চকচকে ইলিশ নিয়ে আসে জেলেরা।
জেলেরা জানান, বর্তমানে উপকূল ও নদীতে জাল ফেললেই ইলিশ মাছ উঠছে। বিভিন্নস্থানে নদী ও সাগরের মোহনায় গেলে একেকটি বড় জেলে ট্রলারে প্রতিদিন ১০০-২০০ ইলিশ ধরা পড়ে। এ ইলিশ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। মাছ ধরা পড়ায় মহাজন ও বিভিন্ন জায়গা থেকে নেওয়া ঋণ শোধ করতে জেলেদের সমস্যা হবে না বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলে পল্লীর রহিমা, হাসনা, রুপবানু, মেহের বেগম জানান, ইলিশ না থাকায় গত ২টি ঈদে বাচ্চাদের নতুন পোষাক ও ভালো খাবার দিতে পারিনি। আল্লাহর রহমতে এখন দিতে পারব।
জেলে আসাদ জানান, নদীতে ইলিশ ধরা পড়লেও ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রামের মধ্যম সাইজেরটা বেশি উঠছে। এক কেজি অথবা তারচে বড় ইলিশ খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বড় মাছের দাম একটু বেশি।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির উপজেলার সভাপতি শাহে আলম মেম্বার জানান, গত বছর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্যবিভাগের ঝাটকা নিধন বন্ধ অভিযান জোড়ালো হওয়ায় এবছর মাছের পরিমান বাড়বে।তিনি জানান, বড় সাইজের এক হালি ইলিশের দাম আড়াই থেকে ৩ হাজার, মাঝারী সাইজের ১২শ` থেকে ১৫শ` এবং ছোট সাইজের ৬০০ টাকা। জোবা ভেদে দামের পরিবর্তন হয়। তিনি অভিযোগ করেন কিছু প্রভাবশালী মহল ও রাঘববোয়ালদের হস্তক্ষেপের কারণে প্রশাসন বিভিন্ন প্রজাতির রেণু ধ্বংসকারী জাল বন্ধ করতে সমস্যায় পড়েন। এটা বন্ধ হলে সকল ধরনের মাছ আরো বেশি পাওয়া যাবে।
মৎস্যকর্মকর্তা এএফএম নাজমুস সালেহীন জানান, এবছর মৌসুমের প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে কাংঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। মূলত পানির প্রবাহ ও গভীরতার সাথে ইলিশের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সামনে ৯-৩০ অক্টোবর প্রধান প্রজনন মৌসুম আশ্বিনী পূর্ণিমার আগে আরো ইলিশ পাওয়া যাবে বলে জানান।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ