অনেকদিন ফুলদানিতে সতেজ থাকে যে ফুল

898

নন্দিনী ফুল

ফুলদানিতে ফুল দীর্ঘ দিন সতেজ থাকুক এটা তো সবাই চায়। কিন্তু সব ফুল তো আর সতেজ থাকে না। কিন্তু এই ফুল অনেকদিন সতেজ থাকে। যা অনেকটা গোলাপের মতো মনোমুগ্ধকর ফুল নন্দিনী। ডগাসহ টিউলিপের মতো দেখায়। বিদেশে ৪৫ রঙের ফুল থাকলেও বাংলাদেশে ১৪ রংয়ের ফুল ফোটানো সম্ভব হয়েছে। অন্য ফুল যেখানে ফুলদানিতে রাখলে সর্বোচ্চ ২-৩ দিন পরই পাপড়ি ঝরে পড়ে; সেখানে নন্দিনী ফুলদানিতে ১০-১৫ দিন রাখলেও পাপড়ি ঝরে না। পানিতে সামান্য সুক্রোজ মিশিয়ে দিলে ২০-২৫ দিন সতেজ থাকে।

এ ছাড়া নন্দিনী ফুলের কলি ফুলদানিতে রাখলে ধীরে ধীরে ফোটে এবং রঙিন হয়। বিদেশে ‘সিলিয়েন্থাস’ নামে পরিচিত এ বিশেষ ফুলটির ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারি সহযোগিতার অভাবে ফুলটি কৃষক পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. জামাল উদ্দিন দীর্ঘ ২০ বছর এ ফুল নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম নন্দিনীর চাষ করতে সফল হন। যেহেতু এ ফুলের বীজ অনেক ছোট এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া এ বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য সহায়ক নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় একটি কক্ষে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে বীজ অঙ্কুরিত করতে সফল হন তিনি।

নন্দিনী ফুলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বলতে গিয়ে এ বিজ্ঞানী জানান, একটি ফুলের মূল্য নির্ধারিত হয় এর রং এবং স্থায়িত্বের ওপর। এক্ষেত্রে নন্দিনী ফুলের স্থায়িত্ব অন্য যে কোন ফুল থেকে বেশি। যেখানে প্রতিটি গোলাপের দাম ৫-১০ টাকা, সেখানে প্রতিটি নন্দিনীর দাম ১৪০-১৫০ টাকা। তাছাড়া বাজারে প্রচলিত গোলাপ শীতকালে পাওয়া যায়। কিন্তু নন্দিনী ফুল বারো মাসই চাষ করা যায়। একটি গাছ থেকে ৭০-৮০টি ফুল পাওয়া যায়।

গবেষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ফুলের বীজ খুব ছোট হওয়ায় বিশেষ পদ্ধতিতে অঙ্কুরোদগম করতে হয়। অঙ্কুরোদগমে সময় লাগে সাধারণত ১০-১২ দিন। চারায় চার জোড়া পাতা গজানোর পর তা মাঠে রোপণ করা যায়। আর চার জোড়া পাতা হতে ৮০-৯০ দিন সময় লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অঙ্কুরোদগম হয়ে গেলে স্বাভাবিক পরিচর্যায় বড় হয়। বীজ থেকে চারা উৎপাদনে দীর্ঘ সময় ও কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন হয়। জনবলের অভাবে যথেষ্ট বীজ থাকলেও চারা উৎপাদন করতে পারছি না।’

কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে নতুন ফুল সম্প্রসারণের উদ্যোগ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউএসএইডের সহায়তায় যশোরের ২০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে চারা দেওয়া হয়। তারা এ ফুল চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগের অভাবে কৃষক পর্যায়ে চারা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ