‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাক্সিক্ষত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) সেমিনারের আয়োজন করে। ডেইরি ও পোল্ট্রির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত; ষড়যন্ত্রে স্বার্থন্বেষী ব্যবসায়ী এবং বিদেশীরা বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।
আজ বুধবার রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পে এসব ক্ষেত্রে আমরা আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু দেশের কিছু স্বার্থন্বেষী ব্যবসায়ী এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে এই দুই শিল্পের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ষড়যন্ত্রের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যখন পোল্ট্রি শিল্প সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন অপ্রচার চালানো হলো যে খাদ্যে ভেজাল রয়েছে। এতে শিল্পটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
তিনি বলেন, দেশে মাছ ২শ টাকা কেজির নিচে নেই, পোল্ট্রি মুরগীর কেজি ১৩০-১৪০ টাকা। আমরা পোল্ট্রির মাংস রফতানির প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, কেউ যাতে সীসা ঢুকাতে না পারে।
গবাদি পশুর উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্রামে এমন কোনো বাড়ি পাবেন না, যেখানে একটিও গরু পাওয়া যাবে না। একসময় গ্রামে গোয়াল ঘর উঠে গিয়েছিলো। এখন নতুন করে আবারো গোয়াল ঘর ফিরে এসেছে।
ডেইরি শিল্পও যখন ভালো পথে যাচ্ছিল এবং গুড়ো দুধের ওপর শুল্ক ৫% বৃদ্ধি করা হলো তখন হঠাৎ করে এক গবেষণায় বলা হলো দুধে সীসা আছে। এটি প্রচার করা হলো। ধ্বস নামলো দুধের বাজারে। কৃষকের মাথায় হাত এবং খামারিরা পথে বসে গেলো। আমরা এগিয়ে যেতে চাইলেও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র আমাদেরকে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপনন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জনগনের শতভাগ পুষ্টিমানের খাবার নিশ্চিত করে অচিরেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব আরিফুর রহমান অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি ছিলেন এফএও বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। আয়োজিত সেমিনারে প্রতিপাদ্যের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন থাইল্যান্ডের মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ভিসিথ চাভাসিট।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমা শাহীন, আইসিডিডিআরবির সিনিয়র পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশ নেন।
বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিনদিনব্যাপী মেলা। এতে সরকারি ও বেসরকারি ৪৬ টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
এফএও ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৯৭৯ সালে এ সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপি খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের পর ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিষ্ঠার দিনটিতে (১৬ অক্টোবর, ১৯৪৫) বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালিত হয়ে আসছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ
