চলতি মাসে ২২ দিন ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাবনার ঈশ্বরদী, সদর, সুজানগর, বেড়া উপজেলার পদ্মা, যমুনা ও হুড়াসাগর নদীতে মা ইলিশ শিকার থেমে নেই। নদী পাড়ের বাতাসে ইলিশের গন্ধ। রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত চলে ইলিশ বেচাকেনা।
ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রতিটি জালে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ধরা পড়ছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি ডিম ভর্তি মা ইলিশ। এসব ইলিশ আকার ভেদে ১শ ৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু কম দামে ইলিশ মাছ কেনার জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের উৎসাহ বেশি।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ঢালারচর, কাজীরহাট, নটাখোলা, রাকশা, হরিরামপুর, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, বৃশালিখা, অধিননগর, নাজিরগঞ্জ, চরনাগদাহ, বোয়ালকান্দি, দত্তকান্দি, দক্ষিণ খাষকাউলিয়া, বিনানুই বাজার, আজিমুদ্দির মোড়, খগেন ঘাট, চরছলিমাবাদসহ সুজানগর উপজেলার তিন নদী পাড়ের প্রায় ১৫-২০টি পয়েন্টে রাতে পুলিশের আড়ালে ইলিশ বেচাকেনার ভ্রাম্যমাণ বাজার বসছে।
এসব বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা আসছে। তারা কম দামে ডিমওয়ালা মা ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার অনেকেই ইলিশ কিনে শুধু নিজের ফ্রিজই ভরছে না, সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে আত্মীয়তা মজবুত করছে
প্রশাসন রাতে অভিযান পরিচালনা না করায় জেলেরা এই সময়কে বেছে নিয়েছে মাছ শিকারে। ঈশ্বরদী ,সদর, বেড়া উপজেলার জেলেরা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকারিভাবে তাদের যে সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল, তা তারা পাননি। তাই বাধ্য হয়ে সংসার চালানোর তাগিদে তারা মাছ ধরছেন। সুজানগরের জেলেরা কিছুটা পেয়েছেন, যা সংসারের চাকা সচল রাখতে যথেষ্ট নয়।
বেড়ার মোহনগঞ্জের উজানে শাহাজাদপুর উপজেলার বিনোটিয়া অংশে প্রায় ১৫ কেজি মাছ শিকার করে ফিরে আসা জেলে নিরু হলদার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেবেন অথচ খাবার দেবেন না, তাহলে খাবো কি?।’
অপর জেলে ভিকু হলদার অভিমান নিয়ে বলেন, ‘চালতো দেওয়া দুরের কথা, একবারের জন্য তাদের খোঁজ নেয় নাই। বরং যারা নদীতে নামতাছে তাগরে ধইরা নিয়ে জেলে ঢুকাইয়া দিতাছে।’
সদর, ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েক জেলে বলেন, নদীর পাড়ে বসবাস করা বেশির ভাগ জেলেই দিনে আনে দিন খাওয়া পরিবারের সদস্য। একদিন নদীতে মাছ না ধরলে তাদের পরিবারের সদস্যদের অনাহার আর অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তাই প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারির সঙ্গে সঙ্গে যদি চাল বিতরণ করত তাহলে জেলেরা নদীতে নামতে আর সাহস পেত না।
এদিকে মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা মৎস্য বিভাগ, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় পদ্মা ও যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হচ্ছে জেলেদের। জব্দ করা হচ্ছে কারেন্ট জাল ও মাছ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক জেলেদের করা হচ্ছে জরিমানা এবং দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড। পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে জাল।
মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ জানান, পদ্মা-যমুনায় মাছ ধরার নৌকা মুক্ত রাখতে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় মৎস্য বিভাগ দিন-রাত প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করছে। সেই সঙ্গে কারেন্ট জাল উদ্ধার করে তা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা শুধুমাত্র সুজানগরের জন্য ২৫ টন চাল সরকারের তরফ থেকে পেয়েছিলেন, যা ১ হাজার ২৫০ জন জেলেকে দেয়া হয়েছে। বাকী তিন উপজেলার জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ শনিবার বলেন, তারা এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ’ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছেন। সাহায্য না পাওয়ায় বিভিন্ন জেলের অভিযোগ সত্য নয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে যারা মাছ শিকার করছে, তারা প্রকৃত জেলে নয়। অন্য পেশা তাদের। প্রকৃত জেলেদের কিছু সাহায্য করা হয়েছে, বরাদ্দ আসলে বাকীদের করা হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ