কৃষিতে বেশি আয়ের অপার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি ও মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তারা। একই জমিতে ধান, মাছ ও বিভিন্ন সবজি চাষে খুলনা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকের মাঝে পরামর্শ দিচ্ছেন।তাদের দিকনির্দেশনা নিয়ে অনেক কৃষক এরই মধ্যে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেছেন।
আগের তুলনায় লাভও হচ্ছে অনেক। তাদের দেখে কর্মকর্তাদের কাছে হাতেকলমে ও মাঠপর্যায়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চাঁদগড় গ্রামে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রত্যেকটি জমি এখন তিনতলা কৃষি পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। একই জমিতে কৃষক ধান চাষ করছেন। সেই ধানের পানিতে চাষ হচ্ছে নানা প্রজাতির মাছ। সঙ্গে জমির আইলে সামান্য পরিমাণ জায়গায় চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, তরমুজ, শিম, লাউসহ নানা জাতের সবজি। সেখানে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন জয়ন্ত বিশ্বাস। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চার বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হচ্ছে। সঙ্গে মাছ ও তরমুজের আবাদ করেছি। আগে জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম। এখন একই জমিতে অনেক কিছু একসঙ্গে চাষ করছি। ফলে একই সময় তিন ধরনের ফসল ঘরে তুলতে পারছি, যা বিক্রি করে তিনগুণ লাভ হচ্ছে।
তিনি বলেন, জমির পানিতে চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল চাষ করছি। এরই মধ্যে ২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা হয়েছে। আরও যা আছে, তা ২ লাখ টাকায় বিক্রি করা যাবে। এছাড়া সবজি চাষের জন্য ২৫ হাজার টাকা খরচ করে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার বিক্রি হয়েছে। একই গ্রামের বাসিন্দা রফিক শেখ বলেন, ছয় বিঘা ঘেরে গলদা চিংড়িসহ নানা ধরনের কার্পজাতীয় মাছ চাষ করছি। রয়েছে ধানও। আর ঘেরের পাড়ে গ্রীষ্মকালীন শিম, টমেটোসহ হরেক রকম সবজিও চাষ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগে একই জমিতে চাষাবাদ করে যে টাকা আয় করতাম, এর তুলনায় এখন চারগুণ বেশি টাকা আয় হয়। আমাদের দেখাদেখি অনেক কৃষক এই পদ্ধতিতে চাষাবাদে ঝুঁকছেন। গ্রামের আরও একজন কৃষক মো. মেরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এই তিন তলা কৃষিতে অনেক লাভবান হয়েছি। সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধানের সঙ্গে মাছ ও শিম চাষ করছি। এরই মধ্যে ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। আরও ৮০-৯০ হাজার টাকার শিম মাঠে আছে। এছাড়া মাছ বিক্রি হয়েছে ২ লাখ টাকার।
মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটের পরিচালক বিধান কুমার ভান্ডার বলেন, তিনতলা কৃষি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একই জায়গায় একাধিক ফসল মানে অধিক লাভ। এ পদ্ধতিটি আগামী দিনে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে আরও বেশি কৃষকের কাছে নিয়ে যেতে চাই।
খুলনা জেলা প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ অনেক সহজ। তবে মাটির জৈবিক উর্বরতার দিকে লক্ষ দিতে হবে। তাই আমরা কৃষককে বলেছি জমির উপরের মাটি যেন কোনোভাবে নিচে পড়ে না যায়। আর সবজি চাষে জমির পাড় ব্যবহার হওয়ায় জমির উপরের মাটি দিতে হবে। এতে সার কম লাগবে। খরচ কমে আসবে।
খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় মোট ৬৬ হাজার ৫৫৬টি ঘের রয়েছে। ঘেরে মোট জমি ৫৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর। তবে ঘেরের সামান্য পরিমাণ জমি অর্থাৎ পাড়ের অংশটুকু ব্যবহার হচ্ছে সবজি আবাদে, যা আগে পতিত থাকত। এখন পাড়ের জমি আর পতিত নেই। কেউ ঘের চুক্তি নিয়ে কেউ আবার নিজের জমিতেই চাষাবাদ করছেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ