নতুন উদ্ভাবনী ধান প্রজনন কৌশল ট্রান্সফর্মিং রাইস ব্রিডিং

292

download

আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ২০১৫ সালের ‘ট্রান্সফর্মিং রাইস ব্রিডিং’ (টিআরবি-ব্রি) নামক প্রকল্পের আওতায় উদ্ভাবনী ধান প্রজনন কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে ধানের জাত উদ্ভাবনে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেছে। গত বৃহস্পতিবার ইরি এবং ব্রি-এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত ওই প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান ‘ট্রান্সফর্মিং রাইস ব্রিডিং’ (টিআরবি-ব্রি) প্রকল্পকে একটি উদ্ভাবনীমূলক, আধুনিক এবং ভোক্তাবান্ধব ধানের প্রজনন কৌশল হিসেবে অভিহিত করেন।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ধানের প্রজনন প্রোগ্রামের উন্নয়ন সাধন করা। যেমন- দ্রম্নত বংশ বৃদ্ধি (আরজিএ) কৌশলের মাধ্যমে জাত উৎপাদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতির অটোমেশনের মাধ্যমে ধানের প্রজনন কৌশলে যুগপোযোগী পরিবর্তন আনা, হাইথ্রুপুট মলিকুলার মার্কার এবং সেরা প্রজনন লাইন বাছাই ও পুনর্ব্যবহার করে প্রজনন ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত কৌশলগুলো সর্বাধুনিকায়ন।

টিআরবি-ইরি-ব্রি যৌথ সহযোগিতামূলক প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি)-বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হুমনাথ ভান্ডারী। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কবীর ইকরামুল হক। এ ছাড়াও ইরির ইরিগেটেড ক্লাস্টার লিড ড. জশোয়া কব, বিএমজিএফ (বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন) সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ড. গ্যারি অ্যাটলিন, ব্রির পস্ন্যান্ট ব্রিডিং ডিভিশনের প্রধান ড. কে এম ইফতেখার-উ-দৌলা এবং ইরি-বাংলাদেশের রাইস ব্রিডার ড. মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত চার বছরে ‘ট্রান্সফর্মিং রাইস ব্রিডিং’ (টিআরবি-ব্রি) প্রকল্পের উলেস্নখযোগ্য সাফল্যগুলো হচ্ছে- প্রকল্পের আওতায় ৬০,৫৯৪টি ফিক্সড রাইস ব্রিডিং লাইন তৈরি করা হয়েছে এবং আরও ১০ লাখ ব্রিডিং লাইন আগামী ৪ বছরের মধ্যে তৈরি করা হবে। আমন ও বোরো মৌসুমের উপযোগী স্বল্প মেয়াদি জাত উদ্ভাবন করা হবে যেগুলোর ফলন হবে ৮ থেকে ১০ টন/হে.। এ ছাড়া বস্নাস্ট, বিএলবি, ফলস স্মার্ট, বিপিএইচ ইত্যাদি প্রধান প্রধান রোগ ও পোকামাকড় সহনশীল জাত, ঘাতসহনশীল জাত (যেমন: লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা, বন্যাসহিষ্ণু) জাত উদ্ভাবনের কাজ এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১,০৯৯টি এলএসটি ব্রিডিং লাইন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবীক্ষণের কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে

লবণাক্ততা সহনশীল ২০০০ জার্মাপস্নাজম ও বিড্রিং লাইন শনাক্ত ও বাছাই করা হয়েছে। ঠান্ডা করা সহনশীল ১২০০ জার্মাপস্নাজম ও বিড্রিং লাইন শনাক্ত ও বাছাই করা হয়েছে। জলমগ্নতা ও বন্যা সহনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ৯০০ জার্মাপস্নাজম ও বিড্রিং লাইন বাছাই করা হয়েছে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবনের জন্য ৪২০০০ ব্রিডিং লাইন বাছাই করা হয়েছে। প্রিমিয়াম কোয়ালিটি জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ১০৬০০টি ব্রিডিং লাইন বাছাই করা হয়েছে। ৮৩৫টি প্যারেন্ট ম্যাটেরিয়াল এবং ১৫৬১০টি এলএসটি লাইনের কিউটিএল ফিঙ্গার প্রিন্টিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর মাঠ পর্যায়ে দ্রম্নত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২১টি নতুন উদ্ভাবিত জাতের ১০০০টি পরীক্ষামূলক অভিযোজন ট্রায়াল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রধান অতিথি কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ধানের প্রজনন পদ্ধতির উন্নয়ন একটি উৎকৃষ্ট পদ্ধতি- যা পছন্দসই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ধানের জাত উন্নয়নের জন্য প্রচলিত প্রজনন কৌশলকে স্থানান্তরিত করে আধুনিক উদ্ভাবনী পদ্ধতিকে উৎসাহিত করে। এই প্রকল্পের অনন্য একটি দিক ছিল মানবসম্পদ উন্নয়ন, যা ব্রি এবং এর দেশীয় অংশীদার সংস্থার গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই করেছে। প্রকৃতপক্ষে এটি দরিদ্র কৃষকদের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সরকার শিগগিরই ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের জাত অবমুক্ত করবে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ব্রি এখন পর্যন্ত ২৪টি ঘাত সহনশীল জাতসহ ১০০টি বিভিন্ন ধরনের উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ধানের ফলনের স্তরভিত্তিক সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যেতে হলে আমাদের কৌশলভিত্তিক প্রজনন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। তাই, ধানে ফলনের সীমাবদ্ধতা হ্রাসের জন্য ধানের প্রজনন আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। টিআরবি-এর সফল প্রয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ প্রজনন লাইনের বিকাশের মাধ্যমে একটি অবিস্মরণীয় সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায়, ধানের জেনেটিক উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে আমাদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারে এমন আরো বেশি লবণাক্ততা, খরা এবং বন্যা সহনশীল ধানের জাত উন্নয়নে অবদান রাখবে ব্রি।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ