পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণে কৃষকের কাছ থেকে মোবাইল অ্যাপ-এর মাধ্যমে যশোর সদরসহ ১৬ জেলায় ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ পদ্ধতি সফল হলে আগামী বোরো মৌসুমে একই প্রক্রিয়ায় সারাদেশের কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু খোদ যশোর সদরের বেশিরভাগ কৃষকই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তারা বলছেন, এ বিষয়ে কেউ তাদের জানায়নি।
জানা গেছে, চলতি বছর অ্যাপের মাধ্যমে যশোর সদরে ২ হাজার ৮২৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। যশোর জেলায় কেনা হবে প্রায় ১৫ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি অফিস অধিদফতর জানায়, চলতি বছর যশোর জেলায় আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সে কারণে প্রতিবছরই সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ করে খাদ্য বিভাগ। চলতি আমন মৌসুমেও ধান সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে যশোর সদর উপজেলাসহ ১৬টি জেলার ১৬টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণে এবার সংগ্রহ করা হবে ধান। এজন্য একজন কৃষককে মোবাইল ফোনে ‘কৃষকের অ্যাপ’ নামে অ্যাপটি ডাউনলোড করে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
এরপর ধানের নাম, জমির পরিমাণ, কী পরিমাণ ধান বিক্রি করতে চান, তা জানিয়ে ঘরে বসেই সরকারের কাছে ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন কৃষক। নিবন্ধন, বিক্রির আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ সম্পর্কিত তথ্য এবং বিক্রির জন্য কোন তারিখে, কোন গুদামে যেতে হবে সেসব তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে কৃষক জানতে পারবেন। আবেদনকারী বেশি হলে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হবে। তবে কৃষকের স্মার্ট ফোন না থাকলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে তিনি এ সেবা নিতে পারবেন।
কৃষক হেলালউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে এবার আমন চাষ করেছি। খাওয়ার জন্যে কিছু রাখি, বাকিটা বিক্রি করি। এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি সরকার এবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ধান কিনবে। কেউ আমাদের বিষয়টি জানায়নি। আপনার কাছেই শুনলাম বিষয়টি।’ আরবপুর ইউনিয়নের পতেঙ্গালি এলাকার কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সাত বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। অ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রি করা যাবে, এমন কোনও তথ্য আমার জানা নেই। যদি আধুনিক পদ্ধতিতে ঘরে বসে এভাবে ধান বিক্রি করতে পারি, তাহলে সেটি অনেক ভালো খবর।’
যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকার কৃষক শাহাবুদ্দিন বাটুল বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ধান বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই। ব্লক সুপারভাইজাররাও এ বিষয়ে আমাদের কোনও কিছুই জানাননি।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সপ্তাহখানেক আগে বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু প্রচারণার অভাবে কৃষকদের সেভাবে অবহিত করা যায়নি। কেননা এ সংক্রান্ত লিফলেট কিংবা মাইকিংয়ের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদে কৃষকদের তালিকা দেওয়া রয়েছে। যারা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং ধান বিক্রি করতে চান, তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। কৃষকদের মধ্যে হয়তো ২৫ শতাংশ এ বিষয়টি জানে।’
তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি সরকারের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিষয়টি জানিয়েছেন। ২৪ নভেম্বর যশোর সদর ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩৫ জন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার সমন্বয়ে আমাদের একটি প্রশিক্ষণ টিম হয়েছে। যদি কোনও কৃষক সরাসরি ধান বিক্রির এই অ্যাপ সম্পর্কে অবহিত না থাকেন, তাহলে আমাদের কাছে এলে তাদের ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রিতে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করবো।’
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহ করবে ‘কৃষকদের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে। কৃষকরা আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করতে পারবেন। এজন্য তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর লাগবে, পাসওয়ার্ড দেবে সরকার। এর মাধ্যমে তারা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবেদন করতে পারবেন। এরপর লটারির মাধ্যমে সরকার কার কাছ থেকে কতটুকু ধান সংগ্রহ করবে, তা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮ ডিসেম্বর থেকে আমরা একনাগাড়ে ব্যাপক প্রচারণায় নামবো। ১৫ ডিসেম্বর আবেদন শেষ হলে ১৭ বা ১৮ তারিখ থেকে আমরা যশোর সদরে ধান কেনা শুরু করবো।
যশোর সদর ছাড়াও ঝিনাইদহ সদর, ঢাকার সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে ধান কেনা হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ