মেহেরপুরে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে কলমি শাক

829

কলমি শাক

মেহেরপুর জেলায় কলমি শাক চাষ করে অনেকের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। দিন দিন এখন কলমি শাকচাষ বাড়ছে। একটা সময় নিচু জলাশয়ে আগাছা হিসেবে বেড়ে উঠতো কলমি। গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো সেই কলমি শাক চাষ করে অর্থ উপার্জন হবে সেটা ভাবেনি কেউ আগে। এখন কৃষাণ-কৃষাণীরা মাঠের জমিতে পরিকল্পিত উপায়ে চাষ করছেন কলমি শাক।
বাজারে ভালো দাম থাকায় কলমি শাক চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণী। স্বল্প খরচ আর অধিক লাভের কারণে উপজেলায় এর চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। খাল-বিলের ধারসহ আনাচে-কানাচে এমনিতেই বেড়ে ওঠা কলমি গাছকে স্থানীয় লোকজন এক সময় গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে গণ্য করলেও সেই কলমি গাছের কচি পাতাই এখন এ এলাকার কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আগে পরিত্যক্ত খাল-বিল, ডোবা-নালায় এমনিতেই জন্মাত এ কলমি শাক। এখন ভাতের সঙ্গে শাক হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এর বিপুল কদর বেড়েছে হাট-বাজারে। এ কারণে কৃষক এখন একরে একরে জমিতে পরিকল্পিতভাবে চাষ করছেন কলমি শাকের। কলমি শাক বিক্রি করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। অনায়াসে সংসারের একটা বড় প্রয়োজন মিটছে কৃষকের।

গাংনী উপজেলা ভোমরদহ গ্রামের সফেদা খাতুন ও তার স্বামী বরকত আলী ১৫ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে কলমি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার কলমির ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেত যেন সবুজের চাদরে ঢাকা। কলমি চাষ সম্পর্কে সফেদা বলেন, ‘আমি প্রথমে এলাকার মাঠে কলমি শাকের বীজ উৎপন্ন হতে দেখি। তাই আমি ১৫ কাঠা জমিতে কলমি চাষ করি। বর্তমানে কলমি শাক বাজারে বিক্রি করে আমার ভালোই আয় হচ্ছে।’ সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান তিনি দুই বিঘা জমিতে কলমি চাষ করেছেন। ৪ কেজি বীজে এক একর জমি চাষ করা যায়। জমি তৈরির সময় গোবর এবং অন্যান্য সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করে বীজ বপন করতে হয়। গাছ বড় হলে উপরের অংশ কেটে নিতে হয়। এরপর গাছের উপরের পাতার অংশ কেটে আঁটি বেঁধে হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া গ্রামে দেখা গেল কলমি শাকের জমি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে । তারা শাকের জন্য চাষ করেন না। গ্রামের রবকুল আলীসহ বেশ কয়েকজন কলমি শাক চাষি বিভিন্ন বীজ কোম্পানীর সহযোগিতায় কলমি শাকের চাষ করেন। কলমি বীজ চাষি হাসেম আলী বলেন, ৮/১০ বছর ধরে বিএডিসি, লাল তীর, ব্র্যাক, মেটাল সীড, গ্যাটকো সীডসহ বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতায় এলাকার বেশ কিছু চাষি কলমি শাক করে বীজ উৎপাদন করছেন। ওই বীজ ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরে কোম্পানি কিনে নিয়েছে। কলমি বীজ উৎপাদনের জন্য ভাদ্র মাসে ইরি-বোরো ধানের মত ক্ষেত তৈরি করে ৫/৬ ইঞ্চি লম্বা চারা জমিতে রোপণ করতে হয়। এর আগে ধানের মত বীজতলা তৈরি করে নিতে হয়। কলমি ক্ষেতে সব সময় পানি থাকতে হয়। ৪ মাসের এ ফসলে ফুল থেকে বীজ তৈরি হলে ক্ষেত থেকে বীজ কেটে রৌদে শুকাতে হয়। পরে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বীজ বিক্রি করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এক একর জমির কলমির বীজ তৈরি করতে চাষ, সেচ, সার ও লেবার খরচ বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই জমির উৎপাদিত বীজ গেল বার ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে কলমি শাকের বীজ উৎপাদনকারী অনেক চাষী বললেন, বীজ তৈরির চেয়ে কলমি শাক চাষে খরচ কম এবং লাভ অনেক বেশি। বিধায় তাদের অনেকে সামনের মৌসুমে বীজ চাষের পরিবর্তে কলমি শাক আবাদ করবেন।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন- এবার কলমিসহ নানান শাকসবজির চাষ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে। কলমি শাকের পুষ্টিগুণ থাকার কারণে বাজারে কলমি শাকের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।