এবার আমন মৌসুমের শুরুতেই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকারীভাবে ধান কেনার ঘোষণায়, দিনাজপুরের কৃষক প্রথমে আশান্বিত হলেও এখন হতাশ। বর্তমানে জেলার হাট-বাজারগুলোতে যে দরে আমন বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
এদিকে কৃষক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় বেশির ভাগ এলাকায় সরকারের ধান কেনা শুরুই হয়নি। তাই বিপাকে পড়েছেন কৃষক। সরকার এবার আমন মৌসুমের শুরুতে সরাসরি জেলার কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ২৮ হাজার মে. টন ধান কেনার ঘোষণা দেয়।
এছাড়া মিল মালিকদের কাছ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা কেজি দরে আতপ চাল সংগ্রহ করা হবে। এই হিসেবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়ে ৯শ’ ৬২ টাকা (৩৭ কেজিতে ১ মণ হিসেবে)। এই দরে সরকারের কাছে কৃষক ধান বিক্রি করতে পারলে তাদের বেশ ভাল মুনাফা হতো। কিন্তু কৃষক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায়, কোন কোন এলাকায় এক ছটাক ধানও কেনা হয়নি। অথচ গত ২০ নভেম্বর থেকে এই সংগ্রহ অভিযান শুরু হওয়ার কথা। বর্তমান বাজার দরে কৃষক ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। বিশেষ করে মোটা জাতের ধান আবাদ করে লোকসান গুনছেন কৃষক। চলতি আমন মৌসুমের ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে চলে এলেও, এই জেলায় পুরোদমে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
সদর উপজেলার বৈরাগী দীঘি গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি এবার আমন মৌসুমে চার বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা জাতের ধান আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ১০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ধান পেয়েছেন ২২ মণ। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ৫৭৫ থেকে ৬০০ টাকায়। এতে এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে গড়ে তিনি পেয়েছেন ১৩ হাজার টাকা। এই হিসেবে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে গিয়ে তাকে লোকসান গুনতে হয়েছে গড়ে ২ হাজার টাকা।
ধান কেনা-বেচার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে জেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। এই দরে ধান বিক্রি করে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। কিন্তু সরকার যদি এখন পুরোদমে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে পারত, তাহলে ধানের বাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান জানান, দিনাজপুর জেলায় মোট ২৮ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০০ টন ধান কেনা হয়েছে।
এছাড়া চাল সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হুসেন জানান, সরকারের কাছে সরাসরি ধান সরবরাহ করবে কৃষক, আর চাল সরবরাহ করবে মিল মালিক। এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে চাল সংগ্রহ শুরু হয়নি। কোন মিল মালিক কতটুকু চাল সরবরাহ করতে পারবে, তা নির্ধারণ না হওয়ায় মিল মালিকরা বাজারে ধান কিনতে পারছেন না।