সাইকেলে দুটি বালতি, একটি ছুরি আর পেছনে এক আঁটি ধানের খড় বা হলুদের শুকনো পাতা নিয়ে চলতে দেখা যায় মধু সংগ্রহকারীদের। ধোঁয়া সৃষ্টি করে মৌচাক থেকে প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করেন তারা। তবে বর্তমানে প্রাকৃতিক মধুর চেয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ অনেক বেশি লাভজনক।
বাণিজ্যিকভাবে মধু খামার করেছেন কুষ্টিয়া মিরপুরের মামুনার রশিদ মামুন। সবাই তাকে মধু মামুন নামে চেনে। মামুন জানান, শখের বশেই ১৯৯৭ সালে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র চারটি মধুর বাক্স নিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করে।
তারপর চাকরির আশা না করে শুরু করে মধু চাষ। এখন তার খামারে দুই শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে। এখন এগুলোর একেকটির মূল্য ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ধারণা ও দূরদৃষ্টি, অধ্যাবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরের তরুণ মধু ব্যবসায়ী মামুন।
চাকরির পেছনে না ছুটে ক্ষুদ্র পরিসরে মধু চাষ শুরু করেন তিনি। সরিষা, কালোজিরা, লিচুসহ বিভিন্ন শস্য ও ফলের মৌসুমে তিনি এসব মৌ-বাক্স পেতে রাখেন। সাফল্য পেয়ে এখন কুষ্টিয়াসহ আশেপাশের ১০টি জেলায় মামুন গড়ে তুলেছেন মৌ-খামার। তার খামারে কর্মসংস্থান হচ্ছে অনেক বেকার তরুণের।
মধু মামুন বলেন- “নিজে কিছু করার চেষ্টা এবং অন্য মানুষদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেই আমার এ পথচলা। আমার খামারে উৎপাদিত মধু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও নাটোরের ও চলনবিল সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ চলছে। মাত্র দুই সপ্তাহেই তিনটি খামার মিলে সপ্তাহে ২৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বছর ১৪০টি বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করছি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ১২ টন মধু।”
মিরপুরের ধুবইল ইউনিয়নে স্থাপিত মধু মামুনের মৌখামার পরিদর্শণ শেষে মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন- ‘সরিষা ক্ষেতে মৌচাষের ফলে একদিকে ফলন বাড়ছে এবং মধু সংগ্রহের ফলে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে। মামুন এ উপজেলার একজন মডেল মৌ-খামারি। মধু চাষ করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’