সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারো তরমুজ চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কিছু জমিতে তরমুজ কাটা শুরু হবে। কৃষকদের আশা তারা ন্যায্য দাম পাবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় তরমুজের এ বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে যেমন চওড়া হাসি ফুটেছে, তেমনি নিজেদের ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার প্রায় শতাধিক কৃষক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাদুকাটা নদীর তীরসহ পুরো হাওর জুড়ে চোখ জুড়ানো সবুজ ঘাষের বুকে থরে থরে রয়েছে তরমুজের সারি। মনে হয় তরমুজের নীরব মিছিল। জেলার সুরমা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। এর ফলে ট্রাক, লেগুনা নিয়ে ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের কাছে চলে যাচ্ছে। এতে তরমুজের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাদাঘাট ইউপির পুরানলাউড়, উত্তর ও দক্ষিণ মোকশেদপুর, ঢালারপাড়, লামাশ্রম, জঙ্গালহাটি, বিন্নাকুলি, মোদেরগাঁও, করিমপুর এলাকায় ৩৯৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। দেশে বিভিন্ন জেলার তরমুজ চাষিদের বাজারজাত করার পূর্বেই তাহিরপুরের তরমুজ চাষিরা সফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে ২৬ জানুয়ারি হতে গ্লোরী, জাম্বু, ওরিয়ন, বাংলালিংক ও ড্রাগন জাতীয় বিদেশি তরমুজ বাজারে ছাড়বেন।
তরমুজ চাষি মারফত আলী, মিলন, ফারুকসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর তাহিরপুর কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন ও আসাদুজ্জামান আসাদের প্রযুক্তিগত সহায়তায় তরমুজ ফলনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। প্রতি একর জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে আনুমানিক চার হাজার তরমুজ ফলানো যায়, যা তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তরমুজ রোপণ ও ফলনের সময় টিএসপি, এমওপি, সুপার জিপসাম, সার ফলনের পর জিংকমনো, ছত্রাকনাশক, মাকড়নাশক ও অন্যান্য কীটনাশক ব্যবহার করেছিলেন।
সৌখিন কৃষক বাদাঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো ৭০ কিয়ার জমিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। প্রতি কিয়ারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নিজের জমি পতিত না রেখে চাষ করে লাভবান হচ্ছি। এবারো ফলন ভাল হওয়ায় প্রতি কিয়ার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি আরো বলেন, এ বছর কৃষকদের উন্নত প্রযুক্তির সহায়তার ফলে তরমুজ উৎপাদনে পূর্বের চেয়ে খরচ বেশ কমেছে, পাশাপাশি তরমুজেরও ভালো ফলন হয়েছে।
তরমুজ চাষিদের মতে, চলতি বছরে সময় মতো বিদেশি বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিড জাতীয় বীজ পাওয়ায় পূর্বের চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে। মোকশেদপুর গ্রামের এক তরমুজ চাষি বলেন, আমি এ বছর পাঁচ কেয়ার (৩০শতকে এক কেয়ার) জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমর প্রায় এক লাখ টাকার মত খরচ করে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো তাহিরপুরে তরমুজের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি। আরো ভাল ফলনের স্বার্থে কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা ও কৃষি কর্মকর্তাদের আরো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। এতে চাষিরা লাভবান হওয়ার পাশপাশি আগামীতে চাষাবাদেও আগ্রহী হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২২জানু২০২০