মাছ চাষের যেভাবে পুকুর পরিচর্যা করবেন

1557

20170907_101849
মাছ চাষের জন্য পুকুর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাছের যত্ন নেয়ার সাথে সাথে মাছ চাষের পুকুরের জন্যও যত্ন নিতে হয় করতে হয় পরিচর্যা। কেননা মাছের আবাসস্থল যদি ভালমানের না হয় তাহলে মাছের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হবেনা । তাই মাছ চাষে লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই পুকুরের পরিচর্যার দিকে নজর দিতে হবে। আসুন জেনে নেই পুকুর পরিচর্যায় কী কী করণীয়-

পুকুর পরিচর্যায় করণীয়:

পুকুরের পাড় ঝোপঝাড় মুক্ত রাখা:

পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা সূর্যালোক পড়া প্রয়োজন।
পুকুরের পাড়ের গাছপালা ঝোপঝাড় থাকার করনে পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবে পর্যাপত সার দেয়ার পরেও কাঙ্খিত পরিমাণ ফাইটোফপ্লাঙ্কটন উৎপন্ন হয় না।
ফলে পুকুরের মধে্য অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা দেয়। এজন্য পুকুরের পাড় ঝোপঝাড় মুকত রাখতে হবে। তাছাড়া পুকুর পাড়ের ঝোপঝাড় হতে পাতা পড়ে পুকুরের পানি বিষাক্ত করে ফেলে।

পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাঁদা সরানো:

পুকুরের তলদেশে ১৫ সেমি এর কম পরিমাণ কাঁদা থাকা উচিৎ। কাঁদা বেশি হলে অধিক পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে ফলে পানিতে অধিক পরিমান মিথেন, কর্বন-ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয় যা মাছের জন্য ক্ষতিকর। পুকুর তৈরির পড় যাতে পুকুরের তলদেশে পর্যাপ্ত কাদা থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত পুকুরের তলদেশে ১৫ সেমির নিচে কাঁদা রাখতে হয়।

আগাছা অপসারণ:

কচুরিপানা, টোপাপানা, শাপলা, কলমিলতা, হেলেঞ্চা, ক্ষুদেপানা ইত্যাদি পুকুরের পানিতে সূর্যালোকে পড়তে ও বাতাস চলাচল করতে বাঁধা দেয় ফলে প্রাতৃতিক খাদ্য তৈরী ব্যহত হয়। তাছাড়া, এসব জলজ আগাছায় সাপ, ব্যাঙ্গ আশ্রয় নেয়। রোগ জীবানু চড়ায়। কাজেই এসব জলজ আগাছা সরিয়ে ফেলতে হবে।

পুকুরের পানির বর্ন হালকা সবুজ রাখতে হবে। পুকুরের পানি হালকা সবুজ রাখার জন্য সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে ক্ষতিকর কোন পদার্থ পুকুরে না যায়।

পুকুরের পানির তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে রাখতে হবে সেজন্য পুকুরের উপর খুববেশি গাছপালা রাখা যাবেনা। গাছপালা অবশ্যই এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে খুববেশি রোদও না পড়ে আবার খুববেশি ছায়াও না পড়ে।
মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির গুণগত্মান ভাক হওয়া দরকার। পানির স্বচ্ছতার উপর নির্ভর করে মাছের উৎপাদন কেমন হবে। পানির স্বচ্চতা ১০-২০ সে. মি রাখতে হবে। পুকুরে যাতে কোনভাবে ময়লা আবর্জনা না পড়ে সেজন্য খেয়াল রাখতে হবে।
৫-১০ পিপিএম দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকবে এবং দ্রবীভূত কর্বন-ডাই অক্সাইড হবে ১-২ পিপিএম এর নিচে।
পানির পিএইচ ৭.৫ থেকে ৮.৫ এর মধ্যে রাখলে মাছের কোন সমস্যা হয়না।
পানির উপর কোনো শ্যাওলার স্তর থাকতে দেয়া কিংবা পানির উপর কোনো লাল স্তর জমতে দেয়া যাবেনা।
একটি আদর্শ পুকুরের বৈশষ্ট্য

প্রয়োজনীয় পানি ধারন ক্ষমতা থাকবে।
পুকুরের আকৃতৃ আয়তকার হবে।
চাষযোগ্য মাছ অনুযায়ী পানির গভীরতা থাকবে।
পরিমিত প্রাকৃতিক খাবার থাকবে।
পুকুরে আলো বাতাসের প্রবাহ থাকবে।
পুকুরের পানি দূষনমুক্ত থাকবে।
পুকুর রাক্ষুসে মাছ মুক্ত থাকবে।
ক্ষতিকারক প্রানি মুক্ত থাকবে।
পানি দেয়া এবং পানি নিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা থাকবে।
পুকুরে পর্যাপ্ত রোদ পড়বে
পুকুরের তলায় জৈব পদাথের পরিমান ১-২% থাকবে।
কাদার পরিমান ৪-৬ ইঞ্চি থাকবে।
পুকুরের তলা পঁচা কাদামুক্ত হবে এবং মাটি দোঁ-আশ হবে।
পুকুরের প্রুকারভেদঃ

আতুর পকুরঃ যেসমস্ত ছোট, মাঝারি এবং অগভীর পুকুরে ৪-৫ দিন বয়সি রেণু পোনা ছেড়ে ১৫-২০ দিন লালন পালন করা হয়, সে সমস্ত পুকুরই আতুর পুকুর।
আতুর পুকুরের পানির গভীরতা ৩-৫ ফুট পর্যন্ত হয়। এবং আয়তন ১০-২৫ শতাংশ হয়।
মাটি দোআস কিংবা এটেল দোআস হয়।

চারাপুকুর/লালন পুকুরঃ আতুর পুকুর এবং চারা পুকুর প্রায় একই ধরনের হয়।
তবে চারা পুকৃর কিছুটা বড় হয়ে থাকে।
এসমস্ত পুকুরে এক ইন্ঞি মাপের ১৫-২০ দিনের পোনা মজুদ করে ৩-৪ ইন্চি বড় করে পোনা বিকক্রি করা হয়।
পানির গভীরতা ৪-৫ ফুট বা কিছুটা বড়ও হয়ে থাকে এবং আয়তন ২৫-১০০ শতাং পর্যন্ত হতে পারে।

মজুদ পুকুর: চারা পুকুর ধেকে বড় এবং বাৎসরিক পুকুরকে মজুদ পুকুর হিসেবে ব্যবজার করা যায়।
এসমস্ত পুকুরে পানির গভীরতা ৪-৯ কিংবা তার চেয়েও বেশী হতে পারে।
আয়তন ২০ শতাংশ কিংবা তার ছেয়েও বড় যে কোন মাপের এবং যে কোনো আকৃতির হতে পারে। প্রতি শতাংশে ৩০-৩৫ টি বড় পোনা চাষ করা যেতে পারে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৩জানু২০২০