নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় প্যাশন ফল চাষে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই ফল থেকে ট্যাংয়ের মতো শরবত তৈরি হয় বলে দেশে এটি ট্যাং ফল নামেও পরিচিত। দিবর ইউনিয়নের রূপগ্রাম গ্রামে এগ্রোফার্মের পরিচালক সোহেল রানা চাষ করছেন সুস্বাদু এই বিদেশি ফল ‘প্যাশন’। ইতিমধ্যে একটি গাছে ১৮-২০টি ফল ধরেছে। এ ছাড়া আরও প্রায় এক-দেড়শ ফুল আছে। জেলায় এই ফল আরও বেশি করে চাষের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তাই এ ফল চাষে প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক পরামর্শ চেয়েছেন স্থানীয়রা।
এগ্রোফার্মের পরিচালক সোহেল রানা বলেন, ২০১৫ সালে ঢাকা জাতীয় বৃক্ষ মেলা থেকে প্যাশন ফলের একটি কাটিং চারা এনে খামারে রোপণ করি। লতানো এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু হলে একটি মাচা করে দেই। এক বছর পর গত জুলাই মাস থেকে গাছে ফুল ফোটা শুরু করে। প্রথম দিকে গাছে অনেক ফুল ফুটলেও এর কোনোটিই ফলে পরিণত না হয়ে ঝরে যায়। প্যাশন গাছের ফুল প্যারাগুয়ে জাতীয় ফুল। এ ফল চাষ সম্পর্কে জানার জন্য ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছি। প্যাশন ফুলে কৃত্রিম উপায়ে পরাগায়ন করলে দ্রুত এবং অনেক বেশি ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও দেখে পরাগায়নের কলাকৌশল শিখে গাছে প্রয়োগ করি। প্যাশন চাষে কোনো সার, সেচ, কীটনাশক বিশেষ কোনো পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না। এটিকে অন্যান্য জুসের সঙ্গেও মিশিয়ে খাওয়া যায়। প্রচলিত কেমিক্যাল মিশ্রিত শরবতের চেয়ে প্যাশন বা ট্যাং ফল দিয়ে তৈরি শরবত অনেক বেশি সুস্বাদুু ও প্রাকৃতিক গুণ সম্পন্ন। আগামী বছর এক বিঘা জমিতে এই ফলের চাষ করব বলে ভাবছি। তার খামারের ১৫ বিঘা নিজস্ব জমিতে ড্রাগন ফল, বারি মাল্টা-১, আম, লিচু, থাই পেয়ারাসহ ৫০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে।
জেলা কৃৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্যাশন বা ট্যাং ফল তুলনামূলকভাবে দেশে কম প্রচলিত। বিভিন্ন নার্সারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সীমিত আকারে চাষ হচ্ছে। এই ফলের শরবত অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন সি এতই বেশি যে ফলের এক-চতুর্থাংশ একজন মানুষের নিত্যদিনের ভিটামিন সির চাহিদা মেটাতে সক্ষম। এই গাছ লতানো, পাতা সবুজ ও কিনারা গভীরভাবে খাঁজকাটা। ফল সুগোল, বড় সফেদা আকারের ও খোসা শক্ত। পাকা ফলের রং হলদেটে। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যাসিফ্লোরা ইডিউলাস’। মিষ্টি স্বাদ ও উপকারিতার কারণে অনেক দেশেই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল আলম বলেন, প্যাশন ফলের উত্পত্তি দক্ষিণ আমেরিকার রেইন ফরেস্টের আমাজান অঞ্চলে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং তদসংলগ্ন প্যারাগুয়ে ও উত্তর আর্জেন্টিনাতে। প্যাশন ফল একটি বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি দুই ধরনের- পার্পল প্যাশন ফল ও হলুদ প্যাশন ফল। প্যাশন গাছে বছরে দুবার ফল ধরে। প্রথমবার মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসে এবং জুন-আগস্ট মাসে ফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার জুলাই-আগস্ট মাসে ফুল আসে এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়। ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। সাপাহার উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল আকতার বলেন, সোহেল রানাকে বিভিন্ন সময় এই ফল চাষে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল হিসেবে সমাদৃত হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেন, জেলায় প্যাশন ফলের বেশ কয়েকটি গাছ থাকলেও একটিতে সাফল্য পাওয়া গেছে। এই সাফল্য অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়ে বরেন্দ্র ভূমির পতিত এলাকা পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলাসহ জেলায় আরও ব্যাপকভাবে চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
সূত্র: বা.প্র